ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস

গাজায় চলছে স্থলযুদ্ধ : ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা

গাজায় চলছে স্থলযুদ্ধ : ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা

গাজা অবরোধের তৃতীয় সপ্তাহে গতকাল ভোরে ইসরাইল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে তুমুল স্থল অভিযান শুরু করেছে।

জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, এটি হবে গাজা উপত্যাকার অভ্যন্তরে ‘অভূতপূর্ব মানব মহাবিপর্যয়’। কয়েক সপ্তাহ ধরে অবিরাম বোমা হামলার পর গাজার ভেতরে মানব বিপর্যয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গাজাবাসীকে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব পাস হওয়া সত্ত্বেও এই স্থল অভিযান তা মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে।

হামাসের সশস্ত্র শাখা এজেদিন আল-কাসাম ব্রিগেড এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা বেইত হ্যানউনে (উত্তর গাজা স্ট্রিপ) এবং পূর্ব বুরেজ (কেন্দ্রে) ইসরাইলি স্থল অনুপ্রবেশের মোকাবিলা করছি। এখানে পাল্টাপাল্টি স্থল যুদ্ধ সংঘটিত হচ্ছে।’ ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র মেজর নির দিনার জানিয়েছেন, ‘আমাদের সেনারা গাজার অভ্যন্তরে কাজ করছে।’ হাজার হাজার সৈন্য নিয়ে গাজা সীমান্তে ইসরাইলি বাহিনী চূড়ান্ত স্থল অভিযানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এর আগে ইসরাইলি বাহিনী বুধবার এবং বৃহস্পতিবার রাতে সীমিত স্থল অভিযান চালিয়েছে। সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি শুক্রবার সাংবাদিকদের জানান, ‘গত দিনের সিরিজের স্ট্রাইক অনুসরণ করে, স্থল বাহিনীর অভিযান রাতে বাড়ানো হচ্ছে।’

ইসরাইলের সামরিক বাহিনী আরো বলেছে, তারা কৌশলগত উপায়ে ‘তাদের বিমান হামলা আরো বাড়িয়েছে।’ ইজেদিন আল-কাসাম ব্রিগেড টেলিগ্রামে বলেছে, অব্যাহত রকেট হামলার মাধ্যমে ইসরাইলি স্থল অভিযানের প্রতিরোধ করছে।

অধিকৃত ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী লিন হেস্টিংস বলেন, ‘গাজা উপত্যাকার অপারেশন রুমের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং আমাদের সব দল সেখানে কাজ করছে।’

লিন বলেন, গাজা থেকে বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, যোগাযোগ ছাড়া ‘হাসপাতাল ও মানবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া যাবে না।’

গত শুক্রবার গাজায় একটি ‘তাৎক্ষণিক মানবিক যুদ্ধবিরতি’ এর জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আহ্বানের পর স্থল যুদ্ধের এই খবর আসে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, স্থল হামলায় প্রতি মিনিটে দুর্দশা ‘বাড়ছে’। গুতেরেস বলেছেন, ‘আমি একটি মানবিক যুদ্ধবিরতির জন্য আমার আহ্বানের পুনরাবৃত্তি করছি। এর সব জিম্মিদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং জীবন রক্ষাকারী সরবরাহ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’

এদিকে গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালাতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। শুক্রবার পরিষদের অধিবেশনে জর্ডানের উত্থাপিত ওই প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়। পরিষদের ১২০ সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। আর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ১৪ সদস্য। ৪৫ সদস্য ভোটদানে বিরত ছিল। প্রস্তাবে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলে বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে সব সহিংস কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানানো হয়। একই সঙ্গে বেসামরিক লোকজনের সুরক্ষা ও নির্বিঘ্ন ত্রাণসহায়তার আহ্বান জানানো হয়। গৃহীত প্রস্তাবে চলমান জিম্মি বেসামরিক ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নিরাপত্তা, সুস্থতা এবং তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণেরও আহ্বান জানিয়ে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত কোনো প্রস্তাব সদস্যদের জন্য মেনে চলার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই।

গাজায় ২৪ ঘণ্টায় জাতিসংঘের ১৪ কর্মী নিহত : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের বিমান হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় জাতিসংঘের অন্তত ১৪ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। এই নিয়ে গত তিন সপ্তাহে গাজায় জাতিসংঘের নিহত কর্মীর সংখ্যা ৫৩ জনে পৌঁছাল। গতকাল জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তাবিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ ওয়ার্ক এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজি (আনরোয়া) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ইসরাইলি বিমান বাহিনীর গত ২১ দিনের বোমা বর্ষণে গাজায় ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ১৪ লাখ ফিলিস্তিনি ও তাদের মধ্যে প্রায় ৬ লাখ ৪০ হাজার উপত্যকার ১৫০টি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। এই শিবিরগুলো পরিচালনা করে আনরোয়া।

হামাসের শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার দাবি : ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে যে, তাদের সৈন্যরা হামাসের এক শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যা করেছে। বিমান হামলা চালিয়ে আসেম আবু রাকাবা নামের ওই শীর্ষ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে বলে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়। এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন আবু রাকাবা। তবে তার মৃত্যুর বিষয়ে স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের পক্ষ থেকে কিছু নিশ্চিত করা হয়নি।

গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপর থেকে গাজায় অব্যাহত বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। একই সঙ্গে উপত্যকাটি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ, পানি, খাবার, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে চরম মানবিক সংকটে রয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য ত্রাণসহায়তা পাচ্ছেন তারা। গাজায় ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ৩২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৬ শতাংশই নারী ও শিশু। একই সময়ে পশ্চিম তীরে ইসরাইলের অভিযানে ১১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, হামাসের হামলায় ইসরাইলে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত