ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমাবেশ আজ

থমথমে রাজনৈতিক অঙ্গন

থমথমে রাজনৈতিক অঙ্গন

রাজধানীতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ আজ। এই সমাবেশ ঘিরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে রাজধানীজুড়ে। এদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে পছন্দের জায়গায় সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তবে জামায়াতে ইসলামী মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশের অনুমতি চাইলেও দলটিকে অনুমতি দেয়া হয়নি। দলটি সমাবেশের ঘোষণায় অনড় থাকলেও পুলিশের পক্ষ থেকে তা প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

পাল্টাপল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে যেন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা না ঘটে, সেজন্য সজাগ দৃষ্টি রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। রয়েছে তিন স্তরে প্রস্তুতি। ঢাকার প্রবেশদ্বারে বসানো হয়েছে পুলিশি চেকপোস্ট। গণপরিহণে চালানো হচ্ছে দেহ তল্লাশি। তবে ব্যস্ততম নগরীতে আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ এবং বিএনপির মহাসমাবেশের আনুষ্ঠানিক দৃশ্যপট দেখতে সবার নজর এখন রাজধানীর দিকে।

বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ : বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আজ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি-উন্নয়ন সমাবেশের ডাক দিয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ। শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সকাল ১১টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে দুপুর ২টায়। সমাবেশে আওয়ামী লীগ ছাড়াও সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্র্মীরাও অংশ নিবেন। এছাড়া এদিন রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে সতর্ক পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে আমরা দেখিয়ে দেব, অশান্তির জবাব শান্তিপূর্ণ সমাবেশ। নেতাকর্মীদের সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের দুরভিসন্ধি আছে, সাম্প্রদায়িক আরো দুয়েকটা শক্তি নিয়ে তারা অশুভ খেলায় মেতে উঠতে পারে। আমরা আগেও শান্তি সমাবেশ করছি, আজও শান্তি সমাবেশ করব।

নয়াপল্টনেই বিএনপির মহাসমাবেশ : নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ থেকেই সরকার পতনের ‘মহাযাত্রা’ শুরুর ঘোষণা দিবে বিএনপি। মহাসমাবেশ সফল করতে স্মরণকালের সর্ববৃহত্তম লোকসমাগম করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে আজ নয়াপল্টনেই মহাসমাবেশ করছে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। এরইমধ্যে মহাসমাবেশ সফল করতে সারা দেশ থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় প্রবেশ করেছেন। নানা কৌশলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা রাজধানীতে প্রবেশ করেন। অধিকাংশ রোগী সেজে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে ঢাকায় আসছেন, কেউ ব্যবসায়ী সেজে, কেউ আত্মীয়ের বাসায় যাবে বলে, আবার কেউ কেউ পাসপোর্ট দেখিয়েও ঢাকায় আসছেন বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে। এদিকে, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল শুক্রবার নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে হাজারো নেতাকর্মীদের জড়ো হতে দেখা যায়।

গত ১৮ অক্টোবর নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দীর্ঘ চার মাস ধরে সরকার পতনের একদফা দাবিতে রাজপথে থাকা বিএনপি আন্দোলনকে এবার চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চায়। সেই লক্ষ্যে আজ নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করবে দলটি। বেলা ২টায় শুরু হবে মহাসমাবেশ। সেই মহাসমাবেশ থেকে চূড়ান্ত ধাপের লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবে তারা। মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য রাখবেন। এদিকে একই দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো রাজধানীতে সমাবেশ করবে আজ। সকাল ১১টায় বিজয়নগর হোটেল ৭১-এর সামনে এবি পার্টি, একই সময়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী পেশাজীবী পরিষদ, বেলা ১১টায় বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কির সামনে গণঅধিকার পরিষদ (নূর), বেলা ১২টায় মতিঝিল নটর ডেম কলেজের উল্টোদিকে গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক বামঐক্য, দুপুর ২টায় বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কির সামনে জনতার অধিকার পার্টি, একইস্থানে একইসময়ে ১২ দলীয় জোট, দুপুর ২টায় পুরানা পল্টন আলরাজি কমপ্লেক্সের সামনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, বেলা ৩টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ, ৩টায় কাওরানবাজার এফডিসি সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে এলডিপি, একইসময়ে মালিবাগ মোড়ে এনডিএম, একই সময়ে পুরানা পল্টন কালভার্ট রোডে গণঅধিকার পরিষদ (রেজা), বিকাল ৪টায় পুরানা পল্টন মোড়ে লেবার পার্টির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপির নেতাদের ভাষ্যমতে, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিকল্প নেই। সেই দাবিতেই আমাদের আন্দোলন চলছে। আমরা সরকারকে অনেক সুযোগ দিয়েছি, আর নয়। এবার যদি আন্দোলনে বাধা সৃষ্টি করে তাহলে ক্ষমতাসীনরা পালিয়ে রক্ষা পাবে না। সরকার যদি আমাদের উপর আঘাত করে আমরাও তার জবাব দিব। কাজেই এবার সরকারের পতন অনিবার্য। জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তারা আত্মরক্ষার জন্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রস্তুত।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মহাসমাবেশে যোগ দিয়ে সরকারকে জানিয়ে দিন, ‘না আর নয়’। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, মহাসমাবেশ আমরা নয়াপল্টনেই করতে চাই। চিঠি দিয়েছি, আর মুখেও বলে দিয়েছি। মহাসমাবেশ সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে এখানে করতে চাই।

এদিকে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং আশপাশের গলিতে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জানা গেছে, বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টন এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। পুরো এলাকায় প্রায় ৬০টির মতো সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়। বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বিএনপির মহাসমাবেশ মনিটরিং করতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। ড্রোন দিয়ে সমাবেশ পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত আছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা গেছে। সেখানে সাঁজোয়াযানও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যে কোনো ধরনের সংঘাত এড়াতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। প্রয়োজনে মাঠে নামতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও আনসার সদস্যদেরও।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির মূল টার্গেট রাজধানী, সেজন্য রাজধানী কেন্দ্রিক সভা-সমাবেশ করছে। এর আগেও ঢাকায় বেশ কয়েকটি সভা-সমাবেশ করেছে বিএনপি। তবে আজকের সভাও আগের ধারাবাহিকতা বজায় থাকতে পারে। এক দফা দাবি আদায়ে মহাসমাবেশে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মী ও সমর্থক জড়ো করে বড় ধরনের শোডাউন করতে চায় দলটি। রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, একই দিন একই সময়ে এক কিলোমিটার দূরত্বে দেশের বড় দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে রাজনীতিতে উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন্দ্র করে রাজধানীতে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলছে।

রাজধানীতে বড় দুই রাজনৈতিক দল পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ডাক দেওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য দফায় দফায় বৈঠক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশে একটি অশুভ মহল নাশকতা, নৈরাজ্য, অস্থিরতা ও সন্ত্রাসের চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। কেউ যেন অস্ত্র, বিস্ফোরক, সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতে না পারে সেজন্য যে কোনো সমাবেশকে ঘিরে নাশকতা-নৈরাজ্যকে প্রতিহত করার মতো নিরাপত্তা হুমকির কথা চিন্তা করে পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল নাশকতা ও সহিংসতার চেষ্টা করলে তা মোকাবিলায় র‌্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স, স্পেশাল ফোর্স প্রস্তুত।

মহাসমাবেশের ডাক দিয়ে বিএনপি সমাবেশস্থলে বসে যাওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করে ধ্বংসাত্মক, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, হামলা বা লুটপাট করার পাঁয়তারা করার চেষ্টা করলে সেখান থেকে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিহত ও প্রতিরোধ করার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ডিএমপির বৈঠক সূত্রে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পালন করা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু ঢাকার দুই কোটি নাগরিককে অবরুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই। অবরুদ্ধ কাউকে করতে দেওয়া হবে না। সমাবেশ সামনে রেখে তালিকা ধরে ওয়ারেন্টভুক্তদের গ্রেপ্তারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বেঁধে দেওয়া সময়ের পর যাতে সমাবেশস্থলে কোনো নেতাকর্মী অবস্থান করতে (বসে পড়তে) না পারে সেজন্য পুলিশ নিচ্ছে বিশেষ প্রস্তুতি। সহিংসতা করলে কঠোর হাতে দমন করা হবে বলে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এসব বিষয় জানিয়ে ডিএমপি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সমাবেশ ঘিরে তিন স্তরে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সমাবেশের আগের দিন থেকে ঢাকায় প্রবেশের সময় তল্লাশি জোরদার করা হয়। ঢাকার প্রতিটি হোটেল ও মেসে নিয়মিত তল্লাশি চালায় পুলিশ। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রস্তুত। নিরাপত্তা জোরদারে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে থাকবেন কর্মকর্তারা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশি চৌকি বসানোর পাশাপাশি ঢাকার প্রধান প্রবেশদ্বারগুলোতে মেটাল ডিটেক্টরসহ অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা নেই। তবে জনগণের জানমাল ও নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজনৈতিক কর্মসূচি যারা করার তারা করবে। জনগণের জানমাল ও সরকারি সম্পদ রক্ষার জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা নিতে আমরা প্রস্তুত। এ বিষয়ে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত