শনিবার আবারো দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসছে ইসি

তত্ত্বাবধায়কের দাবি ছাড়া শর্তহীন সংলাপে আসতে পারে বিএনপি

প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্যদিকে সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলো শর্তহীনভাবে সংলাপে বসবে বলে আশা প্রকাশ করছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। ফলে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবি করেছিল, সে শর্ত থেকে বেরিয়ে এসে সংলাপে বসতে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, বিএনপিসহ সব দলকে সংলাপের অমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। আগামী শনিবার ইসি দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ বসবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত শর্তহীন সংলাপের কথা বলেছেন। ফলে দেশের স্বার্থে বিএনপি সংলাপে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইসি সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি। চলতি মাসের প্রথম দিকে তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারি মাসের শুরুতে ভোট করতে চায় ইসি। ভোটে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এর অংশ হিসেবে আবারও সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে।

এদিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্ধারিত পদ্ধতির মধ্যে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা সেই ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে অবস্থানে আছি।’

সিইসি বলেন, ‘পরিবেশ প্রতিকূল হলে নির্বাচন করা হবে না, এই ধরনের কোনো ভুল বোঝাবোঝি যেন জনগণের মধ্যে না থাকে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্বাচন নির্ধারিত পদ্ধতির মধ্যে এবং সময়ের মধ্যে অবশ্যই অনুষ্ঠিত হবে। আমরা সেই ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে অবস্থানে আছি।’

বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘পিটার হাস নির্বাচনি পরিবেশ কেমন, সেটা জানতে চেয়েছেন। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা স্পষ্ট করে বলেছি- আমাদের হাতে কোনো অপশন নেই। নির্বাচন কমিশনকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন অপশন থাকে। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেও পারে, আবার নাও করতে পারে। তারা এককভাবে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে, আবার জোট করেও নির্বাচন করতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বিভিন্ন ধরনের অপশন আছে, কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সেই ধরনের কোনো অপশন নেই।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য। অনেক সময় নির্বাচনের অনুকূল, প্রতিকূল পরিবেশ নিয়ে কথা ওঠে। এগুলো খুব অর্থবহ। নির্বাচনের জন্য অনুকূল হোক বা প্রতিকূল হোক, আমাদের প্রত্যাশা হলো যত বেশি অনুকূল পরিবেশ থাকবে, আমরা শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশা করি, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরিবেশ অনুকূল করে তুলবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পিটার হাস বিশ্বাস করেন, সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধান হবে। এই কথাটা আমরাও বলে এসেছি এবং বিশ্বাস করি। রাস্তায় শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে সমাধান হবে বলে আমরা মনে করি না। পিটারও তাই বলেছেন। তিনিও বলেছেন রাজনৈতিক দলগুলোকে এক টেবিলে বসে চা চক্রের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হবে।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেন, সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলো শর্তহীনভাবে সংলাপে বসবে বলে আশা করছি। তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ খুঁজে নেবে বলেও তিনি মনে করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা নির্বাচনে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা চাই। তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা রাজনৈতিক দল, সরকার, ভোটার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম এবং অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ত্ব। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অবমূল্যায়ন করে- এমন যেকোনো প্রতিক্রিয়া; ভোটাধিকার প্রয়োগ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধা প্রদান, সহিংসতা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। পিটার হাস বলেন, ‘যেকোনো পক্ষের রাজনৈতিক সহিংসতা গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কোনো স্থান নেই। আমি আশার করি, সবপক্ষ শর্তহীনভাবে সংলাপে বসে সামনের দিকে এগোবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ খুঁজে নেবে।’

পিটার হাস বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনকালে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়া ভোটগ্রহণের বেশ আগে থেকেই শুরু হয়। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে সরকার, রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ভোটার, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব রয়েছে।’ পিটার হাস আরো বলেন, সহিংসতা, জনগণের জমায়েত ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার বাধাগ্রস্ত করা, ইন্টারনেট অ্যাকসেস (অভিগম্যতা) বাধাগ্রস্ত করাসহ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে অবমূল্যায়ন করে এমন যেকোনো কাজ সুষ্ঠু নির্বাচনের সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।