ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গাজায় ইসরাইলি হামলা

সমালোচনা সত্ত্বেও নিন্দা জানায়নি বিএনপি

কৌঁসুলি ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
সমালোচনা সত্ত্বেও নিন্দা জানায়নি বিএনপি

ফিলিস্তিনে ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। এই ইস্যুতে বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ সরব। অধিকাংশ দেশ নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি নিন্দা জানাচ্ছে। গাজায় ইসলরাইলি হামলার প্রতিবাদে দেশে দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের বিভিন্ন রকমের সাহায্য দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ব্যতিক্রম শুধু বিএনপি। ফিলিস্তিন ইস্যুতে এখনো নীরব ভূমিকায় দলটি। কোনো বক্তব্য-বিবৃতি এখনো দেয়নি। বিএনপি নেতাদের দাবি, তারা নীরব নন। দলটির পক্ষ থেকে উভয় পক্ষকেই সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে সেটি বিবৃতি আকারে কিংবা কোনো প্রতিবাদ সমাবেশ করে নয়। বিএনপির পক্ষ থেকে এক টুইট বার্তায় সহিংসতার নিন্দা জানানো হয়েছে। টুইট বার্তায় অবিলম্বে রক্তপাত বন্ধ ও সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানে এগিয়ে আসতে জাতিসংঘ, ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং বিশ্বনেতাদের প্রতি কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বানও জানানো হয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের একাধিক নেতা ও দায়িত্বশীলরা বলেছেন, প্রথমত ফিলিস্তিন ইস্যুটি আন্তর্জাতিক। এই ইস্যুতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের টুইটটিই দলের অবস্থানকে তুলে ধরেছে। দ্বিতীয়ত, বিএনপি দেশের উদার গণতান্ত্রিক দল, কোনো ধর্মভিত্তিক দল নয়। এক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে ইস্যুটি বিবেচনা করছে। সূত্র জানায়, বিএনপি ফিলিস্তিন ইস্যুতে পশ্চিমাদের নীতি অনুসরণ করছে। ইসরাইলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গভীর সুসম্পর্কের কারণে কোনোভাবেই বিতর্কিত কোনো অবস্থান নিচ্ছে না বিএনপি। সাধারণত এ ধরনের ইস্যুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিকভাবে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে থাকেন। কিন্তু ফিলিস্তিন ইস্যুতে এবার তিনিসহ সব নেতাই কার্যত নীরব রয়েছেন।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে বিএনপি নতুন করে নিজেদের উদার গণতান্ত্রিক দল হিসেবে উপস্থাপন করায় ফিলিস্তিন ইস্যুতে পশ্চিমাদের পলিসি অনুসরণ করছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের ডানপন্থি অংশের নেতারা বিষয়টিকে সহজভাবে না নিলেও তারাও প্রকাশ্যে কুলুপ এঁটেছেন।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, অবস্থানগত কারণে সরকারের যেসব বাধ্যবাধকতা থাকে, রাজনৈতিক দলের সামনে তা ততটা না থাকায় তাদের সোচ্চার হওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ। কিন্তু সেই সহজ জিনিসটাই এখন সম্ভবত বিএনপির জন্য অনেক বেশি কঠিন হয়ে গেছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি এখন সরকারের পতন ঘটানো প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমের ওপর অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি নিভর্রশীল হয়ে পড়েছে।

এদিকে ফিলিস্তিনে ইসরাইলে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে আওয়ামী লীগ সরব। এ ক্ষেত্রে একেবারেই নিশ্চুপ বিএনপি। ফিলিস্তিনের পক্ষে সভা-সমাবেশ করতে দেখা যায়নি বিএনপিকে।

এদিকে, নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের জঘন্য হামলার বিরুদ্ধে নীরব থাকায় বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি দেখি অনেকেই (বিএনপি) চুপ থাকেন। কারণ যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা যদি আবার নাখোশ হয়। তাই যারা নির্যাতিত তাদের কথা বলার সাহস নাই। আর তারা আন্দোলন করে পদত্যাগের ডাক দেয়। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়।’

অবশ্য শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়, আওয়ামী লীগের আরো বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাও ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপির নীরব ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তারপরও ফিলিস্তিন ইস্যুতে কথা বলতে দেখা যায়নি দলটিকে।

ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর বর্বরোচিত হামলায় হতাহত ফিলিস্তিনিদের জন্য দেশের মসজিদে মসজিদে গত শুক্রবার দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয় মোনাজাতে ইসরাইলের হাতে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করা হয়। নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া করেন মুসল্লিরা।

এদিকে, গাজাসহ ফিলিস্তিনের অন্যান্য স্থানে ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর বর্বরোচিত হামলায় ফিলিস্তিনি নাগরিকদের মৃত্যুতে গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক পালন করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সব সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।

এ বিষয়ে বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের চেয়ারম্যান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ফিলিস্তিন-ইসরাইল ইস্যুতে বিএনপি নীরব নয়। এই ইস্যুতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সোশ্যাল হ্যান্ডেল এক্সে টুইট করেছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিভিন্ন বক্তব্যে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। এই ইস্যুতে বিএনপি চুপ রয়েছে- এমন তথ্য সঠিক নয়।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আমরা বরাবরই ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরিত হামলার নিন্দা জানাই। দলের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি বা নিন্দা জানানো হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যেও আমরা ফিলিস্তিনের ওপর হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া ইসরাইয়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাতে অন্তত ৩ হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৯৪০ শিশু এবং ১ হাজারের বেশি নারী। অন্যদিকে হামাসের হামলায় অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন ইসরাইলি নিহত হয়েছেন। গাজার আল আহলি আরব হাসপাতালে ইসরাইলি বিমান হামলায় অন্তত ৫০০ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ১৯৫৩ সালের পর এই প্রথম এত বড় মাত্রার যুদ্ধ শুরু হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আল আকসা অঞ্চলে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত