বাইডেনের উপদেষ্টা নাটকে ফেঁসে গেল বিএনপি!

প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভুয়া উপদেষ্টা নাটকে ফেঁসে গেছে রাজপথের বিরোধীদল বিএনপি। মিয়ান আরাফি পরিচয়ে কথিত ওই উপদেষ্টা বিএনপি নয়াপল্টন কার্যালয়ে হাজির হয়ে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও পদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবরোধসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য দেন। তার পেছনে ছিলেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন, অ্যাডভোকেট বেলাল এবং বিতর্কিত সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসান সারওয়ার্দী। গোয়েন্দা পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে এমনটাই বলেছেন- বাইডেনের ওই ভুয়া উপদেষ্টা।

গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার পর বিতর্কিত সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসান সারওয়ার্দীর সঙ্গে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে হাজির হন রহস্যময় চরিত্রের অধিকারী মিয়ান আরাফি। নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচনি উপদেষ্টা দাবি করেন তিনি। এরপর বিএনপি নেতা ইশরাক ও বিতর্কিত সাবেক সেনা কর্মকর্তা সারওয়ার্দীকে পাশে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। বিএনপির সহিংসতার দায় পুলিশের ওপর চাপিয়ে জলঘোলা করার চেষ্টা করেন তিনি। এর কিছুক্ষণ পরই ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস জানায়, ওই ব্যক্তি মার্কিন সরকারের কেউ নন। বিএনপি মহাসচিবও বিবৃতি দিয়ে জানান, এই ব্যক্তির পরিচয় বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। ফলে রহস্যের ধূম্রজাল আরো ঘনীভূত হয়।

এরপর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পালানোর সময় কথিত ওই উপদেষ্টাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হয় মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান তার প্রকৃত নাম জাহিদুল ইসলাম, বাড়ি পাবনায়। ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, ‘তার প্রকৃত নাম মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরিফ, তার বাড়ি পাবনা। তার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে তিনি ১৯৮৪ সালে আমেরিকায় যান, ওয়াশিংটন ডিসিতে থাকেন। তারপর ১৯৮৬ সালে একবার দেশে আসেন। এরপর ২০২২-২৩ সালে তিনি একবার দেশে আসেন।

স্যাংশনভীতি সৃষ্টি ও বিএনপির সহিংসতার দায় সরকারের ওপর চাপাতেই তাকে হাজির করে বিএনপি নেতারা। জবানবন্দিতে তিনি এমনটাই জানিয়েছেন।

হারুন অর রশীদ বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসান সারওয়ার্দী, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট বেলাল এবং ইশরাক তাকে জো বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, যা সত্য নয়। তারা মিথ্যাভাবে আমাকে উপস্থাপন করেছে।’ তবে এত কিছু পর অনুতপ্ত কথিত বাইডেন উপদেষ্টা।

এদিকে, নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা দাবি করা জাহিদুল ইসলাম ওরফে মিয়া আরেফিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত রোববার ঢাকার পল্টন থানায় মহিউদ্দিন শিকদার বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই মামলার বাকি দুই আসামি হলেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী ও বিএনপি নেতা মো. ইশরাক হোসেন।

পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, অপরের রূপ ধারণ ও মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করতেই জাহিদুলকে দিয়ে মিথ্যা নাটক সাজানো হয়। তিনি আরো বলেন, যে কথাগুলো তাকে বলতে বলা হয়েছিল, সেগুলোই তিনি বলেছেন। আসলে এসব কথা তাকে দিয়ে বলানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, জাহিদুলের আসল নাম আরিফ মিয়া। তিনি একজন বাংলাদেশি আমেরিকান। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ায়। জাহিদুলরা ১০ ভাই-বোন। এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গত রোববার সকালে জাহিদুলকে আটক করে পুলিশ। গত শনিবার সন্ধ্যায় জাহিদুল নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

বিষয়টি নিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, সংঘর্ষের পর অনেক নেতাকর্মী আহত হয়। হাসপাতালে আমি তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করি এবং অন্যদেরও খোঁজখবর নিই। পরে আরো কিছু নেতাকর্মী আহতাবস্থায় বিএনপি কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছে শুনে তাদের খোঁজখবর নিতে সেখানে যাই। তার পরপরই সাবেক সেনা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল হাসান সারোওয়ার্দী দুজন ব্যক্তিকে নিয়ে আসেন। একজন নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা বলে পরিচয় দেন। আহতদের সঙ্গে কথাও বলতে চান। আহতরা সে সময় কার্যালয়ের নিয়মিত ব্রিফিং কক্ষেই অবস্থান করছিলেন। তাই তাদের সঙ্গে কথা বলার পর সেখানে থাকা সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। এ সময় তাদের সঙ্গে আমাকেও বসতে বললে, সে পরিস্থিতিতে তাদের সঙ্গে আমিও অংশ নেই। এর বাইরে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে আমি আর তেমন কিছু জানি না।

এ ঘটনায় রাতেই বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে, নয়াপল্টনে মহাসমাবেশে পুলিশের হামলা, টিয়ারগ্যাস ও গুলির পর সন্ধ্যায় বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দিয়ে যিনি সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রেখেছেন তা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দৃষ্টি গোচরে এসেছে। এ বিষয়ে বিএনপি একেবারেই অবগত নয় এবং এই ব্যক্তির বিষয়ে দূতাবাস থেকে কোনো রকম পূর্বধারণা মহাসচিবকে অবগত করা হয়নি, বিধায় বিএনপি তার বক্তব্যের বিষয়ে কোনোভাবেই অবহিত নয়।