গাজায় ইসরাইলের স্থল অভিযান

২৪ ঘণ্টায় ৩২৪ ফিলিস্তিনি নিহত

প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ইসরাইলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ট্যাংকের সাহায্যে স্থল অভিযান শুরু করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় ২৪ ঘণ্টায় ৩২৪ জন ফিলিস্তনি নিহত হয়েছে। হামাস যোদ্ধাদের ‘নির্মূল’ করাই এই অভিযানের মূল লক্ষ্য। গাজায় প্রথম দফায় স্থল অভিযান চালিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলি সশস্ত্রবাহিনী এই অভিযানকে ‘স্থানীয় অভিযান’ বলে অবিহিত করছে। ইসরাইলি সশস্ত্রবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জানিয়েছে, পদাতিক ও সাঁজোয়াবাহিনীর সদস্যরা এসব অঞ্চলগুলোতে অভিযান চালিয়েছে মূলত লুকিয়ে থাকা হামাস সদস্য, তাদের অবকাঠামো ও বিভিন্ন সেলগুলো শনাক্ত করার জন্য। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে নিখোঁজ ইসরাইলিদের খোঁজে এবং হামাসের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ গাজা উপত্যকার উপকণ্ঠে এলাকাকেন্দ্রিক অভিযান চালিয়েছে। এই সময় একজন হামাস সদস্য অভিযান পরিচালনাকারীদের উপর অ্যান্টি ট্যাংক গাইডেট মিসাইল ছুঁড়লে তাকে হত্যা করে আইডিএফ। অভিজানে নিখোঁজ ইসরাইলিদের দেহানশেষ উদ্ধারের খবরও জানিতেছে তারা।

গত শুক্রবার ইসরাইল সরকার গাজা থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে যাওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিল। যদিও হামাস যোদ্ধারা গাজার লোকজনকে নিজ নিজ বাড়িতে থাকার নির্দেশ দিয়েছিল।

এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘গাজায় নিরীহ জনগণের ওপর ইসরাইলের স্থল অভিযানের পরিণতি হবে ভয়াবহ।’ শুক্রবার ইসরাইলের সেনাদের পদাতিক বাহিনী ও ট্যাংক গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করেছে। একে প্রতিশোধ অভিযানের শুরু বলে জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। হামাসকে নির্মূলে গাজায় টানা এক সপ্তাহ ধরে ভারি বোমাবর্ষণের পর এই প্রথম স্থল অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল।

গাজা ভূ-খণ্ডের উত্তরাংশের ১১ লাখ বাসিন্দাকে সরে যেতে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় ইসরাইল। সে সঙ্গে সীমান্তে ট্যাংকের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক সেনা সমাবেশ করে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, আগামী দিনগুলোতে তারা গাজা শহরে ‘ব্যাপকহারে’ অভিযান চালাবে। পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত বেসামরিক নাগরিকরা ফিরে আসতে পারবে না।

ইসরাইলের এই ঘোষণার পর গাজা শহর ছাড়ে অনেক বাসিন্দা। তবে হামাস তাদের যার যার বাড়িতে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। ফিলিস্তিনিদের রক্ষার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার অঙ্গীকারের কথাও বলে হামাস যোদ্ধারা। মসজিদের মাইক থেকেও স্থানীয়দের যার যার বাড়িতে অবস্থান করার আহ্বান জানানো হয়।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ইসরাইলের ওই নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যাথায় ভয়ঙ্কর মানবিক সংকট তৈরি হবে বলেও সতর্ক করা হয়।

এদিকে হামাসের সঙ্গে সংঘাত সমগ্র অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া রোধকল্পে ইসরাইলকে সামলাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইরান। শুক্রবার বৈরুতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহ বলেছেন, তেহরান লেবাননের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।

চলমান সংঘাতের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করার সময় শুক্রবার গাজা উপত্যকা এবং ইসরাইলে ‘মানবিক যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত। নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থাপিত রাশিয়ান খসড়া প্রস্তাবে ‘অবিলম্বে’ একটি যুদ্ধবিরতি এবং সব জিম্মিকে নিরাপদ মুক্তির আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ‘বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সমস্ত সহিংসতা, শত্রুতা এবং সব ধরণের সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদকে ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থিদের এবং ইসরাইলের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক হামলার জন্য তাদের নিন্দা করার আহ্বান জানিয়েছে। শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর রুশ রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত যে, নিরাপত্তা পরিষদকে অবশ্যই একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রক্তপাত বন্ধ করতে এবং শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করতে হবে।’

নেবেনজিয়া বলেন, কিছু সদস্য রাষ্ট্র খসড়া প্রস্তাবের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তিনি ‘মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান যুদ্ধের দায়ভার’ বহন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও দোষারোপ করেছেন এবং ‘গাজা উপত্যকায় বেসামরিক স্থাপনায় ইসরাইলি বিমান বাহিনীর হামলার প্রতি অন্ধ দৃষ্টি দেওয়ার জন্য’ ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেয়নের সমালোচনা করেন। ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদ নিয়মিত বিভক্ত। সভার পরে সদস্যরা প্রস্তাবের বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে কথা বলেন। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড বলেন, ‘আমরা কাউন্সিলের বৈঠকে যাওয়ার মাত্র দুই মিনিট আগে খসড়া প্রস্তাবটি হাজির করা হয়েছিল।’ চীনা রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন বলেছেন, ‘মানবিক উদ্বেগের বিষয়ে একটি উদীয়মান ঐকমত্য রয়েছে। উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করবে এমন সকল উদ্যোগের জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

সূত্র : বিবিসি ও আল জাজিরা