ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঘূর্ণিঝড় হামুনে লন্ডভন্ড কক্সবাজার

বিধ্বস্ত ৩৮ হাজার ঘরবাড়ি বিদ্যুৎ-ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন

পৃথক ঘটনায় তিনজন নিহত
বিধ্বস্ত ৩৮ হাজার ঘরবাড়ি বিদ্যুৎ-ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন

ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে পুরো কক্সবাজার লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে। বাতাসের তিব্রতায় কক্সবাজার শহরসহ উপকূলীয় উপজেলা মহেশখালী, কুতুবদিয়া, উখিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া এবং টেকনাফসহ প্রায় সব উপজেলায় ৩৮ বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। দেওয়াল চাপায় নিহত হয়েছেন তিনজন। এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সংযোগ। বলতে গেলে এক প্রকার কার্যত অচল হয়ে পড়ছে প্রশাসনিকসহ সব কার্যক্রম।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার আবদুল খালেক (৪২), মহেশখালীর উপজেলার বড়মহেশখালী ইউনিয়নের গোরস্তানপাড়ার হারাধন দে (৪৫) ও চকরিয়া উপজেলার বদরখালী গ্রামের আশকার আলী (৪৫)। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গেল রাতে ঘূর্ণিঝড় হামুনের ২ ঘন্টার বেশি তাণ্ডবে জেলায় ৩৮ ঘরবাড়ি-দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। অনেক স্থানে গাছ ভেঙে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। ফলে গত মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে গতকাল বুধবার বিকাল ৭টা পর্যন্ত শহরের বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ আছে। বিদ্যুৎ না থাকায় শহর থেকে প্রকাশিত ২২টি দৈনিক পত্রিকার কোনোটিই প্রকাশিত হয়নি। আদালতে বিচারিক কার্যক্রমেও পড়েছে প্রভাব। তবে সকাল থেকে উপড়ে পড়া গাছ কেটে শহরের প্রধান সড়ক, সৈকত সড়ক ও কলাতলী সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, এবারে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসন উদাসিনতার পরিচয় দিয়েছে। যার ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপদে সরে আসার আগ্রাহ দেখা যায়নি। ফলে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে ৩৮ হাজার ঘর বিধ্বস্ত : ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে ৩৮ হাজার ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। যার মধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৫ হাজারের বেশি ঘর। জেলার ৯টি উপজেলার ৭০টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় অন্তত ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সব চেয়ে বেশি তাণ্ডব হয়েছে বিদ্যুৎ লাইনের ওপর। ছিন্ন-ভিন্ন বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার কারণে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার পৌরসভার আশংকি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা সম্ভব হলে বন্ধ রয়েছে বেশিভাগ এলাকা।

গতকার সন্ধ্যা ৭টায় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, সর্বশেষ তালিকায় কক্সবাজারের ৫ হাজার ১০৫টি কাঁচাঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ভেঙেছে ৩২ হাজার, ৭৪৯টি ঘর। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন ৩৩ কেভি লাইনের ১৭৪টি, ১১ কেভি লাইনের ১৮০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। ২৩টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে। ৪৯৬টি স্পটে তার ছিড়ে গেছে। ১ হাজার ৮৩৮টি মিটার নষ্ট হয়েছে। ৮০০টি স্পটে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পিডিবি ও বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন কক্সবাজার পৌরসভা/কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। ফলে উক্ত উপজেলাগুলোর সাথে মোবাইল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক জানান, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতাধীন পেকুয়া উপজেলার সাতটি ঘরের টিন সম্পূর্ণ উড়ে গেছে এবং চকরিয়া উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত একটি ব্রিজ সম্পূর্ণ বেঁকে গিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। হাজার হাজার গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে টানা ১৫ ঘণ্টা পর গতকাল বুধবার বিকাল ৩টা থেকে কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে মোবাইল নেটওয়ার্ক। কিন্তু ফোন কল ইনকামিং, আউটগুনিং এর ক্ষেত্রে জটিলতা পুরো কেটে উঠেনি। একই অবস্থা ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, মোবাইল কোম্পানির কর্মকর্তারা দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন বলে আশ্বস্ত করেছে। টানা ২৪ ঘণ্টা পর কক্সবাজার পৌরসভার আংশিক এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে বিদ্যুৎ চালু হলে অন্যান্য স্থানে এখনো বন্ধ আছে। কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের গণি বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে উপড়ে গেছে অসংখ্য বৈদ্যুতিক খুঁটি। তার ছিঁড়ে রাস্তাঘাট ও বসতিতে পড়ে রয়েছে। এখন হোঁট করে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিলে প্রাণহানি ঘটতে পারে, তাই আপাতত বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। আব্দুল কাদের গণি বলেন, এখন তিনটি সাব স্টেশন চালু করা হয়েছে। এরপর প্রধান সড়কগুলোতে কাজ শুরু হয়ে গেছে। কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। পুরো কক্সবাজারে বিদ্যুৎ চালু হতে অন্তত দুই দিন সময় লাগবে।

কক্সবাজার পৌরসভায় ১৫০ পরিবার পেলেন টিন ও নগদ অর্থ : ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে কক্সবাজার পৌরসভায় অধিক ক্ষতিগ্রস্ত বিবেচনায় ১৫০ পরিবারকে এক বান্ডিল টিন ও নগদ ১ হাজার টাকা করে প্রদান করো হয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত মাঠে এসব টিন ও টাকা বিতরণ করা হয়। বিতরণ অনুষ্ঠানে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মো. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, পৌরসভার ১২ ট ওয়ার্ডে অন্তত ১৫ হাজার বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, যার মধ্যে পুরোপুরি বিধ্বস্ত ঘর সাড়ে ৫ হাজার। অন্যান্যগুলো আংশিক। অধিক ক্ষতিগ্রস্থ বিবেচনায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ১৫০ পরিবারকে ঘর তৈরি করতে টিন ও টাকা দেয়া হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে অন্যদের দেয়া হবে। টিন বিতরণকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ, সদর উপজেলা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া, কক্সবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র সালাউদ্দিন সেতু, ইয়াছমিন আক্তার, কাউন্সিলর যথাক্রমে মিজানুর রহমান, আমিনুল ইসলাম মুকুল, এহেসান উল্লাহ, সাহাব উদ্দিন সিকদার, রাজ বিহারী দাশ, শাহেনা আক্তার পাখি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত