বিএনপির ঢিলেঢালা হরতাল

স্বাভাবিক নিয়মেই চলে সরকারি অফিসগুলো

* আন্তঃজেলা বাস চলাচল স্বাভাবিক * ডিবি কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল * আব্বাসসহ ৮৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা * কনস্টেবল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দুই

প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীসহ সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে। দূরপাল্লার বাস ছাড়া জেলার অভ্যন্তরে ও আন্তঃজেলা বাস সার্ভিস, প্রাইভেট কার ও সিএনজিসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করেছে। আগের মতোই স্বাভাবিক নিয়মেই চলেছে সরকারি দপ্তরগুলো।

গতকাল রোববার ঢিলেঢালা হরতাল পালিত হলেও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) মিন্টো রোডের কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। আবার অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে মির্জা আব্বাসকে প্রধান আসামি করে প্রায় ৮৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

গত শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষ আর মহাসমাবেশ প- হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীনদের দায়ী করে সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণ অধিকার পরিষদসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো বিএনপির হরতালে সমর্থন দিয়েছে। হরতালের ডাক দিলেও রাজধানী ঢাকা ও আন্তঃজেলা রুটে বাস, মিনিবাস চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছিল ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি। সেই অনুযায়ী রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মুগদা, মালিবাগ, মৌচাক, রামপুরা, কারওয়ান বাজার এলাকা নগর পরিবহণ, রাস্তায় রিকশা ও অটোরিকশা চলেছে, ব্যক্তিগত গাড়িও ছিল। সারা দেশে আন্তঃজেলা বাস সার্ভিস চলাচল করলেও বিভিন্ন স্থানে কিছুটা গোলযোগের খবর পাওয়া যায়। রাজধানীর গুলিস্তান, মোহাম্মদপুর ও বংশালে তিনটি বাস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মোহাম্মদপুরের আসাদ এভিনিউয়ে ‘বাসে আগুন লাগিয়ে পালানোর সময়’ একজনের মৃত্যু হয়। ঢাকার বাইরে গাজীপুর মহাসড়কের যাত্রীবাহী বাস, মোটরসাইকেল, মিনি ট্রাক, টঙ্গীতে বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে আগুন দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় চারটি বাস। সকালে মানিকগঞ্জের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে তাতে আগুন দেওয়া হয়। কুমিল্লা নগরীতে হরতালের সমর্থনে বিএনপির মিছিলে পুলিশের ধাওয়া, লাঠিপেটা, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও ফাঁকা গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় হরতাল সমর্থনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় পুলিশের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। তাতে দুইজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। এসব ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে পিকেটারকে আটক করেছে পুলিশ।

রেলপথ : হরতাল থাকলেও সব ট্রেন যথাসময়ে চলাচল করেছে। কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোও ছেড়েছে শিডিউল মেনে। কমলাপুর স্টেশনে দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়। তিস্তা, সুন্দরবন, মহানগর প্রভাতি, কর্ণফুলী, অগ্নিবীনা, চট্টলা এক্সপ্রেসসহ সব শিডিউল ট্রেন কমলাপুরে পৌঁছেছে সময়মতো। কমলাপুরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জানান, হরতালের মধ্যে ট্রেন নির্বিঘ্নে চলচল করে বলে অন্যান্য গণপরিবহণের তুলনায় যাত্রীদের চাপ একটু বেশি ছিল।

জনপ্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় : আগের মতোই স্বাভাবিক নিয়মেই গতকাল সচিবালয়ের কার্যক্রম চলেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি নজরদারি দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও নির্ধারিত সময়েই কার্যালয়ে উপস্থিত হয়েছেন। তবে যারা শুক্র ও শনিবার দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটিতে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলেন তাদের অফিসে আসতে কিছুটা দেরি হয়েছে। সচিবালয়ের চারপাশে কঠোর পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। কার্যালয়ের ভেতরেও পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা তৎপর ছিলেন। দায়িত্বরত পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা অন্যান্য দিনের তুলনায় বাড়তি সতর্কতায় ছিলেন। সারা দেশে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর ও দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে কাজ চললেও ট্রাক না চলায় পণ্য বাইরে যেতে পারেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস না হলেও অফিস-আদালতে কাজকর্ম চলেছে। অধিকাংশ দোকানপাট খোলা ছিল। বিভিন্ন জেলা থেকে হরতালের তথ্য জানিয়েছেন আলোকিত বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা।

চট্টগ্রাম : রাজধানী ঢাকার পর ব্যস্ততম এবং বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামেও হরতাল ঢিলেঢালা হয়েছে। নগরের মুরাদপুর, অক্সিজেন মোড়, চকবাজার এলাকায় অটোরিকশা, টেম্পো, বাস, রিকশা চলেছে- তবে ব্যক্তিগত যানবাহন কম দেখা গেছে। স্কুল, কলেজ ও অফিসমুখী লোকজনও ছিলেন রাস্তায়। কোথাও হরতাল আহ্বানকারী দলের পিকেটারদের দেখা যায়নি। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার উদ্দেশে যানবাহন ছেড়েছে বলেও জানা গেছে, তবে দূরপাল্লার বাস খুব একটা দেখা যায়নি। সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি মোহাম্মদ মুছা বলেছেন, গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন উপজেলায় বাস চলছে, তবে দূরপাল্লার যাত্রী না থাকায় গাড়ি চলেনি। নগরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশের সতর্ক অবস্থান দেখা গেছে।

নোয়াখালী : নোয়াখালীতে ঢিলেঢালাভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াত-বিএনপি সন্দেহে ৮৪ জনকে আটক করেছে। দিনভর অভ্যন্তরীণ যানবাহন রাস্তায় চলাচল করেছে। স্কুল, কলেজ ও অফিসমুখী লোকজনের আনাগোনা ছিল রাস্তায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলা শহরের অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলতে থাকে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ব্যবস্থা ছিল জোরদার। হরতালের সমর্থনে সেনবাগ, সোনাইমুড়ি, বেগমগঞ্জ, সুবর্ণচর ও মাইজদীতে বিক্ষিপ্ত খণ্ডমিছিল বের হতে দেখা যায় তবে দিনভর পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি। নোয়াখালী পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, পুলিশ মাঠে রয়েছে।