ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রিজার্ভের টাকায় জনগণের সেবা করেছি : প্রধানমন্ত্রী

* বিএনপির আমলে দেশ পিছিয়ে ছিল * দেশের স্বার্থ কখনো বেচি না * খালেদা জিয়া দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না
রিজার্ভের টাকায় জনগণের সেবা করেছি : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের সেবায় রিজার্ভের টাকা খরচ করেছি। করোনার টিকা কিনেছি। খাদ্য মন্দায় খাদ্য কিনেছি, এখনো কিনছি।

গতকাল রাজধানীর কাওলায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষ্যে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। গত শনিবার (৭ অক্টোবর) এই সভা হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে তারিখ পরিবর্তন করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সরকার গঠনের পর দেশে দারিদ্র্যের হার ১৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। করোনায় বিশ্বের অনেক ধনী দেশও টাকা নিয়ে ভ্যাকসিন দিয়েছে। আমরা দিয়েছি বিনামূল্যে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে যখন যেটা প্রয়োজন হয়েছে, করেছি। বিএনপির আমলে দেশ পিছিয়ে ছিল। আওয়ামী লীগের আমলে এগিয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। খালেদা জিয়ার আমলে ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল। এবার আমরা ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশের আদর্শ ও চেতনায় বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ সেটা ধারণ করে এবং জনগণের সেবা করে যাচ্ছে। আজকে দেশের মানুষ ভূমি ও গৃহ পাচ্ছে। আমরা বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর দেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। বস্তিবাসীদেরও ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট দিচ্ছি। তারা সুন্দরভাবে বাঁচবে। বড়লোকরা ফ্ল্যাটে থাকবে, গরিবরা থাকবে না, এটা হতে পারে না। বিএনপির আমলের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের ফলে সব মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। তারা আন্দোলনের নামে হাজার হাজার গাছ কেটেছে, রাস্তা কেটেছে। তারা ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না।

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপির অনশন কর্মসূচির বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে দেখি, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিএনপি নেতারা অনশন করে। আমি জিজ্ঞেস করি, তারা কয়টা থেকে অনশন শুরু করেছিল? বাসায় কী দিয়ে নাস্তা করে এসেছে? বাড়িতে কী দিয়ে ভাত খাবে? কয় ঘণ্টার অনশন? নাটক করারও একটা সীমা থাকে। (তারা) এই নাটকই করে যাচ্ছে। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা নাকি আমাদের উৎখাত করে দেবে। সময় দিয়েছিল ১০ ডিসেম্বর। বিজয়ের মাসে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করবে! যে সরকার জনগণের রায় নিয়ে বারবার নির্বাচিত হয়েছে। দেশের মানুষ এটা মেনে নিতে পারে না। খুনিদের দল জনগণের কল্যাণ কখনো করতে পারে না। করেও না। বিএনপির আমলে একই দিনে ৬৪ জেলায় ৫০০ বোমা হামলা করেছিল। স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রের ঝনঝনানিতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেছে। নিজেরই শিক্ষা নেই, অন্যকে শিক্ষা দেবে কীভাবে? এসএসসিতে ফেল করেছে। পাস করেছে অঙ্গে। কারণ টাকা-পয়সা হিসাব-নিকাশ ভালো জানত। বিএনপির দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অর্থপাচারের কারণে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই সময় মুচলেকা দিয়ে খালেদা জিয়ার ছেলে বিদেশে পালিয়ে যায়। যে নাকি জীবনে আর রাজনীতি করবে না। কিন্তু যে টাকা সে পাচার করেছে, সেই মামলায় এফবিআই সাক্ষ্য দিয়ে গিয়েছিল। সে ওই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তাদের ব্যবসা ছিল অস্ত্র চোরকারবারি, অর্থ পাচারকারী।

বিএনপি নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারেক রহমানের মা তো অসুস্থ। আপনারা অনশন করেন। তাহলে ছেলে কেন মাকে দেখতে আসে না। এটা কেমন ছেলে, সেটা আমার প্রশ্ন। মা তো অসুস্থ মরে মরে। সে নাকি যখন তখন মরে যাবে। হ্যাঁ, বয়সও হয়েছে, অসুস্থ তো বটে। মাকে দেখতে আসে না কেন? আমি তো বলব, মাকে দেখতে আসুক।

বিএনপি ভোট কারচুপি করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক সংগ্রাম করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। গণতান্ত্রিক ধারা থাকলে একটা দেশের উন্নতি হয়, আর গণতান্ত্রিক ধারায় যারা বিশ্বাস করে, তারা ক্ষমতায় থাকলে দেশের যে উন্নয়ন হয়, সেটা আজকে প্রমাণিত।

২০০১ সালে দেশের সম্পদ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব আমার কাছেও এসেছিল। বলেছিলাম, আমি শেখ মুজিবের মেয়ে দেশের স্বার্থ কখনো বেচি না। ক্ষমতার লোভ আমার নেই। খালেদা জিয়া এসে গ্যাস তো দিতেই পারেনি, উল্টো বাংলাদেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান করেছে। আর বিদেশ থেকে টাকা এসেছিল এতিমখানার জন্য, এতিম একটা টাকাও পায়নি, সব টাকা মেরে দিয়েছে নিজে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে কানাডার পুলিশ এবং আমেরিকা থেকে গোয়েন্দা সংস্থার লোক আসার জন্য তৈরি। যখনই তারা আসবে বলে, তখনই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

‘খালেদা জিয়া ক্ষমতা থাকতে ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছিল’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় থাকতে সে বলেছিল, আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বলেছিল, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী দূরে থাক বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না। এখন তিনি না প্রধানমন্ত্রী, না বিরোধী দলীয় নেত্রী কিছু হতে পারেননি। কিন্তু দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

তিনি বলেন, তার বড় বোন, বোনের জামাই, ভাই আমার সঙ্গে গণভবনে দেখা করতে আসে। কান্নাকাটি করে। সরকারপ্রধান হিসেবে আমার যতটুকু ক্ষমতা, আমি তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যদিও ক্ষমতায় থাকতে আমাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা, কোটালিপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখা, বারবার হামলা করেছিল। যখন সে এক-একটা বক্তৃতা দিয়েছে, তারপরেই হামলা হয়েছে। আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছে। নেতাকর্মীরা জীবন দিয়ে রক্ষা করেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলটির প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রাম জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার এবং জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য প্রতিটি সংগ্রামে আপনারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আন্দোলন চালিয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে নিজেকে ঘোষণা দিয়েছিল, আবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ওই ভোট চুরির অপরাধে এ দেশের মানুষ ভোট চোরাকে কখনো ক্ষমতায় থাকতে দেয় না। সেই অপরাধে তাকে আন্দোলনের মাধ্যমে মাত্র দেড় মাসে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। সেই আন্দোলন আপনারাই চালিয়েছিলেন। সেজন্য আপনাদের সংগ্রামী অভিনন্দন জানাই।

জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনি ব্যবস্থার উন্নতি করেছি। যে বিএনপি ২০০১-০৬ সালে ক্ষমতায় থাকতে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার লিস্ট করেছিল। সেটি সরিয়ে দিয়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালানার জন্য আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি যাতে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়া কখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে না। তিনি পাকিস্তানের ধারাবাহিকতা নিয়ে চলতে চেয়েছিল। জাতির পিতার হত্যাকারীকে ভোট চুরি করে পার্লামেন্টে বসিয়েছিল। আর আলবদর, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, যারা এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, মা-বোনকে ধরে নিয়ে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে দিয়েছে, তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল। জিয়াও বসিয়েছিল, এরশাদও, খালেদা জিয়াও। কাজেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে এদের কোনো অবদান নেই। তারা সেটা করতেও চায় না। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয়। সরকারপ্রধান বলেন, ৭৫-এর পর ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ খালেদা জিয়া থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা দেশের জন্য কি করেছে? মানুষের জন্য কি করেছে? মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কি করেছে? সেটা একবার চিন্তা করে দেখবেন। অনেকে বড় বড় কথা বলেছে, দেশের মানুষের জন্য তারা কি করেছে? তিনি বলেন, ৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, বিদ্যুৎ ছিল মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট। এই বিদ্যুতের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে সে কানসাটে মানুষকে গুলি করে হত্যা করে বিএনপি। ঢাকা শহরে পানির অভাব, বিদ্যুতের অভাব ছিল। মানুষ বিদ্যুৎ ও পানির জন্য আন্দোলন করেছিল। বিএনপির এক নেতাকে পাবলিক ধাওয়া দিয়েছিল, নামই হয়ে গিয়েছিল দৌড় সালাউদ্দিন। পাবলিকের ধাওয়া খেয়ে সে পালিয়েছিল। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মান্নান কচি প্রমুখ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত