ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাতীয় সংসদের বৈঠক বসছে কাল

যে কোনো আইন সংশোধনের জন্য প্রস্তুত থাকবে সংসদ

যে কোনো আইন সংশোধনের জন্য প্রস্তুত থাকবে সংসদ

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের বর্তমান সংসদের ২৫তম অধিবেশন শুরু হবে আগামীকাল রোববার। এ অধিবেশন হবে আগামী সংসদ ভোটের তফসিলের আগের শেষ অধিবেশন। তবে আইন অনুযায়ী ৩০ জানুয়ারির আগে যে কোনো দিন আবারো অধিবেশন ডাকতে পারবে বর্তমান সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামীকাল যে অধিবেশন বসবে এটি বেশ কয়েকদিন চলবে। কারণ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে যে কোনো সময় আইনের ছোটখাটো কোনো সংশোধন করা লাগতে পাবে। তখন যাতে দ্রুত তা করা যায় এ কারণে অধিবেশন বেশি দিন চলতে পারে। এছাড়া ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা অধিবেশন চলার সময় একটি দিকনির্দেশনা নিয়ে এলাকায় যাবেন। অধিবেশন শেষ করে নিজ এলাকায় গিয়ে যাতে তারা ভোটের প্রস্তুতি নিতে পারেন এ কারণেও অধিবেশন ডাকা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তবে রাজনৈতিক যে কোনো পরিস্থিতি সামনে রেখে অধিবেশন চালু রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (১) ধারা অনুযায়ী তার ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন একাদশ জাতীয় সংসদের ২৫তম অধিবেশন আহ্বান করেছেন। কাল বিকাল ৪টায় অধিবেশন শুরু হবে। এ অধিবেশনে বেশ কিছু বিল পাস করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর বর্তমান সংসদের ২৪তম অধিবেশন ৯টি বৈঠকের পর স্থগিত করা হয়।

২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হওয়ায় ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি একাদশ সংসদ পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে চলেছে। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে, সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হলে সংসদ ভেঙে দেওয়ার আগে ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। সে অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।

এ অধিবেশনে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হবে। সরকারের বর্তমান অবস্থায় আগামী সংসদ নির্বাচন হবে। নাকি বিরোধীদলের এমপিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার হবে তা জানা যাবে। এদিকে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন একটি রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে। তা না হলে তখন নির্বাচন কমিশন পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেবে। তবে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করা ছাড়া তাদের ‘গত্যন্তর’ নেই।

তিনি বলেন, আমরা তো এখন পর্যন্ত তেমন কোনো পরিস্থিতি দেখছি না যে, আমাদের সামনে কোনো বাধাবিপত্তি আছে। সামনে বড় ধরনের কোনো বাধা দেখছি না। বাধা যেটা, সেটা আপনারাও জানেন, সবাই আমরা জানি যে ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি সেটা সমঝোতা একটা হতেও পারে, আবার না-ও হতে পারে। তখন পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হওয়া নিয়ে ইসির কোনো আশঙ্কা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আনিছুর রহমান বলেন, ‘এটা শঙ্কায় রাখছি না। পরিস্থিতি বুঝে সেটা আমরা বলব, শঙ্কা এখন আমি বলতে যাব কেন?’

কমিশন এখন কোনো বাধা দেখছে না এবং নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সব কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে আনিছুর রহমান বলেন, সবকিছু এগিয়ে রাখছি মাথায় রেখে যে আমরা নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারব। এখন তো আমি এ কথা বলতে পারব না যে, নির্বাচন আদৌ হবে কি হবে না, সেটি পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর... তখন কী হবে, না হবে, সেটা। তবে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করা ছাড়া আমাদের কোনো গত্যন্তর নেই। এবং নির্বাচন না হলে কী হবে সেটাও আপনারা জানেন। কাজেই এটা এখন আমরা বলতে পারব না। যখন নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি হবে তখনই আমরা সেটি সম্পর্কে বলতে পারব। এই মুহূর্তে কিছু বলার নেই।

জানা যায়, সংবিধানের বিধান অনুসারে, বিদ্যমান সরকার ক্ষমতায় থাকতেই পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে গেলেও সরকারের ওপর তার প্রভাব পড়বে না। সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই অযোগ্য করবে না।

সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর অর্থ হচ্ছে যিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, তিনি নতুন একজন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকবেন। অর্থাৎ এ বিধান অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বপদে বহাল রেখেই নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবে। প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি তার সরকারের মন্ত্রিসভার ক্ষেত্রেও সংবিধানের একই বিধান।

সংবিধানের ৫৮(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকিলে মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে; তবে এই পরিচ্ছেদের বিধানাবলী-সাপেক্ষে তাহাদের উত্তরাধিকারীগণ কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাহারা স্ব স্ব পদে বহাল থাকিবেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইল আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সংবিধানে সহায়ক সরকার বা অন্তবর্তীকালীন সরকারের কোনো বিধান নেই। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায়ও এ ধরনের কোনো বিধান আছে বলে জানা নেই। সংবিধানে বলা আছে, কোনো সরকার নির্বাচন করবে না। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। আর নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকারই দায়িত্বে থাকবে। সরকার ভোটের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগসহ কমিশন যা চাইবে তা করতে বাধ্য থাকবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত