ডিসি-এসপিদের উদ্দেশে সিইসি

দলীয় চিন্তা-ভাবনার ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ

প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের দায়িত্ব পালনকালে মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের দলীয় চিন্তাভাবনার ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

গতকাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে বিভাগীয় কমিশনার, উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ নির্দেশ দেন। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, প্রশাসনে বা সরকারে পুলিশ ও নির্বাহী পরিষদের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। সরকার বলতে আমরা পুলিশ ও ডিসিকেই বুঝি। কাজেই আপনাদের চিত্তে ধারণ করতে হবে, আপনারাই সরকারকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন খুব ঘনিয়ে এসেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নির্বাচন আয়োজন কিন্তু কঠিন একটি কর্মযজ্ঞ। চাইলাম হয়ে গেল, এরকম নয়। নির্বাচনে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।

তিনি জানান, গ্রহণযোগ্য হওয়ার অর্থ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। জনগণকে দেখাতে হবে নির্বাচন ফেয়ার ছিল এবং নির্বিঘ্নে সবাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে। এটুকু যদি নিশ্চিত করা যায়, নির্বাচনে কে এলো, কে এলো না; জনগণ যদি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তাহলেই নির্বাচনে একটি বড় সফলতা আসবে।

অনুষ্ঠানে ডিসি-এসপিদের উদ্দেশ করে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেন, আপনারাই নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায়ের বিশ্বস্ত সহায়তাকারী এবং আপনারাই আমাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আমাদের শপথ নেওয়ার পর সহস্রাধিক নির্বাচনে শতভাগ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে আন্তরিকতার সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারকে সহযোগিতা করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিটি নির্বাচনই কোনো প্রকার সহিংসতা ছাড়া সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।

তিনি বলেন, অতীত নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আমি পছন্দ করি না। তবে অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে চলুন। আমরা সবাই মিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের এমন উদাহরণ সৃষ্টি করি যা অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।

জানা যায়, সংসদ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) সহায়ক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে কিছু কিছু জেলায় নিজস্ব কর্মকর্তাদেরও রিটার্নিং কর্মকর্তার পদে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ডিসিদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে ইসি কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতেও কোনো বাধা নেই।

অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, রিটার্নিং অফিসার এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার আমরা কাদের করব, এটা এখনো ঠিক হয়নি। এটা তফসিল ঘোষণা যখন, তখনই শুধু জানা যাবে। কিন্তু দায়িত্ব পালন সবাইকেই করতে হবে। আমাদের নির্বাচন কর্মকর্তাদের সহায়ক কর্মকর্তা হিসেবে কাজে লাগাবেন।

তিনি আরো বলেন, আপনারা জীবনে কোনো না কোনো সময় নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর পুলিশের যারা আছেন, তাদের তো চাকরিজীবনের শুরু থেকেই এ দায়িত্ব পালন করতে হয়। আমাদের যে বাধ্যবাধকতা আছে সংসদ শেষ হওয়ার আগের ৩ মাস অর্থাৎ ১ নভেম্বর থেকে আগামী বছরে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে হবে, যদি না কিছু ব্যতিক্রম সংবিধানে যেটা আছে, সেগুলো না ঘটে।

সাবেক এই ইসি সচিব বলেন, আইনে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। কিছু কনফিউশন থাকলে জেনে নেবেন। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই মাঠে হয়তো অনেক কথা থাকতে পারে, যে নির্বাচন অন্য কোনো ফরমেটে হবে। সে বিষয়গুলো রাজনৈতিক। সেগুলো দেখার দায়িত্ব কমিশনেরও নেই, আপনাদেরও নেই। রাজনৈতিক সমস্যা যদি কিছু থেকে থাকে, রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিকভাবে করে থাকবেন। যেটুকু সমাধান করবেন, সেটুকু দিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে।

নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, সম্ভাব্য রিটার্নিং অফিসাররা এখানে আছেন। ডিসিরা পাশাপাশি আমাদের কর্মকর্তারাও রিটার্নিং কর্মকর্তা হতে পারেন। সুন্দর, সুষ্ঠুভাবে যাতে কাজ করতে পারেন, এজন্যই প্রশিক্ষণ জরুরি মনে করেছি।

তিনি বলেন, আমরা সবাই জানি ৫ বছর পরপর ভোট হয়। তাই প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। দুদিনের কোর্সে আইনগুলো সম্পর্কে জেনে নেবেন। অনেক দিন প্রয়োগ না করলে জানা থাকলেও মনে থাকে না। তাই এটি ধারণ করে, লালন করে মাঠে প্রয়োগ করবেন। আপনারা আন্তরিক থাকবেন।