ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বঙ্গবন্ধু টানেল উৎসব ‘আমরা করবো জয়’

বঙ্গবন্ধু টানেল উৎসব ‘আমরা করবো জয়’

চট্টগ্রামে গত বুধবার রাত থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী টানেল উৎসব। নাম দেয়া হয়েছে ‘আমরা করবো জয়’। উৎসব আয়োজকদের অন্যতম চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, বঙ্গবন্ধু টানেল বাংলাদেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার খুলে দেবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নদীর তলদেশে প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ‘আমরা করবো জয়’র উদ্যোগে গত বুধবার পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে দুই দিনব্যাপী টানেল উৎসবের উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুজন বলেন, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র, চট্টলাবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রথম মেয়র নির্বাচনে ২৮ দফার একটি দফা ছিল নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ। মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি সম্মান জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে টানেল নির্মাণের উপযুক্ত স্থান হিসেবে বেছে নেওয়ায় চট্টগ্রামবাসী গর্বিত। তাই প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে উৎসবমুখর করতে দুই দিনব্যাপী টানেল উৎসবের আয়োজন করেছে ‘আমরা করবো জয়’। এর মাধ্যমে আমরা প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে স্মরণীয় বরণীয় করে রাখতে চাই। চট্টগ্রামের প্রতিটি নাগরিকের হৃদয়ে প্রধানমন্ত্রীর আগমনী বার্তা পৌঁছাতে চায় ‘আমরা করবো জয়’। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব আমি নিজের কাঁধে তুলে নিলাম’। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি কথার বাস্তব প্রতিফলন আজ দেখতে পাচ্ছেন চট্টগ্রামবাসী।

একের পর এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চট্টগ্রামকে একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ নগরে রূপান্তরের কাজ চলছে। অল্প ক’দিন পর চট্টগ্রাম ইতিহাসের সাক্ষী হতে চলেছে। চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও আনোয়ারাকে যুক্ত করবে এ টানেল। সেই সঙ্গে নদীর তলদেশ দিয়ে কম সময়ে যাতায়াত সুবিধা পাবে দুটি আলাদা শহর।

টানেল ঘিরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের আরো বিকাশ ঘটবে বলেও মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক এই প্রশাসক।

তিনি বলেন, এই টানেল চালু হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন হবে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

পতেঙ্গা সমুদ্র পাড়ে একঝাঁক শিশুর মনোমুগ্ধকর আবৃত্তির মধ্যদিয়ে গত বুধবার বিকাল ৪টায় উৎসবের উদ্বোধন পর্ব শুরু হয়। ঘোড়ার গাড়ি এবং হাজারো জনতার হাতে লাল-সবুজ বেলুন নিয়ে খোরশেদ আলম সুজনের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য র‌্যালি শুরু হলে সৈকতে আসা হাজার হাজার পর্যটক হাততালি দিয়ে র‌্যালিকে স্বাগত জানায়। উৎসবে চাঁটগাইয়া ঐতিহ্যবাহী পিঠা-পুলি এবং মহেশখালীর খিলি পান দিয়ে আপ্যায়ন করেন আয়োজকরা। সন্ধ্যার নিভু নিভু আলোতে চাঁটগাইয়া গান যখন পুরো উৎসবকে মাতিয়ে তুলে, ঠিক তখনই সাগরে চলন্ত স্পিডবোটের মিছিলে জ্বলে উঠে লাল-সবুজের আলোর মেলা।

নগর ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম ইমরান আহাম্মেদ ইমুর সভাপতিত্বে টানেল উৎসবে বক্তব্য দেন নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য রোটারিয়ান মো. ইলিয়াছ, জহির উদ্দিন মো. বাবর, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ, ডবলমুরিং থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দোস্ত মোহাম্মদ, সৈয়দ মো. জাকারিয়া, ইদ্রিস কাজেমী, মহরম আলী, আব্দুর রহমান মিয়া, নুরুল আলম, জয়নাল আবেদীন চৌধুরী আজাদ, নুরুল আলম, মো. আলী, ওয়াহিদুল আলম, শাহাদাত হোসেন, নগর যুবলীগের সভাপতি মাহবুবুল হক সুমন, কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন, পুলক খাস্তগীর, আব্দুস সালাম মাসুম, নুরজাহান রুবী, হুরে আরা বিউটি, আজম খান, নুরুল কবির, মো. হোসেন, মো. ইলিয়াছ, মোরশেদ আলম, আফরোজা খানম, নাসিমা আকতার, সাজ্জাদ হোসেন, রেজাউল করিম ইরান, সমীর মহাজন লিটন, জাইদুল ইসলাম দুর্লভ, আব্দুর রহিম জিল্লু, রাজীব হাসান রাজন, মো. ওয়াসিম, ওয়াসিম আকরাম, ফেরদৌস মাহমুদ আলমগীর, পাভেল ইসলাম, নাঈম রনি, জয়নাল উদ্দিন জাহেদ, নোমান চৌধুরী, সুজন বর্মণ, হাসানুল আলম সবুজ প্রমুখ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল আগামীকাল উদ্বোধন হবে। প্রতিদিন ১৭ হাজার ২৬০টি এবং বছরে ৭৬ লাখ যানবাহন চলাচল করতে পারবে এ টানেল দিয়ে। টানেল চালু হলে কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিতে ৫ থেকে ৬ মিনিট সময় লাগবে। এই প্রকল্পে খরচ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়। বাকি অর্থ দেয় বাংলাদেশ সরকার। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এ টানেলের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় নির্মিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। তবে সংযোগ সড়কসহ টানেলের সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত