আজ সারা দেশে ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে আ.লীগ

হরতাল প্রতিরোধের ঘোষণা

প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ সারা দেশে ‘শান্তি সমাবেশ’ করার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে সারা দেশে সতর্ক অবস্থান থাকবে দলটির নেতাকর্মীরা। গতকাল বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজিত শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে। আমরা শান্তি চাই। নির্বাচনে ও নির্বাচনের পরেও শান্তি চাই। বিএনপির নৈরাজ্যের হরতাল কেউ মানবে না। এই অস্ত্র ভোতা হয়ে গেছে। ভোতা অস্ত্রে কাজ হবে না। মহানগর, থানা, জেলা-উপজেলাসহ সারা বাংলাদেশে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। বিএনপি সন্ত্রাসী দল। তারা তাদের পুরোনো চেহারা জাতির সামনে তুলে ধরেছে। এদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। খেলা হবে? প্রস্তুত? ফখরুল-বিএনপি কোথায়? এদের অপরাধের বিচার হবে।

তিনি বলেন, আজকে একজন সজ্জন মানুষ, প্রধান বিচারপতি, তার বাড়িতে কারা হামলা করেছে? জবাব দিতে হবে। পুলিশের ওপর হামলা করেছে, একজন পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছে। এদের ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।

বিএনপির মতো দুর্বল দলের পেছনে পশ্চিমা কেনো কেউ থাকবে না বলে এ সময় মন্তব্য করেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, পশ্চিমারা নাকি উৎসাহ দিচ্ছে। কাল থেকে আর কাউকে পাবেন না। দুর্বলের পক্ষে কেউ থাকে না। দুপুর পর্যন্ত দেখি মরণ কামড় দেয়। পরে দেখি এদিক-ওদিক তাকায় আর পালায়। অলিগলিতেও পালাতে দেব না। ওদের আর ক্ষমা নেই। আর ছাড় দেব না।

সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আজকের সমাবেশ পতন যাত্রা আর মরণ যাত্রায় এখন ফখরুল পলাতক। আজকে সমাবেশের নামে ধ্বংস বিএনপি নোংরা চেহারা জাতির সামনে পরিষ্কার হয়েছে। বাড়াবাড়ি, নোংরামি, খুনোখুনি, আগুন সন্ত্রাসের জন্য বাংলার মাটিতে বিএনপির বিচার হবে। বিএনপিকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে। বিএনপির বাড়াবাড়ির জবাব দেওয়া হবে কঠিনভাবে। বিএনপির ক্ষমা নেই, তাদের অপরাধের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। বিএনপির সঙ্গে কিছুক্ষণ লাফালাফি করে জামায়াতও স্থান করেছে; কিন্তু আওয়ামী লীগ ছিল, আছে- থাকবে। বিএনপিকে একদিনে এতগুলো অপকর্মের জন্য কৈফিয়ত দিতে হবে।

সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, যারা রক্তচক্ষু দেখিয়েছিলেন, যারা বলেছিলেন, এই ২৮ তারিখ শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেবেন। পারেন নাই। কিন্তু কি করেছেন? মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর; ৪১ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে আগুন দিয়েছেন। আমি আগেই বলেছিলাম, সাপকে বিশ্বাস করা যায়, বিএনপিকে না। এই সমাবেশ শেষ করে সবাই স্লোগান দিতে দিতে যাবেন। সন্ত্রাসীদের হরতাল মানি না, মানব না।

দলটির আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, বিএনপি পরবর্তী সময়ে কর্মসূচি আনার জন্য আমেরিকার ক্লাবে ঢুকেছে। ডিম পাড়ে হাঁসে খায় বাগডাশে। এ হাঁস শুধু ধান খায় না, শামুকও খায়। ওরা যাদের বন্ধু হয়, তাদের শত্রুর প্রয়োজন নেই। নেত্রী (শেখ হাসিনা) যা বলবেন তার জন্য আপনারা প্রস্তুত হবেন কিনা? দুই হাত তুলে দেখিয়ে দেন। এ সময় নেতাকর্মীরা হাত তুলে সমর্থন জানান।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করেছে। পুলিশের ওপর হামলা করেছে। পুলিশ হাসপাতালে আগুন দিয়েছে। আমাদের কয়েকজন নেতাকর্মীও আহত হয়েছে। নির্বাচন বানচাল করতে তারা এসব করছে। তাদের মোকাবিলা করা হবে। নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি হরতাল ডেকেছে। সেটি শান্তিপূর্ণ হলে আপত্তি নেই। কিন্তু অশান্তি সৃষ্টি করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা তাদের প্রতিহত করব। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব। সেজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

বিএনপির ডাকা হরতাল প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, বিএনপি-জামায়াত আমাদের আঘাত করেছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকরা রাজপথে নেমেছে। আমরা আজ পাড়া-মহল্লায় দুর্গ গড়ে তুলব। হরতাল প্রতিহত করা হবে।

সমাবেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। দুপুর ২টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বক্তব্য দেওয়ার সময় মঞ্চের কাছে চেয়ার ছোড়াছুড়িতে জড়ান ছাত্রলীগের বেশকিছু নেতাকর্মী। এ সময় মঞ্চ থেকে মাইকে ছাত্রলীগের নাম উল্লেখ করে বার বার থামতে অনুরোধ জানানো হয়। ১০ মিনিটের মতো এই চেয়ার ছোড়াছুড়ি চলে। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়।

ঢাকার পাশাপাশি আশপাশের জেলাগুলো থেকেও নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে যোগ দেন। গুলিস্তানের সীমানা পেরিয়ে তাদের ভিড় আশপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলের সঞ্চালনায় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সমাবেশের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে বক্তব্য দেওয়ার পরিবর্তে গান গেয়েছেন মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সংগীত শিল্পী মমতাজ বেগম। এরপর ঢাকা মহানগর কমিটি এবং বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী কমিটির নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন।

দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও সুজিত রায় নন্দী। এছাড়া ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও সমাবেশে অংশ নেন।