ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘ভীতিকর’ দিন ২৮ অক্টোবর

ক্ষমতায় যেতে অলৌকিক উৎসের সন্ধানে বিএনপি

এবার কামনা জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ
ক্ষমতায় যেতে অলৌকিক উৎসের সন্ধানে বিএনপি

আসছে ২৮ অক্টোবর। এদিনটি অত্যন্ত ভীতিকর দিন হিসেবে মনে করছে সারা দেশের মানুষ। ওই দিন বিএনপি কী ঘটাতে পারে, নাকি অলৌকিক কোনো বালা-মুসিবত হিসেবে এই জাতিকে আবার ২০১৪ সালের মতো অগ্নিসন্ত্রাসের মুখোমুখি হতে হবে- সেই দুশ্চিন্তায় ভারাক্রান্ত শান্তিপ্রিয় মানুষ। বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ওই দিন মহাসমাবেশ করার জন্য অনুুমতি চেয়ে ডিএমপির কাছে আবেদন করেছে। কেবলই কি তারা সমাবেশ করবে? নাকি সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ের লড়াই শুরু করবে? সে ব্যাপারে মুখ খুলছে না বিএনপি। বিএনপির নেতারা শুধু অপেক্ষা করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। সেদিন কী হবে, সেটা সেদিনের ওপর ছেড়ে দিতে বলছেন। আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা না করে বিএনপি জনগণকে আতংকের মধ্যে রাখার পথ বেছে নিয়েছে। কোনো প্রকার সতর্ক বার্তা ছাড়া ইসরাইল যেমন ফিলিস্তিনের গাজায় নিরীহ মানুষ ও বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বোমা বর্ষণ করে যাচ্ছে, তেমনি বিএনপি দেশের মানুষকে কোনো প্রকার সতর্ক না করে, সেদিন কী করবে, সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। দেশজুড়ে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নামে বিএনপি আবার কোনো অঘটন ঘটাবে কি না, সেটা নিয়ে নিয়ে যে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে তা ভেদ করা হয়তো গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষেও সম্ভব হচ্ছে না। মানুষ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সঙ্গে অপেক্ষা করছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপি আসলে কী করতে চায়। ওই দিনের পরিস্থিতি নিয়ে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ পর্যালোচনা করছে। দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া তো সরকারের দায়িত্ব। ওই দিন অনেকে ঘরের বাইরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাদের অফিস আছে, তারাও আগাম ছুটি নিচ্ছেন।

২৮ অক্টোবর নিয়ে বিএনপি রহস্যহজনক কারণে নিশ্চুপ। কোনো নেতা কোনো প্রকার ধারণা দিচ্ছে না। দেশে একটা ‘ঘুমোট’ পরিবেশ বিরাজ করছে। জনগণের যানমালের নিরাপত্তা এবং নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে আওয়ামী লীগ এবং ও সহযোগী সংগঠন বায়তুল মোকাররম এলাকায় একই দিন মহাবেশ ডেকেছে। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের মধ্যদিয়ে সরকার পতনের দাবি পূরণের ব্যাপারে বিএনপির নেতারা অত্যন্ত আত্মপ্রত্যয়ী বলে মনে হচ্ছে। অত্যন্ত নির্ভীক চিত্তে তারা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছেন- আওয়ামী লীগকে এবার গদি ছাড়তে বাধ্য করা হবে। এবার আর আওয়ামী লীগের রক্ষা নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন আর কেউ ঠেকাতে পারবে না। আওয়ামী লীগের কবর রচনা করেই ঘরে ফিরে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন বিএনপির নেতারা। বিএনপি নেতাদের মধ্যকার দৃঢ় অবস্থান রহস্যময়। কী জাদুর কাঠি পকেটে নিয়ে তারা ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের জন্য অপেক্ষা করছেন, সেটি কেউ ফাঁস করছেন না। আওয়ামী লীগের বিচক্ষণ এবং রাজপথের লড়াকু নেতারাও কোনো কিছু আন্দাজ করতে পারছেন না। অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে সরকার পতনের একদফার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। সবার মুখে একই প্রশ্ন- আসলে কী হতে পারে ২৮ অক্টোবর এবং তার পরবর্তী দিনগুলো? এটাই নাকি বিএনপির আখেরি আন্দোলন। আর কোনো সময় দেয়া হবে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে। ২৮ অক্টোবর কী ঘটতে পারে সেটা দেখার জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হুংকারে বাংলাদেশ কাঁপছে। সরকার পতনের আন্দোলনে এবার আর পিছু হটছে না বিএনপি।

বিগত ১৫ বছর বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকার পতনের যে মহড়া রাজপথে দিয়েছে, সেটা এখন আর মহড়া থাকছে না। একদমই ফাইনাল খেলা খেলবে রাজপথের এই দলটি। কোনো আপসরফা কিংবা কোনো আলোচনার মধ্যে নেই তারা। তাদের বক্তব্য আওয়ামী লীগ দেশটাকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। সেখান থেকে দেশকে পুনরুদ্ধার করে আনার ‘মহান’ দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে বিএনপি। এ দেশের সব মানুষ ও সকল রাজনৈতিক দল বিএনপির সাথে আছে। তাহলে আওয়ামী লীগ ও এই দলের নেতাকর্মীরা কোথায় গেলেন- এটাও তো চিন্তার বিষয়! বিএনপি এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভর করে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখত। সেই যুক্তরাষ্ট্র মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সাফ জানিয়ে দিয়েছে- তারা বাংলদেশে বিশেষ কোনো দলকে পছন্দের তালিকায় রাখেনি। বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, এটাই তাদের চাওয়া। পরবর্তী-পর্যায়ের ভরসা ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারাও মুখ ফিরিয়ে নিল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলদেশি পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে বলে আশান্বিত হয়েছিল বিএনপি। তবে সে আশায়ও ‘গুড়ে বালি’। বরং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা বাংলাদেশে পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে। এই পর্যবেক্ষক দলটি বাংলাদেশে থাকবে দুই মাস। আবার মার্কিন প্রাক নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশ ঘুরে গিয়ে সেই পুরোনো সুরে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করে পাঁচটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। সেই প্রস্তাবে যেসব বক্তব্য এসেছে, তা নতুন কোনো কিছু নয়; অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ প্রতিনিয়ত আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।

ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার রাজনীতি আওয়ামী লীগ সমীচীন মনে করে না বলেই ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে তাদের পছন্দের পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার এই প্রস্তাবে বিএনপি আরো যেন শক্ত হয়ে বসল। মনে করল আওয়ামী লীগের পা গর্তে ডুবেছে। তাই একাধিক শর্ত আরোপ করে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর নানামুখী চাপ সৃষ্টি করল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা চাপের কাছে নতি স্বীকার করলেন না। বিএনপি নির্বাচনে না এসে আগুনসন্ত্রাসের পথ বেছে নিল। তারপরও নির্বাচন হয়ে গেল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসল। এবার আসল ২০১৮ সালের নির্বাচন। বিএনপি অংশ নিল। তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। ছয়টি আসনে জয়লাভ করে বেশি দিন পার্লামেন্টে ঠিকে থাকতে পারল না। লন্ডনের ‘গায়েবি’ আওয়াজে সাড়া দিয়ে পদত্যাগ করলেন ছয়জনই। এরপর এই দলটি রাজপথের রাজনৈতিক দলে নাম লেখাল।

আগামী মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। জানুয়ারি মাসে ভোট। ক্ষমতায় থাকবে আওয়ামী লীগ আর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন শেখ হাসিনা- এমনি সব খবর দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রকাশিত হচ্ছে। ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পশ্চিমা দেশগুলো আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসুক কিংবা না আসুক, সেটি নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা নেই। বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের ফেসবুকের খরব অনুসারে জানা গেল অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টেও নাকি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আনার জন্য বিল উত্থাপন করা হয়েছে। অথচ ওই সব ফেসবুক কিংবা বাংলাদেশের কোনো গণমাধ্যম ওই বিল পাসের খবরটি পায়নি। অস্ট্রেলিয়াও কি তাহলে দূরে সরে গেল। কার আশায় এখন থাকবে বিএনপি। সম্মুখে ধোঁয়াশা, কুয়াশা আর সেই সঙ্গে অনিশ্চয়তা। তারপরও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশার কোনো বহিঃপ্রকাশ নেই। তারা যথেষ্ট উজ্জীবিত। ভূমিকম্প কিংবা আগ্নেয়গিরির মতো আকস্মিকভাবে তারা সরকারের পতন ঘটবে, সেই স্বপ্নে বিভোর।

১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা যিনি এখন বিএনপিরও বড় পদে রয়েছেন তিনি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে মিডিয়ার সঙ্গে আলাপকালে জানিয়েছেন, এরশাদ সরকারের পতন হয়েছিল মাত্র দুই দিনের ঘটনার আকস্মিকতায়। তিনি কেবল শেষাংশের ঘটনাটি উল্লেখ করে বলেছেন- উপরে মহান আল্লাহ, নিচে দেশের জনগণ। আকস্মিকভাবে কী হয়ে যাবে কেউ টেরও পাবে না। তার অভিমত, বিএনপিকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কোনো জাতীয় নির্বাচন পশ্চিমা দেশ কিংবা আন্তর্জাতিক সংগঠন করতে দেবে না। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণও না। রবং তিনি আরো একধাপ এগিয়ে জানালেন বাংলাদেশের নির্বাচনের ওপর জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা দেবে।

তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন এবার আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করবে না। রাতারাতি সরকারের পতন হবে।

এককালের ছাত্রলীগের সভাপতি ওই বিএনপির নেতা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময়টা ‘রাতারাতি’ বলে উল্লেখ করেছেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যারা ওই সময় ছিলেন, তারা বলেছেন এরশাদের পতন দীর্ঘ ৯ মাসের আন্দোলনের ফসল। জাতীয় পার্টি ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দল তখন এরশাদের সঙ্গে ছিল না। রাজপথের আন্দোলনে কেউ বাধা দেয়ার সাহস পায়নি। সে কারণে এরশাদ সরকারের পতন ত্বরান্বিত হয়েছে। তবে এখন আওয়ামী লীগ উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশ ডেকে রাজপথে সরব থাকছে। এরশাদের পতন আর শেখ হাসিনা সরকারের পতন এক করে ফেলে বিএনপির নেতারা দলীয় কর্মীদের জনগণের মুখোমুখি করছেন। নেতাদের কথা শুনে বিএনপির কর্মীরা যখন তা জনগণকে বাংলাদেশ বেতারের মতো ‘রিলে’ করে শুনায়, তখনই বাধে বিপত্তি।

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত নিষেধাজ্ঞার স্বপ্ন দেখছেন বিএনপির নেতারা। তাদের ফেসবুকের ইনবক্সে শুধু নিধেষাজ্ঞার খবর। আর তাতেই তারা উজ্জীবিত।

রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন হচ্ছে- বিগত ১৫ বছর এত আন্দোলনের হুমকি বিএনপি দিল, তখন পশ্চিমা দেশ কিংবা আন্তর্জাতিক সংগঠন কোথায় ছিল? আগে কোনো দিন আসেনি। তাহলে এখন তারা কেন আওয়ামী লীগকে হটিয়ে দিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে সহায়তা করতে চায়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এমন কোনো কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করেনি, যাতে তারা তাদের স্বার্থে বিএনপিকে আবার ক্ষমতায় এনে তাদের স্বার্থ হাসিল করবে। ১৫ বছরে বিএনপি সরকার পতনে কতবার সময় নিয়েছে, তার কোনো পরিসংখ্যান বিএনপির গবেষণা সেলের কাছে আছে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। বিএনপির নেতারা বলেছেন আওয়ামী লীগ আর সুযোগ পাচ্ছে না। ফাইনাল খেলা বিএনপি খেলবে এবং সেই খেলায় তারা বিদেশি নামিদামি খেলোয়াড় দিয়ে তারা টিম গঠন করেছে। এবার তারা চ্যাম্পিয়ন হবে। তবে কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে তারা হেরে সরাসরি ফাইনাল খেলা খেলবে, সেটা কোনো আইনে সেটিও দেশের মানুষের কাছে বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ সরকারকে নিরাপদ প্রস্তানের সময় বেঁধে দিয়েছে বিএনপি। এখানেও বিএনপির মধ্যে ইসরাইলের চরিত্র ফুটে উঠেছে। গাজায় হামলা করার আগে গাজাবাসীকে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য সময় বেঁধে দিচ্ছে ইসরাইল। বিএনপিও সরকারকে সময় দিয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবার চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে চালু হবে দেশের একমাত্র টানেল। বঙ্গবন্ধু টানেল নামের এই মহাপ্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই দিন বিএনপি চট্টগ্রামে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে। রাজধানীতেও আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশ হবে। তাহলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তো বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরে হুমকিতে ভয় পেয়ে দেশ ছেড়ে যাচ্ছে না। এটা ঠিক বিএনপির পিয়ারের পাকিস্তান ছাড়া অন্য যে কোনো দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে সাদরে মেহমানদারি গ্রহণ করতে পারবেন। এই আস্থা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ সরকারকে দেশ ছাড়ার হুমকি দিয়ে মির্জা ফখরুল কেন যেন আরেকটি অলৌকিক স্বপ্ন জাতিকে দেখিয়ে হাস্যরসের সৃষ্টি করলেন, সেটাও বোধগম্য নয়।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বলে দিয়েছেন, ‘সময় আছে এখনো সেইফলি এক্সিট নিতে পারেন। চলে যান পদত্যাগ করে। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন। নতুন একটা নির্বাচন কমিশন করে, নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে। আর এটাই হচ্ছে জনগণের দাবি।’ জনগণ বলতে তিনি কাদের বুঝিয়েছেন সেটাও বোধগম্য নয়। মির্জা ফখরুল আবার বললেন, ‘প্রতিটা রাজনৈতিক দলই বলছে এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমরা আশা করব, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। তারা পদত্যাগ করবেন।’ তাহলে প্রতিটা রাজনৈতিক দলের মধ্যে কি আওয়ামী লীগের নেতৃতাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট আছে?

২৮ অক্টোবর ১০ লাখ লোক নিয়ে ঢাকা অবরোধের পরিকল্পনা বিএনপির। পূজার বন্ধে সরকারকে সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেতারা বলেছেন- আগামী ২৮ অক্টোবর থেকে সরকার পতনের নতুন কর্মসূচি। ১৫ দিনের মধ্যে আন্দোলনের ফসল ঘরে উঠবে। সরকারকে পদত্যাগের জন্য এক সপ্তাহ সময় বেধে দেওয়া হবে। চূড়ান্ত কর্মসূচিতে সরকারবিরোধী সবাইকে সম্পৃক্ত করতে চাইছে বিএনপি। ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের জেলার সবপর্যায়ের নেতাদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। তবে কার্যত বিএনপির আন্দোলন সরকারের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। বিএনপির আন্দোলনের ধরন বা আন্দোলন করার সক্ষমতা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা কার্যত উপহাস করছেন। ‘ঈদের পর সরকার পতনের আন্দোলন’ ১৫ বছর ধরে বিএনপি নেতাদের এমন হুংকার প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরলেও এবার তারা দুর্গাপূজার পর চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। আগামীকাল বিজয়া দশমী। পূজাপর্ব শেষ। এবার হয়তো বিএনপির ডাকে দেশে সরকার পতনের পর্ব শুরু হবে। এক দফা কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা শহরকেন্দ্রিক নানামুখী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিএনপি। কর্মসূচি সফল করতে রাজধানীতে ১০ লাখ লোক সমাগমের টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতারা।

চূড়ান্ত কর্মসূচি সফল করতে ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের জেলার সব পর্যায়ের নেতাদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সরকার পতনের নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপিসহ সমমনা সংগঠনগুলো। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, নির্বাচন কমিশন, সচিবালয়, আদালত ঘেরাও বা এসব প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান, মহাসড়ক অবরোধসহ ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এবারের চূড়ান্ত কর্মসূচি হবে গোটা রাজধানীজুড়ে। বিশেষ করে ঢাকার প্রবেশদ্বারসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো দখলের চেষ্টা থাকবে আন্দোলনকারীদের। কর্মসূচিতে রাজধানীর চার প্রবেশমুখে উত্তরা-গাবতলী এবং সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ীতে ২৫ হাজার করে ১ লাখ, মহাখালী-ফার্মগেট-শাহবাগ-নয়াপল্টন এলাকায় ১ লাখ করে ৪ লাখ, আদালত-সচিবালয়-প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে ৫ লাখ, সব মিলিয়ে চূড়ান্ত কর্মসূচিতে ১০ লাখ লোকের সমাগম করতে চায় বিএনপি। চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনা তাদের। রাজপথে অবস্থান নেওয়া নেতাকর্মীদের নিয়মিত খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থার কথাও ভাবা হচ্ছে। মহাসমাবেশ ‘মহাপিকনিক’ এ পরিণত হবে। অতীতের কর্মসূচির মতো আগামী কর্মসূচি যদি ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে কী হবে- এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপির নেতারা বলেছেন, ‘এবার সেই সুযোগ হবে না। ফুটবলের মতো এবার ‘ডু অর ডাই’ খেলব। দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। গণতান্ত্রিক বিশ্ব তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। এবার আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। সেটা গতানুগতিক কর্মসূচি হবে না। কঠিন এবং কঠোর কর্মসূচি। সেই আন্দোলন ব্যর্থ হলে কী হবে- এমন প্রশ্নে বিএনপির নেতারা বলেন, ‘সেটা পরে দেখা যাবে। তারা বলেছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে সরকারের পতন ঠেকানো যাবে না।’ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আন্দোলনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়কের দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। তবে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মির্জা ফখরুল হাওয়া থেকে পাওয়া আজগুবি খবর ছড়াচ্ছেন; তাদের প্রতি নাকি পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন আছে, তারাই তাদের নাকি সাহস জোগাচ্ছে। অথচ সত্য-মিথ্যা আমরা কেউ জানি না। পশ্চিমারা বলেছে, নির্বাচনে তারা কোনো দলকে সমর্থন করে না। কোনো বার্তা বা আলটিমেটাম দিয়ে লাভ হবে না, সরকার সংবিধান থেকে একচুলও সরবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১৫ বছর চলে গেছে, তাদের মরা গাঙ্গে জোয়ার নেই। তাদের ২৮ অক্টোবরের মহাসমবেশ হবে রাজধানীর গোলাপবাগের গরুর হাটের সমাবেশের মতো।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত