ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পিটার হাস-ফখরুল বৈঠক

তলে তলের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ল বিএনপি

তলে তলের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ল বিএনপি

তলে তলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ল বিএনপিও। ওবায়দুল কাদের তলে তলে আলোচনা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানানোর পর এ নিয়ে বিএনপির নেতারা নানা ধরনের সমালোচনা করেন। তারা বলতে থাকেন আওয়ামী লীগ সরকার দেউলিয়া হয়ে গেছে বলে প্রকাশ্যে আলোচনা করার সাহস হারিয়ে ফেলেছে। সাধারণত তলে তলে শব্দ দুটিকে ভালো চোখে দেখা হয় না। ওবায়দুল কাদেরের ওই বক্তব্যের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে সমালোচনাও করা হয়। বিএনপির নেতারা ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যের সমালোচনা করলেও তাদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি গোপন রাখলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে কেউ মুখ খুলছে না। অথচ বৈঠকটি হয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তাদের মধ্যেকার এ বৈঠকের এ খবরের সত্যতা নিয়ে দিনভর নানা আলোচনা পর্যালোচনা হয়। তাদের মধ্যকার এ বৈঠক দেশের রাজনীতিতে নতুন করে চমক সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের মধ্যে বাকযুদ্ধ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে বারিধারায় প্রায় দেড়ঘণ্টা ধরে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে। অথচ সন্ধ্যার পর বিএনপির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়, ‘এ ধরনের কোনো বৈঠক হয়নি। সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গুজব ছড়ানো হচ্ছে।’ বিএনপির একাধিক রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, পিটার হাসের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠক সম্পর্কে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাড়া অন্য কেউ অবহিত নয়। আর এ কারণে দলের সিনিয়র নেতারা ঈর্ষান্বিত হয়েছেন। বৈঠক থেকে বেরিয়ে মির্জা ফখরুল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ছাত্র কনভেনশনে যোগ দেন। পিটার হাস ও মির্জা ফখরুলের মধ্যে কি ধরনের আলোচনা হয়েছে সে ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো কিছু জানানো হয়নি। তবে নাম ও দলীয় পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে বিএনপির একজন নেতা জনিয়েছেন রাজনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া হচ্ছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধীদল বিএনপিকে এক টেবিলে বসানো। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনো শেষ করে ঢাকা ছেড়ে গেছে। বিশেষ করে তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সমঝোতার টেবিলে আনার চেষ্টা করেন। কেননা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনো সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে দুই দলই অনড় অবস্থানে রয়েছে। আওয়ামী লীগের দাবি সংবিধান অনুসারে স্বল্প পরিসরে একটি নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কোনো অসংবিধানিক কিংবা কোনো অনির্বাচিত সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না।

এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রেখে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না দলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দিয়েছে। দেশের প্রধান এই দুটি রাজনৈতিক দল তাদের অবস্থানে অটল থাকায় রাজনৈতিক অঙ্গনে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জটিলতা বাড়ছে। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে অপ্রকাশ্যে বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রয়োজন রয়েছে। অপ্রকাশ্য সমঝোতা ছাড়া রাজপথের সমঝোতায় উপনীত হওয়া কঠিন। জাতীয় নির্বাচনের আগে আমাদের দেশের রাজনীতে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে সে ব্যাপারে একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া বাতলে দেয়া হলেও আওয়ামী লীগ বিরোধী মনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক দল তা মেনে নিতে পারছে না। ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না বলে তাদের মধ্যে যে অনাস্থা কাজ করছে তা দূর করার জন্যই প্রয়োজন রাজনৈতিক সমঝোতা এবং গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ আলোচনা। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যু ছাড়া কোনো আলোচনায় তারা বসবে না। বিএনপির এ অবস্থানে আওয়ামী লীগ সাফ জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশ্নটি সাংবিধানিকভাবে মীমাংসিত। তাই বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না। প্রকাশ্যে দুই দলের অবস্থান পরস্পরবিরোধী হলেও আড়ালে দুই পক্ষকে সমঝোতার পথে আনার চেষ্টায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার স্বভাবসূলভ রাজনৈতিক ভাষায় বলে দিয়েছেন, তলে তলে সমঝেতা হয়ে গেছে। বিএনপিও তলে তলে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। আর সে কারণে বিএনপি পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করছে। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকারের ডিজিটাল সুবিধা গ্রহণ করে দেশের মানুষ মিনিটের মধ্যে বৈঠকের খবর জেনে গেছে।

নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে আয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার অচলাবস্থা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর সেই উদ্যোগের মধ্যেই মির্জা ফখরুলের সঙ্গে পিটাস হাসের বৈঠকের খবরটি গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই তথ্যটিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে। একই দিন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তলে তলে যখন সব শেষ তখন আর এসব (বিএনপি-পিটার হাস বৈঠক) করে লাভ কী? পিটার হাসকে দেখিয়ে নির্বাচন বন্ধ করবেন, ঢাকায় তাণ্ডব করবেন, সেই খেলা খেলতে দেব না। সেই খেলা সন্ত্রাসের খেলা, সেটা খেলতে দেব না। ...পিটার হাস সাহেবের মুরুব্বিদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়ে গেছে। আমেরিকার মুরুব্বি যারা, তাদের সঙ্গে কথাবার্তা শেষ।’ ওবায়দু কাদেরের এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সত্যতার স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অথচ মির্জা ফখরুল একাধিক গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে দাবি করেছেন, এরকম কোনো বৈঠক বৃহস্পতিবার হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো বাজে কথা, কোনো বৈঠক হয়নি। ভুয়া কথা।’

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান সাংবাদিকদের জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের বৈঠকের যে খবর বেরিয়েছে গণমাধ্যমে, তা বিভ্রান্তিকর। এ ধরনের কোনো বৈঠক হয়নি। সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গুজব ছড়ানো হচ্ছে।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কোনো বৈঠক হয়েছে কি না, জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার জানান ‘সরকারি কর্মকর্তা এবং সাধারণ নাগরিকসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত হাস নিয়মিত সাক্ষাৎ করেন। উপযুক্ত ক্ষেত্রে এসব বৈঠকের কথা আমরা প্রচার করি।’ ব্রায়ান শিলার এ বক্তব্যের মধ্যদিয়ে এটা অনুধাবন করা যায় পিটার হাসের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের বৈঠক হয়েছে। কেননা তিনি সরাসরি বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করেননি। ব্রায়ান শিলার মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে কর্মরতদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে দূতাবাসের ফেসবুক ও এক্স-এ নজর রাখার অনুরোধ করেছেন। তিনি বৈঠকের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানোর ব্যাপারে উপযুক্ত ক্ষেত্র খুঁজে পাননি। ধারণা করা হচ্ছে, বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হলেও মার্কিন দূতাবাস সেটি গণমাধ্যমে প্রচার করার মতো উপযুক্ত বলে মনে করেননি। কেননা বৈঠকটি ছিল একান্ত ব্যক্তিগত। কূটনৈতিক শিষ্টাচারজনিত কোনো বিশেষ কারণে বৈঠকের খবরটিকে সামনে আনতে চাইছে না বিএনপি। রাষ্ট্রীয় একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পিটার হাস ও মির্জা ফখরুলের বৈঠকটি আমেরিকান ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সূত্রটি উল্লেখ করে, বেলা ১২টা ৫০ থেকে ১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটাস হাস ও মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কাউন্সিলর আর্থরো হিনসের সঙ্গে গুলশানে আমেরিকান ক্লাবে সাক্ষাৎ করেছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত