সমসাময়িক ভাবনা

এভাবেই দৃঢ় হোক সম্প্রীতির বন্ধন, নিবৃত্ত হোক অপশক্তি

প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শামীম সিদ্দিকী

শেষ হলো এবারের দুর্গোৎসব। সর্বোচ্চ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবারের পূজাপর্ব শেষ হওয়ায় দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার পৃষ্ঠপোষকসহ সব শ্রেণির মানুষ স্বস্তিবোধ করছে। সমন্বিত সচেতনতাবোধের কারণে জাতীয় নির্বাচনের আগে এই ধরনের একটি বৃহৎ ধর্মীয় উৎসবের আয়োজন নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য চিহ্নিত কুচক্রী মহল তাদের অপতৎপরতা চালানোর সাহস পায়নি। এটি কেবল সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা, আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের কঠোর দায়িত্ববোধ ও সর্বোপরি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার কারণে।

রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। উৎসবমুখর পরিবেশে দেবী দুর্গার বিদায়ে ভারাক্রান্ত পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছেন এদেশের সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়। গত মঙ্গলবার বিজয়া দশমীর সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার পর ঊধ্বর্তন পুলিশ কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সারাদেশে এবারে দুর্গোৎসবকেন্দ্রিক আচার-অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রতীমা বিসর্জন দেয়া পর্যন্ত কোথাও কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিপূর্ণ এবং স্বস্তির সঙ্গে তাদের প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে কাটিয়েছেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার একটি কুচক্রীমহল পূজাকে কেন্দ্রকে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে তার দায় সরকার তথা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা করেছিল। আর সেটি অনুধাবন করে এবারের পূজাপর্বটি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখেন। তিনি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। পূজা-পের আয়োজক ও পূজারিদের সঙ্গে মতবিনিমিয় করেন। হিন্দু সম্প্রদায় যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এই উৎসব পালন করতে পারে, সে ব্যাপারে তাদের আশ্বস্ত করেন। এবারের পূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন। মাঠপর্যায়ে নিবিড় নজরদারির সঙ্গে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো এবং পূজামণ্ডপকেন্দ্রিক অপরাধ প্রবণতা রোধ করার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পুলিশের সঙ্গে র‌্যাব, বিজিবি এবং আনসার সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি সুচারুভাবে পালন করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে প্রতিটি পূজামণ্ডপ ও প্রতীমা বিসর্জন ঘাটে স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করেন। সংবেদনশীল মণ্ডপগুলোতে সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়। প্রত্যেক পূজা উদযাপন কমিটির নেতারাও নিবিড়ভাবে এ উৎসবটি নজরদারি করেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবারের দুর্গোৎসবের পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা দলীয় নেতা-কমীদের অবহিত করে তাদের পূজামণ্ডপ এবং হিন্দুদের বাড়িঘর পাহারা দেয়ার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং কেন্দ্র থেকে স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা পূজার সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের পাশে ছিলেন। কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি প্রশাসন কঠোর ভূমিকায় অবর্তীর্ণ হয়। দুর্গাপূজার প্রারম্ভিক অবস্থা মহালয়া থেকে শুরু করে প্রতীমা বিসর্জন দেয়া পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা বিধানের কৌশল ছিল প্রশংসনীয়। সে কারণে দুর্গোৎসব কোনো প্রকার অঘটন ছাড়াই শেষ হয়েছে। সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী সচেতনতা ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার সঙ্গে অপামর জনসাধারণের সহযোগিতায় উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা হয়ে উঠে উপভোগের। কোনো অপশক্তি এবার বিশৃঙ্খলা করার সাহস পায়নি। দশমীর বিহিত পূজা ও প্রতীমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে গত মঙ্গলবার শেষ হওয়া পাঁচ দিনের এই শারদীয় উৎসব পালনের ক্ষেত্রে যেসব আনুষ্ঠানিকতা থাকে, তার সবগুলো পর্ব হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সুচারুভাবে পালন করতে পেরেছে। শরতের প্রকৃতি তাদের এই আনন্দের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিসর্জন ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কড়া নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন দিতে আসা ট্রাক চলাচলের রুট নির্ধারণ ও বিসর্জনে নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। বিসর্জনের উদ্দেশে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গন থেকে কেন্দ্রীয় বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয় বিকালে। সম্মিলিতভাবে বিজয়ার শোভাযাত্রা সদরঘাটের ওয়াইজঘাটে বুড়িগঙ্গায় বিসর্জন দেওয়ার মধ্যদিয়ে শেষ হয়। রাজধানীতে বিজয়ার শোভাযাত্রা ও বিসর্জনকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ, নৌপুলিশ, র‌্যাব ও আনসার বাহিনী একযোগে কাজ করে। বিশেষ করে, বুড়িগঙ্গা, সদরঘাটের ওয়াইজঘাটে, পুরান ঢাকার পোস্তগোলার শ্মশানঘাট ও লালকুঠির ঘাটে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সারাদেশে বিসর্জনে র‌্যাবও বিশেষ নিরাপত্তা দেয়। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‌্যাবের স্পেশাল ফোর্স ও হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়। দেশের প্রতিটি এলাকায় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়। ব্যাটালিয়নের ইউনিট প্রধানরা পূজার নিরাপত্তা পরিদর্শনে যান। র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে এলাকাভিত্তিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। নৌপুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি যেন না হয়, সেজন্য বিসর্জনে ঘাটগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উক্তিটি এবারও পুরোপুরি প্রতিপালিত হয়েছে। এভাবেই সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় হলে অপশক্তি নিবৃত্ত হবে। জাগ্রত হবে মানবতা, প্রতিষ্ঠিত হবে হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি জাতির পিতার স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ।