ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বহুতল ভবন নির্মাণে নতুনরূপে সচিবালয়

* কর্মকর্তাদের বসার স্থান সংকট নিরসন হবে : গণপূর্ত প্রধান প্রকৌশলী * গাড়ি পার্কিংয়ের চাপও কমবে
বহুতল ভবন নির্মাণে নতুনরূপে সচিবালয়

দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, প্রকল্পের পর্যালোচনা, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কর্মকর্তাদের সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ ও বসার স্থান সংকট নিরসনে সচিবালয়ের ভেতরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি বহুতল ভবন চালু হয়েছে। বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জন্য আরেকটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবনটির নির্মাণকাজ বাস্তাবয়ন করছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতায় গণপূর্ত অধিদপ্তর।

জানা গেছে, সচিবালয় প্রাঙ্গণে অধিক সংখ্যক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের স্থান সংকুলান করা এবং সরকারি জমির সুষ্ঠু ব্যবহার ও সরকারি অর্থের সুষ্ঠু উপযোগ নিশ্চিত করতেই বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আগের তুলনায় সচিবালয়ে কয়েকগুণ কর্মব্যস্ততা বেড়েছে, এতে দপ্তরে বসার স্থান সংকুলান ও গাড়ির চাপ বাড়ছে। এই চাপ সামাল দিতে পরিকল্পিতভাবে অর্থ বিভাগের ২০তলা বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসার স্থান সংকুলান নিরসনে ২০তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসার স্থানের পাশাপাশি গাড়ি ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরবে। ২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদিত ভবনটির নির্মাণকাজ ২০২০ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে দুইবার মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী ভবনে কক্ষের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ কিছু পরিবর্তনের কারণে প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। দুটি বেইসমেন্টের ব্যবস্থা থাকছে, যেখানে ৬৬টি গাড়ি পার্ক করা যাবে। ২০তলা এই ভবনের দুটি বেইসমেন্টে থাকবে। তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় প্রধানমন্ত্রীর অফিস ও মন্ত্রিসভার বৈঠকের ব্যবস্থা থাকবে। পঞ্চম থেকে ১৩ তলা পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং ১৪ থেকে ২০ তলা পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ব্যবহার করবে।

এ ব্যাপারে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সচিবালয় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসার স্থান সংকুলান রয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থান সংকুলানের সমস্যা কেটে যাবে। এই ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় প্রধানমন্ত্রীর অফিস ও মন্ত্রিসভার বৈঠকের ব্যবস্থা থাকছে। একইসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দপ্তর থাকছে’।

সচিবালয়ে গাড়ির চাপ সামলানোর বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘সচিবালয়ের ভেতরে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে মাস্টারপ্ল্যান্ট তৈরির কাজ চলছে। এই মাস্টারপ্ল্যানের কাজটি সম্পন্ন হলে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়াও গাড়ির চাপ সামাল দিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয় (মেকানিক্যাল) কার পার্কিং নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভবনটি নির্মাণ করতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানো হয়েছে, ফাইলটি এখনও প্রক্রিয়াধীন। এটি হলে গাড়ি পার্কিংয়ের বর্তমান চাপও কমবে।

সচিবালয়ের ভেতরে বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্প গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গণপূর্ত অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, সরকারের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়। সচিবালয়ে মোট ১০টি ভবন আছে, যার ৮টিই স্বাধীনতার আগে নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও ৪টি টিনশেড একতলা ভবনেও সচিবালয়ের অভ্যন্তরের বিভিন্ন দপ্তরের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্বাধীনতার পর প্রশাসনে মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা মেটাতে ১৯৯১ সালে একটি ২১তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বহুলাংশে বেড়েছে এবং সরকারি যন্ত্রের সেবামুখী প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, বিদেশি প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি এবং ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাসহ সাধারণ জনগণ তাদের নিজ নিজ প্রয়োজনে বাংলাদেশ সচিবালয়ে আসছেন। তবে সচিবালয়ে বর্তমানে বিদ্যমান স্থাপনাগুলো ক্রমবর্ধমান ব্যবহারকারীর চাহিদা পূরণে সক্ষম হচ্ছে না।

জানা গেছে, সচিবালয়ে নতুন করে ৪২০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। যার একটি ২০ তলা, অন্যটি ১৫ তলা। আগামী বছরের মধ্যে ভবন দুটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি বহুতল ভবন এরই মধ্যে চালু হয়েছে। সচিবালয়ের ৪ নম্বর ভবনের পাশে ১৬ তলাবিশিষ্ট অত্যাধুনিক প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয় (মেকানিক্যাল) কার পার্কিং নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থান সংকুলানের সমস্যা কেটে যাবে। একই সঙ্গে গাড়ি পার্কিংয়ের বর্তমান চাপও কমবে।

গত এক দশকে বেশ কিছু নতুন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ গঠিত হওয়ায় বর্তমানে এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সিডিএমপি-২ প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত সমীক্ষায় ১৯৩৯ সালে নির্মিত সচিবালয়ের ১নং ভবন ও ১৯৪৭ সালে নির্মিত ৫নং ভবন ভূমিকম্প সহনীয় নয় মর্মে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে ভবন দুটির পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত