ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে নতুন পরিকল্পনা

সরকারি স্থাপনায় থাকছে বাড়তি নিরাপত্তা

সরকারি স্থাপনায় থাকছে বাড়তি নিরাপত্তা

বিএনপি-জামায়াত ইসলামীর ডাকা অবরোধে সড়ক, রেল ও নৌপথের যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। সরকারি গাড়ি বন্ধ থাকছে না। জনপ্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়, থানা ও বিদ্যুৎ বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত ইসলামীসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংসতা এবং পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে লোকোমাস্টার ও সহকারী লোকোমাস্টারদের নিরাপদ রাখতে অবরোধ চলাকালে হেলমেট পরে ট্রেন চালাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতিটি ট্রেনের লোকোমাস্টার ও সহকারী লোকোমাস্টাররা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে হেলমেট পরে ট্রেন চালাবেন। এদিকে সড়ক-নৌপথে পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহণ চালানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি। দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক এবং বাজারে পণ্য সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে পণ্যবাহী গাড়ির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারনেট, প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ সব প্রতিষ্ঠানকে হরতাল-অবরোধের আওতার বাইরে রাখার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি-জামায়াত ইসলামী অবরোধের ডাক দিয়েছে। ২৯ অক্টোবর হরতাল শেষ হতে না হতেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে দলগুলো। একদিন বিরতি দিয়ে আজ থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। অবরোধ কর্মসূচি অর্থ হচ্ছে- সব কিছু খোলা থাকবে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হবে। গণমাধ্যম, ফায়ার সার্ভিস, চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ জরুরি সেবাগুলো ছাড়া আর সব ধরনের সরবরাহ চেইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে। এক শহর থেকে আরেক শহরে কিংবা এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় পরিবহণ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করবে বিএনপি-জামায়াত ইসলামীসহ কয়েকটি দল। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে সরকারও পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ থেকে টানা তিন দিন সারা দেশে সড়ক-রেল-নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির ব্যাপারে জরুরি আলোচনা করার জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মালিক-শ্রমিকদের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিএনপির ডাকা মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবারের অবরোধ উপেক্ষা করে ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহণ চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে মোতাবেক আজ থেকে টানা তিন দিন ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহণ চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য সারা দেশের পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের অনুরোধ জানানো হয়।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা হিটলার বল জানান, বাস চলবে। সরকারি গাড়ি কোনো অবরোধ বা হরতালে বন্ধ থাকে না। অবরোধ কেন্দ্র করে জনগণের উদ্দেশ্যে পুলিশ সদর দপ্তর বার্তা দিয়েছে। দেশের কোথাও কোনো নাশকতার তথ্য থাকলে জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে জানানোর অনুরোধ করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এর আগে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে এক পুলিশ নিহত এবং ৪১ জন আহত হয়। মহাসমাবেশের দিনে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সহিংসতার ঘটনায় ৩৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৫৪৪ জনকে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সব রুটে বাস চলবে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ প্রশাসক সহযোগী অধ্যাপক ড. সিদ্ধার্থ ভৌমিক। তিনি বলেন, সব চালকদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব রুটে যথাসময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ চলবে। এছাড়াও দুপুরের সার্কেল বাসও যথাসময়ে চলবে। দূর থেকে আসা এসব বাসের বিষয়ে পরিবহণ প্রশাসক বলেন, দূর থেকে আসা বাস চালকদের অবস্থা বুঝে গাড়ি চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উত্তর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকাণ্ড যথা নিয়মে পরিচালিত হবে। আর সড়কে বিশ্ববিদ্যালয় বাসগুলোর যেন কোনো ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ডাকা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেছেন, হরতাল বা অবরোধ যা-ই হোক, পুলিশ জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় যা যা প্রয়োজন সেই ব্যবস্থা নেবে। সব বিষয় মাথায় রেখে আমরা আমাদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছি। সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই, তবে নাশকতা যে করবে সমসাময়িক কর্মকাণ্ড তাই ইঙ্গিত দিচ্ছে। কারণ নাশকতার বিষয়ে যে তাদের অ্যাটিচিউড, সেটা আসলেই বলা যায় অবিশ্বাস্য রকমের। কাজেই সেই শঙ্কা তো আমাদের আছেই। নিরাপত্তা পরিকল্পনা আমাদের সেভাবেই আছে।

নগরবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন, দায়িত্বের জায়গা থেকে সবাইকে অনুরোধ করি, সবাই যেন খেয়াল রাখেন। নিজ নিজ এলাকায় নাশকতার চেষ্টা হচ্ছে কি না, কারা নাশকতা করছে সে ব্যাপারে আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত