ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনে প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সবসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে থাকবে

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অতীতের মতো সবসময় তাদের পাশে থাকবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ সব সময় আপনাদের (হিন্দু সম্প্রদায়) পাশে ছিলাম এবং থাকব।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাঅষ্টমীর দিনে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দুর্গাপূজা মণ্ডপ পরিদর্শনকালে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে ভাষণে একথা বলেন। দেশ-বিদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে এই পূজা সম্পন্ন হোক সেটাই আমরা চাই। আমরা পাশে আছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে আমাদের সংগঠনের নেতাকর্মী প্রত্যেকেই পাশে থাকবেন। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন এখানে না ঘটতে পারে, সেজন্য আমরা সবাই সতর্ক থাকব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ একসঙ্গে যুদ্ধ করেই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। কিন্তু ’৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, তা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। হিন্দু সম্প্রদাযের ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে। এই বাংলাদেশে আমরা দেখেছি ১৯৯২ সালের পর এবং ২০০১ সালে এবং এরপরও বার বার আঘাত এসেছে। আমরা আওয়ামী লীগ সবসময় আপনাদের পাশে ছিলাম, পাশে আছি।

বাংলাদেশের জনগণ উদারমনা এবং সবসময় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে কারণেই আমাদের স্লোগান- ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। ঠিক এইভাবেই আমরা সবাই উৎসব পালন করে যাচ্ছি। সারাদেশে ৩২ হাজারের উপর পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা চলছে। তার নিজের এলাকা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া-কোটালিপাড়ায় ৪৪০টি পূজামণ্ডপ এবং ঢাকায় ২৪৬টি পূজামণ্ডপ রয়েছে।

তিনি বলেন, এই পূজা সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে উৎসবের মধ্যদিয়ে পালিত হচ্ছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারি বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের যতটুকু করার আমরা করেছি।

হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন দাবির অনেকগুলোই সরকার এরই মধ্যে পূরণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছুদিন আগেই এর নেতাদের সঙ্গে তিনি বসেন এবং সেখানে বিস্তারিত বলেছেন।

তিনি বলেন, আজ যেহেতু উৎসবের দিন, তাই কী দিলাম, কী করলাম বা কী পেলাম, কী পেলাম না- সে কথায় আমি যাব না।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এই মাটির সন্তান সবাই। এই মাটিতে নিজ নিজ অধিকার নিয়ে আপনারা বসবাস করবেন। আর মহান মুক্তিযুদ্ধে সবাই এক হয়ে যুদ্ধ করেছেন। তাই এখানে সবার সমান অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার যাতে বলবৎ ও সুপ্রতিষ্ঠিত থাকে, আমরা সবসময় সেই চেষ্টাই করি।’

তিনি বলেন, ‘আপনারাও আশীর্বাদ করেন বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। এখন ঘরে ঘরে খাবার আছে, বিদ্যুৎ আছে, চিকিৎসাসেবা আমরা মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ করব, সেটা আমরা করে দিয়েছি। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ইনশাআল্লাহ আমরা সেটাও করতে পারব। সারাদেশে উন্নয়নের ছোঁয়া, কেন না মানুষের কল্যাণেই আমাদের কাজ। আর মানুষের কল্যাণ করাকেই আমরা একমাত্র দায়িত্ব বলে মনে করি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সবসময় বিশ্বাস করি সকল ধর্ম বর্ণের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে। সুরা কাফেরুনের আয়াত ‘লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদীন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোরআন শরিফেই সবাইকে নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার দেয়া হয়েছে। কাজেই কেউ কারো ওপর হস্তক্ষেপ করবে না।’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জেএল ভৌমিক ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথও বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রোমেন মন্ডল।

এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিম উপস্থিত ছিলেন। শুরুতে প্রধানমন্ত্রী পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন এবং পরে নৃত্য উপভোগ করেন।

প্রধানমন্ত্রী পরে রাজধানীর গোপীবাগে রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন পরিদর্শন করে ভক্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং ভাষণ দেন।

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের যে সংবিধান দিয়েছেন, সেখানেই সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করে গেছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য ’৭৫ সালে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধ্বংস করে দেয়।’

‘মার্শাল ল’ অর্ডিন্যান্স দিয়ে সংবিধানকে ক্ষত বিক্ষত করে ধর্ম নিরপেক্ষতা বাদ দেয়ার পর আওয়ামী লীগ আবার সরকারে এসে সংবিধান সংশোধন করে ধর্ম নিরপেক্ষতা অর্থাৎ সকল ধর্মের মানুষের স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের অধিকারকে নিশ্চিত করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে প্রতিটি উৎসব সবাই মিলেই উদযাপন করে। এটাই বাংলাদেশের সৌন্দর্য। আজ সারাদেশে পূজামণ্ডপে সবাই শান্তিপূর্ণভাবে পূজা করতে পারছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া ও এরশাদের আমলে এদেশে এমনও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, মন্দিরে গিয়ে পূজা করার পরিস্থিতি তখন ছিল না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবসময় একত্রে কাজ করে এবং আপনাদের পাশে রয়েছে। শান্তি বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীসহ তার দলের নেতাকর্মীদেরও বিষয়টি নিশ্চিত করার তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।

দেশে খাদ্যের কোনো অভাব নেই কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশন এবং সাম্প্রতিক ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসনে কারণে বিশ্বমন্দার প্রেক্ষাপটে কোনভাবে দেশে যেন খাদ্যাভাব দেখা না দিতে পারে সেজন্য দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, ২০২৬ সাল থেকে যার কার্যক্রম শুরু হবে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক, সেটাই আমরা কামনা করি। সেজন্য সকল ধর্মের মানুষকে এক হয়ে আমাদের এই মাতৃভূমির জন্য কাজ করতে হবে। কেন না এই দেশ আমাদের সকলের। এই মাটিতে আপনারা জন্মগ্রহণ করেছেন এখানে আপনাদের সকল অধিকার নিয়েই আপনারা বসবাস করবেন। অন্তত আমরা ক্ষমতায় থাকলে সে নিশ্চয়তা দিয়ে থাকি।

স্বাগত বক্তব্য দেন, রামকৃষ্ণ মঠ এবং রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ ও সম্পাদক স্বামী পূর্ণাত্মানন্দজি মহারাজ।

প্রধানমন্ত্রী ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ এবং রামকৃষ্ণ মিশনের বিবেকানন্দ বিদ্যার্থী ভবনের ছাত্রদের প্রকাশিত একটি প্রকাশনার মোড়কও উন্মোচন করেন।