ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আজ ১৫০ সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

যোগাযোগের সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নে পাবে নতুন মাত্রা

যোগাযোগের সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নে পাবে নতুন মাত্রা

দেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে ১৫০টি সেতু ও ১৪টি ওভারপাস আজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর সড়ক ভবন থেকে ভার্চুয়ালি এসব সেতু ও মহাসড়ক ওভারপাস উদ্বোধন করা হবে। জানা গেছে, সড়ক ভবনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এছাড়া উদ্বোধনী এলাকাগুলোতে স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী সেতুগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেবেন। অনুষ্ঠানে এসব সেতুর ওপর একটি ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে।

সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, একই দিনে স্বয়ংক্রিয় মোটরযান ফিটনেস পরীক্ষা কেন্দ্র, ডিটিসিএ ভবন, বিআরটিসি’র ময়মনসিংহ বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ময়মনসিংহ জেলার কেওয়াটখালী ও রহমতপুর সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন এবং দুর্ঘটনায় নিহত-আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষতিপূরণ প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আকাশ, রেল, সড়ক, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে শুরু করে সেতুপথে বিপ্লব ঘটেছে। যোগাযোগ খাতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সাফল্যের সাক্ষর রেখেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এখন সব মহলে স্বীকৃত ও প্রশংসিত। কারণ দেশের উন্নয়নের পেছনে যোগাযোগ খাত বেশি গুরুত্ব রাখছে এবং রাখবে। সেটি মাথায় রেখেই যোগাযোগ খাতে রীতিমতো বিপ্লব ঘটেছে। নতুন করে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করা হলে পণ্য পরিবহন সহজ হবে।

জানা গেছে, নতুন চালু হতে যাওয়া ১৫০টি সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৯ হাজার ৪৫৪ মিটার। নির্মাণে মোট ব্যয় ৩ হাজার ২৮৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সবচেয়ে বড় সেতুটি হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নির্মিত ৫৫৮.২১ মিটার দীর্ঘ তিতাস সেতু। যানজট নিরসনে দেশের উত্তরাঞ্চলে নির্মিত এসব ওভারপাসের মোট দৈর্ঘ্য ৬৮৯ মিটার। নির্মাণ ব্যয় ২০৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সেতুগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪০টির অবস্থান ময়মনসিংহ বিভাগে। এছাড়া ঢাকা বিভাগে ৩২টি, চট্টগ্রামে ২৭টি ও রাজশাহীতে ২২টি, খুলনায় ১২টি, বরিশাল ও রংপুরে আটটি করে এবং সিলেট বিভাগে একটি সেতু রয়েছে। এছাড়া উত্তরবঙ্গের যানজট নিরসনে ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক (এন-৫)সহ বেশ কয়েকটি মহাসড়কে নির্মিত ১৪টি ওভারপাসের মধ্যে আটটি অবস্থিত রাজশাহী বিভাগে আর ছয়টির অবস্থান রংপুর বিভাগে।

সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় তিতাস সেতুর দৈর্ঘ্য ৫৫৮.২১ মিটার। এর বাইরে ৪০২.৬১ মিটার দৈর্ঘ্যরে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক সুরমা সেতু, বগুড়ার ২৯৮.৮০ মিটার দীর্ঘ আড়িয়ারঘাট সেতু, ১৯৩.৩০ মিটার দীর্ঘ ঢাকা জেলার নয়ারহাট সেতু উদ্বোধন করা হবে। বিভিন্ন মহাসড়কে অবস্থিত জরাজীর্ণ, অপ্রশস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিদ্যমান বেইলী সেতু প্রতিস্থাপন করে নির্মাণ করা নতুন ১৫টি আরসিসি সেতু রয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুরের ১৮৭.১৮ মিটার দীর্ঘ চাপাইর সেতু ও নারায়ণগঞ্জের ১৪৯.৮৭ মিটার দৈর্ঘ্যরে রামচন্দ্রী সেতু উল্লেখযোগ্য। দেশের সীমান্ত ঘেঁষে বিস্তৃত সড়ক নেটওয়ার্ককে সচল করতে ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার সীমান্ত সড়কে ১৯টি নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া জামালপুর জেলায় রৌমারী স্থলবন্দর জামালপুর-ধানুয়া কামালপুর-কদমতলা (রৌমারী) জেলা মহাসড়কে পাঁচটি সেতু ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে সহায়ক হবে বলে মনে করে সেতু বিভাগ।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে অবস্থিত জরাজীর্ণ, অপ্রশস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিদ্যমান বেইলী সেতু ভেঙে নতুন করে সেতু করা হয়েছে। এই ১৫০ সেতু সড়কে যুক্ত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসবে। মানুষ ঝুঁকিমুক্ত হয়ে চলাচল করতে পারবে। পণ্য পরিবহনে সুবিধা হবে।

সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর সূত্র বলেছে, বর্তমানে সংস্থাটির অধীন দেশে ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার সড়ক নেটওয়ার্কের মধ্যে ১৩ হাজার ৮০০টি কালভার্ট ও সাড়ে ৪ হাজার সেতু রয়েছে। এই সড়ক নেটওয়ার্কের মধ্যে ৩ হাজার ৯৯১ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, ৪ হাজার ৮৯৭ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়ক ও ১৩ হাজার ৫৮৮ কিলোমিটার জেলা সড়ক রয়েছে।

জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সহযোগিতায় চলমান ‘ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (বাংলাদেশ)’ আওতায় নির্মিত ১৬টি সেতুর মধ্যে কক্সবাজারের মাতামুহুরী সেতু (৩২১.৪৫ মিটার), চট্টগ্রামের সাঙ্গু সেতু (২৩৮.৩৫ মিটার), যশোরের ঝিকরগাছা সেতু (১২০.২০ মিটার), নড়াইল জেলার তুলারামপুর সেতু (১০৭.২০ মিটার), গোপালগঞ্জের গ্যারাকোলা সেতু (১০৫.২০ মিটার) উল্লেখযোগ্য।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহযোগিতায় চলমান ‘সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প ২ : এলেঙ্গা হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ১৪টি সেতুও উদ্বোধন করা হচ্ছে। ২৯৬ মিটার দৈর্ঘ্যরে সিরাজগঞ্জের নলকা সেতু, ১২২.২৩ মিটার দীর্ঘ জোড়া সেতু যোগাযোগে উত্তরাঞ্চলের জন্য নতুন মাত্রা যোগ করবে। এ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলায় অবস্থিত মোট ১৪টি ওভারপাস যানবাহনের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করবে। ওভারপাসগুলোর মধ্যে ঢাকা-রংপুর-বাংলাবান্ধা জাতীয় মহাসড়কে নির্মিত বগুড়ায় ১৭৮ মিটার দীর্ঘ চারমাথা ওভারপাস ও ১০৮ মিটার দীর্ঘ মহাস্থান ওভারপাস রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগকে আরো সহজ ও দ্রুততর করবে।

জাইকার অর্থায়নে চলমান ‘ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের’ আওতায় দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নির্মিত ২১টি সেতুর মধ্যে নীলফামারীর বাহাগিলি সেতু (১৯০ মিটার), শরীয়তপুরের গাজীপুর সেতু (১০৫ মিটার), মাগুরার সীমাখালী সেতু (৮০ মিটার) উল্লেখযোগ্য।

অবকাঠামো ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, প্রান্তিক মানুষের যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নে ছোট ছোট সেতুগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে গ্রামের পণ্য শহরে সরবরাহ সহজ হবে। জীবনমান উন্নত করবে, ঠিক একইভাবে দেশের মোট অর্থনীতিতেও অবদান রাখবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, গত বছরের ৭ নভেম্বর ১০০ সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে, এক বছরের কম সময়ের ব্যবধানে আরো ১৫০ সেতু উদ্বোধন হচ্ছে। একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যার ফলে দেশের প্রান্তিক মানুষের যোগাযোগে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। কৃষিপণ্য সহজেই শহরে সরবরাহ করতে পারবেন। এতে কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতির চাকা চাঙা হবে, যা সড়ক যোগাযোগকে মসৃণ, দ্রুত, সহজতর ও নিরাপদ করবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত