ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জয়িতা টাওয়ার উদ্বোধন-পরবর্তী সমাবেশ

যুদ্ধ বন্ধে বিশ্বনেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

যুদ্ধ বন্ধে বিশ্বনেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

যুদ্ধ বন্ধের জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নারী ও শিশুরা। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না। আমি একজন শুধু নারী রাজনীতিক বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, একজন মা হিসেবে বিশ্ব নেতাদের কাছে অনুরোধ করব আপনারা বন্ধ করেন এই যুদ্ধ। বন্ধ করেন এই অস্ত্রের খেলা। এই অস্ত্র প্রতিযোগিতা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে পৃথিবীজুড়ে এক যুদ্ধের দামামা আমরা দেখতে পাই। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ তারমধ্যে আবার ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলের হামলা।

শেখ হাসিনা গতকাল তার সরকারি বাসভবন গণভবনে নারী উদ্যোক্তা এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহিলা অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত জয়িতা টাওয়ার উদ্বোধন পরবর্তী সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি বলেন, যুদ্ধ হলে অস্ত্রের প্রতিযোগিতা হলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় আমাদের নারী এবং শিশুরা। তারাই বেশি কষ্ট ভোগ করে।

আমাদের সবরকম অভিজ্ঞতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ’৭১ সালে পাকিস্তানি আর্মি আমার বাবাকে বন্দি করে নিয়ে যায়। তারপর মাকে বন্দি করে। তিনি ছোট বোন রেহানা ও ছোটভাইসহ বন্দিখানায় ছিলেন। এমনকি তিনি সে সময় অন্তঃসত্ত্বাও ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো ফার্নিচার ছিল না, খাবার কি হবে তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। কাজেই যুদ্ধের সময় যে কি ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়, সে অভিজ্ঞতা আমার আছে।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়রম্যান মেহের আফরোজ চুমকি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক এবং জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

জয়িতা ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ড এবং নবনির্মিত জয়িতা টাওয়ারের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়। এর আগে গতকাল সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় নবনির্মিত জয়িতা ১২তলা আইকনিক টাওয়ার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেন্ডার সমতার কথা বলে অনেক দেশ। বাংলাদেশে কিন্তু এর উল্টো হয়ে গেছে। ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি স্কুলে যায়, ফলাফলেও ভালো করে। খেলাধুলায়ও নারীরা ভালো করছে। প্রাইমারি ও মাধ্যমিকে খেলাধুলা চলছে, এখানে মেয়েরা যাতে আরো সম্পৃক্ত হয় সে ব্যবস্থা তার সরকার করে দিয়েছে। জাতির পিতা নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু অধিকার অধিকার বলে চিল্লালে হবে না। অধিকার হবে তখনই, যখন নারী ১০ টাকা নিয়ে ঘরে ঢুকতে পারবে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করতে পারলেই মেয়েদের কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না- এটা তার বাবার কথা।

তিনি বলেন, তার সরকার দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে, ধর্ষণ ও এসিড নিক্ষেপের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে সুরক্ষা দিয়েছে, নারী নির্যাতন থেকে সুরক্ষা দিতেও আইন করে দিয়েছে, সন্তানের পরিচয়ের ক্ষেত্রে বাবার সঙ্গে মায়েরও পরিচয় নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও, সরকার দরিদ্র মা, বয়স্ক নারী, বিধবা, স্বামী নিগৃহীতাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছে যাতে তাদের জীবনটা অর্থবহ হয়। এই বাজেটে ৪৩টা মন্ত্রণালয়ে নারীবান্ধব বাজেট দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা সবক্ষেত্রে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে আমরা নারী উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পরই সেখানে নারীর যে অধিকারের কথা ছিল সব বাতিল করে দেয়। কারণ, তিনি জামায়াতে ইসলামকে নিয়ে সরকার গঠন করেছিলেন। ফলে তাদের ২০ দলীয় জোট নারীদের অধিকার বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগ পুনরায় ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আবারো আমরা নীতিমালা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মেয়েরা প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে যাবে। তাদের ওসি, এসপি করেছি, বিচারকও বানিয়েছি। এসপি পদায়নের সময় অনেকে এ নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন, কিন্তু আমি তা শুনিনি। আমাদের প্রতিটি জায়গায় নারীদের আসন ও পদ সংরক্ষিত আছে, রেখেছি।

তিনি বলেন, প্রথম ইসলাম যিনি গ্রহণ করেছেন তিনি একজন নারী। আমাদের রাসুল (সা.) এর স্ত্রী খাদিজা। যিনি ইসলাম প্রচার ও প্রসারে সহযোগিতা করেছেন। যিনি একজন নারী হয়ে ব্যবসা করেছেন, স্বামীকে সহযোগিতা করেছেন, তাহলে এখন নারী ঘরবন্দি হবে কেন? হ্যাঁ, শালীনতার সঙ্গে সব জায়গায় চলবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নারীদের পৃথক চেম্বার করার ক্ষেত্রে তার ছোট বোন শেখ রেহানা উৎসাহ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি নারীদের উদ্দেশে আরো বলেন, নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলে আজকের এত উন্নয়ন করতে পেরেছি। নারীদেরসহ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। আমাদের এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।

দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাবের প্রভাব ও যুদ্ধের প্রভাবে অর্থনীতিতে চাপ পড়েছে। দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। জাহাজের ভাড়া বেড়ে গেছে। এজন্য ভাইবোনদের আহ্বান করি, যার যেখানে সুযোগ আছে, নিজেরা যেন চাষ করি। নিজেরা আবাদ করলে নিজের চাহিদা পূরণ করতে পারব। নিজেদের উপার্জন নিজে করব, নিজের পায়ে দাঁড়াব।

তিনি বলেন, আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পাশে থেকে শক্তি সাহস জুগিয়েছেন আমার মা। তিনি বাবাকে বলতেন, তুমি কোনো চিন্তা করবে না। আমাদের পড়াশোনা করানো, সংসার সামলানো সবই দেখেছেন আমার মা। এমনকি তার বাবা কারাগারে থাকার সময় আমার মা তার মুক্তির প্রচেষ্টার পাশাপাশি আন্দোলন সংগঠনেও ভূমিকা রেখেছেন। দেশের স্বাধীনতা ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে তার মায়ের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, বড় বড় নেতাদের মতামত অগ্রাহ্য করেই তার মা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালিন জাতির পিতার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আলোচনায় যোগ দেবার প্রস্তাবে সাড়া দেননি এমনকি ঐতিহাসিক ছয় দফার সময় একচুলও অবস্থান থেকে সরে আসেননি। তার পরামর্শেই জাতির পিতা নানা মুনীর নানা মত না নিয়ে তার নিজের মধ্যে মানুষের জন্য যে ভাবনা তা থেকেই ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন বলেও জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা মানুষকে বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। বার বার কারাবরণ করেছেন। তিনিই আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার ডাকেই এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে। তিনিই এদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতির শুরুটা করে দিয়ে গেছেন। তার মা সবসময় পাশে থেকে উৎসাহ জুগিয়ে গেছেন এবং জাতির পিতার সঙ্গে নিজের জীবনটাও দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য আমরা জয়িতা ফাউন্ডেশন করেছি। নারীদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শনীর জন্য এই টাওয়ার করেছি। গণভবনের মাটি আজ ধন্য, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দক্ষ ও সফল নারী উদ্যোক্তারা এখানে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন রাজপথে পুরুষরা নামতে পারেনি, বিএনপি-জামায়াতের অত্যচার-নির্যাতন সহ্য করেই আমাদের নারী নেতাকর্মীরা আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ আন্দোলন-সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী নারীদেরও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত