ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগামী মাসে তফসিল

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে না ইসি

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে না ইসি

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী (নভেম্বর) মাসে তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুতে ভোটগ্রহণ করবে ইসি। ভোটের আগে আর নতুন করে অনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংলাপ করবে না সাংবিধাকি প্রতিষ্ঠানটি। এখন সংলাপ অথবা সমঝোতা হলে রাজনৈতিক দলের মধ্যে হবে। ইসি সূত্র এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সর্বশেষ সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও বিশেষ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইসি। এখন আর আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ আয়োজন করার পরিকল্পনা নেই ইসির। তারা সংবিধান অনুযায়ী সময় মতো ভোটগ্রহণ করবে। আর রাজনৈতিকভাবে কোনো সংলাপ হলে সেটা দলগুলো বুঝবে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ৪০ থেকে ৪৫ দিন সময় হাতে রেখে আগামী মাসে তফসিল ঘোষণা করা হবে। তবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নাকি দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মো. আলমগীর বলেন, আমরা তো দেখি সব ঠিক আছে। সংবিধানে ইসিকে দায়িত্ব দেওয়া আছে চলমান সংসদের মেয়াদপূর্তির পূর্বের নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সে অনুযায়ী ক্ষণ গণনা করে আমরা যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করছি। এখন শুধু তফসিল ঘোষণা বাকি আছে।

তিনি জানান, অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ দিন সময় ধরে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করা হবে। ঠিক কোন সপ্তাহে তা এখনো আলোচনা হয়নি। সবাই নির্বাচন চাচ্ছে, নিবন্ধিত ৪৪টি দলের সবাই নির্বাচনের পক্ষে।

বিএনপির দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, সেটা তো রাজনৈতিক বিষয়। আমাদের সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা চাই সবাই নির্বাচনে আসবে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করে আসছি। আগামীতেও সুষ্ঠু নির্বাচন করব।

বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসার লক্ষ্যে আবেদনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে সার্কভুক্ত নির্বাচন সংস্থাগুলোর কমিশনার বা সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের আতমন্ত্রণ জানানো হবে।

এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষক আসার জন্য যে প্রচেষ্টা তা শুরু হয়েছে। এটা এখন বিভিন্ন দেশ থেকে যারা আসবেন, এতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে প্রয়োজনীয় যে যোগাযোগব্যবস্থা করার দরকার সেগুলো আমরা করব। এটা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। যে কোনো দেশ থেকে যেন আসতে পারে। সার্কভূক্ত দেশ, ফেসবোসার ৩০ থেকে ৩৫ জনকে দাওয়াত দেওয়া হবে। তাদের সব ব্যয় আমরা বহন করব। আর অন্য বিদেশি পর্যবেক্ষক যারা আসবে তাদের শুধু আমরা অনুমোদন দেব বলেন মো. আলমগীর।

ব্যালট পেপার ভোটের আগের দিন বা সকালে পাঠানোর বিষয়ে তিনি জানান, এটা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যেখানে সকালে দেওয়া সম্ভব, সেখানে সকালে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যেগুলোতে সকালে পাঠানো সম্ভব হবে না, সেখানে আগের দিন পাঠানে হবে। সিদ্ধান্ত হবে তফসিলের সময়। সিইসির ১২ অক্টোবর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে কোনো ধরনের রাজনৈতিক হয়রানি যেনো না হয়। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ যদি থাকে, যদি গ্রেপ্তারযোগ্য অভিযোগ থাকে অথবা আদালতের নির্দেশে গ্রেপ্তার করতে পারবে। কিন্তু উনি (সিইসি) যেটা মিন করেছেন রাজনৈতিক কারণে কাউকে যেন হয়রানি না করা হয়। গ্রেপ্তার যদি করতেই হয়, সেটা যেন তফসিলের আগেই করা হয়। তিনি জানান, তফসিলের আগে যদি কারো বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকে এবং ক্রিমিনাল অফেন্স করেনি, তখন কাউকে গ্রেপ্তার করা হলে কমিশন তখন সেটা বিচার বিশ্লেষণ করবে। সেই হিসেবে সরকারের প্রতি কমিশনের কোনো বক্তব্য বা সাজেশন থাকলে দেবে।

ইসির অবস্থানের কথা তুলে ধরে আলমগীর বলেন, ‘পুরোনা মামলা, যদি ক্রিমিনাল মামলা থাকে; আগে কোনো ঘটনা যদি ঘটে থাকে- চুরি, ডাকাতি, খুন, খারাপি, মারামারি এগুলো আগে থেকেই থাকে.... এখন আমরা তফসিল ঘোষণা করলাম তারপর একটা মামলা দিলেন, কিছু জানা যায়নি; ওই রকম বিষয় যেন না হয়, সে বিষয়ে সিইসি অনুরোধ করেছেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, ‘সেনাবাহিনী তো আমাদের জাতীয় নির্বাচনে (অতীতে) মোতায়েন হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না সেটাও তিনি (সিইসি) বলেছেন। কয়দিন আগে মোতায়েন হবে, সেটা এখনো আলোচনা হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ভোটে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্তব্য করে ১৩ অক্টোবর তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আপনারা আর্মির কথা বলেছেন। এর আগে যে ডায়ালগগুলো হয়েছে, সেখানে প্রতিটি দলই আর্মির কথা বলেছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, সেনাবাহিনির উপস্থিতি একান্তই কাম্য। জনগণ আর্মির ওপর আস্থা রাখতে চায়। তারা যে দায়িত্ব পালন করেন, সেটারও ইতিবচাক দিক থাকবে।

জানা যায়, সশস্ত্র বাহিনীর কর্মপরিধি এবং কত সময় তারা নির্বাচনি এলাকায় অবস্থান করবে, সে বিষয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছিল। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরাবর সেনা মোতায়েন হলেও সেনাসদস্যরা বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতেই নিয়োজিত থাকে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভোটের এক সপ্তাহ আগে মাঠে নেমেছিল সশস্ত্র বাহিনী। সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন তৎকালীন সিইসি কেএম নূরুল হুদা জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেন, ‘নির্বাচন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক প্রশাসনকে যথা- প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের ‘এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ বিধানের অধীনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে।

এসব বিষয়ে নির্বাচন বিশেজ্ঞ অধ্যাপক ড. হারুন-অর রশীদ বলেন, নির্বাচন এলে কেবল ইসিকেই দায়ী করা হয়। কিন্তু ইসি তো একটা অংশ। অন্যরা সহায়তা না করলে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা ইসির পক্ষে সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন, গণমাধ্যমসহ সবার প্রচেষ্টা না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব না। এবারের নির্বাচনের দিকে দেশি-বিদেশি মহলের দৃষ্টি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবার আমাদের একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে। এটা পুরো জাতির শপথ হওয়া উচিত। বিশেষ করে সরকারি দল প্রধানের কাছে ইসির কামনা করতে হবে যেন প্রার্থীদের মেইনটেন করেন। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং অবাধ সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত