ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত

বিশ্লেষকদের মতামত
মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সর্বাত্মক স্থল অভিযানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ইসরাইল। চূড়ান্ত অভিযানের আগে দক্ষিণ গাজার ১০ লক্ষাধিক বাসিন্দাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরে যেতে সময় বেঁধে দিয়েছিল তারা। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার পর আবার অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে সরে যাওয়ার জন্য মাত্র তিন ঘণ্টার সময় বেঁধে দেয় ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট করিডোর ব্যবহার করে গাজার উত্তরের বাসিন্দারা দক্ষিণে চলে যেতে পারবে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। যে কোনো সময় ইসরাইলি বাহিনী ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলে পড়তে পারে গাজাবাসীর ওপর। তার আগেই বিমান হামলা চালিয়ে দুই হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। স্থল অভিযান শুরু হলে এ সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ধারণা করা কঠিন। এ অবস্থায় ইসরাইলকে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। তেহরান বলেছে, গাজায় নির্বিচার বোমাবর্ষণ বন্ধ না হলে ‘সুদূরপ্রসারী পরিণতি’ ভোগ করতে হবে ইসরাইলকে। গাজায় ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব, কাতার, জর্ডান, চীন-রাশিয়ার মতো দেশগুলোও। প্রতিশোধের নেশায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে ইসরাইলিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা। এদিকে গত ৯ দিন ধরে গাজা উপত্যকায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। গাজায় ইসরাইলের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দুই হাজার ৩২৯ জনে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৯ হাজার। গতকাল হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে এএফপি। মন্ত্রণালয় আরো জানায়, এসব হামলায় ৯ হাজার ৪২ জন আহত হয়েছেন। আল জাজিরা জানিয়েছে, হামাসের হামলায় ইসরাইলে প্রায় ১ হাজার ৩০০ মানুষ নিহত হয়েছে। এছাড়া ফিলিস্তিনিদের হাতে এখন পর্যন্ত বন্দি আছে ১২৬ ইসরাইলি। আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, গত সপ্তাহে দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের হামলার পর থেকে এ ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর হাতে তাদের ১২৬ নাগরিক বন্দি আছে। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ আরো জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৭৯ ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। এমন বাস্তবতায় ইসরাইলের সমর্থনে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে বিমানবাহী রণতরী পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাইলের প্রতি ‘সুদৃঢ় অঙ্গীকারের’ অংশ হিসেবে রণতরী পাঠানোর কথা জানানো হয়েছে দেশটির পক্ষ থেকে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অবিলম্বে এই লড়াইয়ের অবসান না হলে মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত।

হিজবুল্লাহর হুমকি : লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী এরই মধ্যে হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ২০০৬ সালের পর এবারই লেবানন সীমান্তে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়েছে ইসরাইল। হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ও মর্টার বোমা দিয়ে শেবা ফার্মস এলাকায় ইসরাইলের পাঁচটি সেনা চৌকিতে হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলের কান রেডিও জানিয়েছে, লেবানন থেকে সন্দেহভাজন অনুপ্রবেশের প্রতিক্রিয়ায় সীমান্তের পাঁচটি গ্রাম লকডাউন করেছে কর্তৃপক্ষ।

ইসরাইলে হামাসের হামলাকে ‘ঐতিহাসিক বিজয়’ বলছে ইরান : লক্ষ্য অর্জনে একে অপরকে ‘সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে’ একমত হয়েছে ইরান ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। গত ১৪ অক্টোবর হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং এরপরই এই বার্তা দেওয়া হয়। বৈঠকে ইসরাইলের হামাসের নজিরবিহীন হামলা নিয়েও আলোচনা করা হয়। এ সময় এই হামলাকে ‘ঐতিহাসিক বিজয়’ বলেও আখ্যায়িত করেন ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়াও গাজায় ইসরাইলি হামলা অব্যাহত থাকলে হস্তক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। গত শনিবার তেহরানের পক্ষ থেকে এমন হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুটি কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য জাতিসংঘের বিশেষ সমন্বয়ক টর ওয়েনেসল্যান্ডের সঙ্গে বৈরুতে বৈঠকের সময় ইরানের এমন বার্তা পৌঁছে দেন।

ইসরাইলের দাবি, অস্ত্র পাঠাচ্ছে ইরান : গত রোববার ইসরাইলের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দাবি করেছেন, সিরিয়ায় মোতায়েন অথবা দেশটির ভেতর দিয়ে অন্যত্র অস্ত্র পাঠাচ্ছে ইরান। এর মাধ্যমে ইরানি কর্তৃপক্ষ ইসরাইলকে আরেকটি সম্মুখ যুদ্ধক্ষেত্রে ঠেলে দিতে চায়। সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে ইরান সংক্রান্ত একটি মন্তব্যে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কৌশলগত সম্পর্ক বিভাগের প্রধান জোশুয়া জারকা এ দাবি করেছেন। সিরিয়ার বিমানবন্দরে ইসরাইল হামলা চালিয়ে ইরানের এই প্রচেষ্টা আটকানোর চেষ্টা করেছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে জোশুয়া বলেন, আমরা করেছি। এর আগে গাজায় ইসরাইলের ‘যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা’ বন্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন জাতিসংঘে ইরানের দূত। অন্যথায় কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।

তীব্র খাদ্য সংকটের দ্বারপ্রান্তে গাজা : জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তা সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের (ডব্লিউএফপি) খাদ্যের মজুদ তলানিতে ঠেকে যাওয়া এবং অবরোধের কারণে নতুন সরবরাহ আসতে না পারায় আর কিছু দিনের মধ্যে গাজা উপত্যকায় তীব্র খাদ্য সংকট শুরু হতে যাচ্ছে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা ইউনাইটেড নেশন হিউম্যানিটেরিয়ান অর্গানাইজেশন (ইউএনএইচও)। গতকাল রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন ইউএনএইচওর মধ্যপ্রাচ্য শাখার করিন ফ্লেশার। জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, ডব্লিউএফপির একটি প্রতিনিধিদল গাজার বাসিন্দাদের দুই সপ্তাহ চলার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যের সরবরাহ নিয়ে সীমান্তে অপেক্ষা করছেন, কিন্তু তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

‘স্বাধীন ফিলিস্তিন’ স্লোগানে হোয়াইট হাউজের সামনে বিক্ষোভ : গত শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউজের সামনে বিক্ষোভ করেছেন হাজারো মানুষ। এ সময় তাদের ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে হোয়াইট হাউজের সম্মুখভাগ। গতকাল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি এবং সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার হাজার হাজার ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারী যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে জড়ো হয় এবং হোয়াইট হাউজের সামনে ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন’ স্লোগানে ঝড় তুলে বিক্ষোভ করেন। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আমেরিকানদের ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভের পাশাপাশি ‘ইসরাইলপন্থি’ বিক্ষোভ হওয়ার কথাও জানিয়েছে টাইমস অব ইসরাইল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত