ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধ

ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় ২৪ ঘণ্টায় ৭৫৬ মৃত্যু

প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর নির্বিচার হামলায় একদিনে সর্বোচ্চ ফিলিস্তিনির মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলের হামলায় গাজা উপত্যকায় রেকর্ড ৭৫৬ ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে। গত মঙ্গলবার গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীনগোষ্ঠী হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইসরাইলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় শিশুসহ ৭৫৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর হামাসের সাথে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৬ হাজার ৫৪৬ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ২ হাজার ৭০৪ জন শিশু রয়েছে।

১৯ দিন ধরে চলে আসা এই যুদ্ধে আহত হয়েছেন ১৭ হাজার ৪৩৯ ফিলিস্তিনি। এর আগে ইসরাইলের হামলায় গাজায় একদিনে সর্বোচ্চ ৭০৪ জনের প্রাণহানির ঘটনার রেকর্ড হয়েছিল গত সোমবার। অন্যদিকে, হামাসের হামলায় ইসরাইলিদের প্রাণহানির সংখ্যা ১ হাজার ৪০৫ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর ৩০৮ সৈন্য ও ৫৮ পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। এছাড়া হামাসের অব্যাহত হামলায় ইসরাইলে আহত হয়েছেন আরো ৫ হাজারের বেশি মানুষ।

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইসরাইলি হামলায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজার প্রায় ৩০ শতাংশ হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। এসব হাসপাতালে আহত ও মুমূর্ষু রোগীদের আর চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ৩৫টি হাসপাতালের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ (১২টি) এবং ৭২টি স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিকের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই (৪৬টি) বন্ধ হয়ে গেছে। ইসরাইলি বিমান হামলায় ক্ষয়ক্ষতির শিকার অথবা জ্বালানির সংকটের কারণে এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ হয়ে পড়েছে।

গত মঙ্গলবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, গাজার হাসপাতালগুলোতে জেনারেটর সচল রাখার মতো আর ৪৮ ঘণ্টার জ্বালানি রয়েছে। এর পরই সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।

গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ শুরু হওয়ার একদিন পর গাজা উপত্যকায় সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করে ইসরাইল। এই অবরোধ আরোপের কারণে গাজায় বিদ্যুৎ, খাবার, ওষুধ, পানি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর চালান সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ গাজায় ইসরাইলের সর্বাত্মক অবরোধের তীব্র সমালোচনা করে সেখানে মানবিক ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে কয়েক দফায় খাবার, পানি, ওষুধসহ অন্যান্য কিছু পণ্য সামগ্রীবাহী ট্রাককে মিশরের রাফাহ সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে ইসরাইল। গত বুধবার জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, জ্বালানির তীব্র সংকটের কারণে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে গাজা। এই উপত্যকায় জ্বালানির সরবরাহের অনুমতি দেওয়া না হলে জাতিসংঘ ত্রাণ তৎপরতা বন্ধ করে দেবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে সংস্থাটি।

গাজায় ৩০ শতাংশ হাসপাতাল বন্ধ : জাতিসংঘ

গাজার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি হাসপাতাল এবং প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিক হামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অথবা জ্বালানির অভাবের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। জাতিসংঘের মতে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ৩৫টি হাসপাতালের মধ্যে ১২টি এবং ৭২টি স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিকের মধ্যে ৪৬টি বন্ধ হয়ে গেছে। জ্বালানি ঘাটতির কারণে হাসপাতালের জেনারেটরগুলো ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে বলে গত মঙ্গলবার জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

হামলায় হাজারো আহত ব্যক্তির সঙ্গে ইসরাইলি অবরোধের মুখে হাসপাতালের জীবন রক্ষাকারী সুবিধাগুলোও ধ্বংস হয়েছে। ইসরাইলি বোমা হামলায় এলাকাগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং জীবনযাত্রা ভেঙে পড়েছে। অবরুদ্ধ ভূখণ্ডে ইসরাইলের বোমাবর্ষণে প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসংঘের মতে ৬ লাখ ২৫ হাজারেও বেশি শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত হতে পারছে না।

ইসরাইলি হামলায় প্রায় অর্ধেক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আনুমানিক ১৪ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ বলছে। খবর আল-জাজিরা।