হামাসের সুড়ঙ্গে ইসরাইলি সৈন্য

চলছে তুমুল লড়াই

প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামাসের বিশাল সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কের ভেতরে গোষ্ঠীটির সদস্যদের ওপর হামলা শুরু করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের এই উপত্যকায় বিশ্ব নেতাদের অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যানের পর ইসরাইলি সৈন্যরা সুড়ঙ্গে ঢুকে হামাস যোদ্ধাদের ওপর হামলা করেছে। গতকাল ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজার বিস্তৃত সুড়ঙ্গে ঢুকে সৈন্যদের হামলা চালানোর এই তথ্য জানিয়েছে। তিন সপ্তাহ আগে হামাসের যোদ্ধারা ইসরাইলে ঢুকে যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, তার প্রতিশোধে গোষ্ঠীটিকে গাজা উপত্যকা থেকে নির্মুলের লক্ষ্যে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে ইসরাইল। গাজায় ইসরাইলের সম্প্রসারিত স্থল হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে গাজায় হামাসের তৈরি বিশাল বিস্তৃত সুড়ঙ্গকে।

গত ৭ অক্টোবর গাজার ক্ষমতাসীনগোষ্ঠী হামাস ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলের একটি সংগীত উৎসবে ঢুকে দুই শতাধিক মানুষকে হত্যা করে। একই সময়ে হামাসের হাজার হাজার যোদ্ধা ইসরাইলের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে হামলা চালায়। এই হামলার প্রতিশোধে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকাজুড়ে নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে আসছে।

এক বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, গত দিন আইডিএফের যৌথ বাহিনীর সদস্যরা গাজায় হামাসের প্রায় ৩০০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট ও অন্যান্য গোলাবারুদ ব্যবহার করা হয়েছে। গাজার সুড়ঙ্গে হামাসের সামরিক স্থাপনাগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করার দাবি করেছে ইসরাইল। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামাসের যোদ্ধারাও ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও বন্দুক থেকে গুলি ছুড়েছে। আইডিএফ বলেছে, ‘সৈন্যরা হামাসের যোদ্ধাদের হত্যা করেছে এবং বিমান বাহিনীকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ও অবকাঠামোতে রিয়েল-টাইম হামলার নির্দেশ দিয়েছে।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা গাজায় হামাসের সুড়ঙ্গজুড়ে তুমুল সংঘর্ষ চলছে বলে জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ইসরাইলি সৈন্যরা গত সোমবার গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণমুখী একমাত্র প্রধান সড়কটিকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। একই সময়ে দুই দিক থেকে গাজার প্রধান শহরে হামলা চালিয়েছে। গাজার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালিয়ে মোট ২৩৯ জনকে জিম্মি করেছে। তবে এই জিম্মিদের মধ্যে অন্তত চারজনকে এরইমধ্যে ছেড়ে দিয়েছে হামাস। জিম্মিদের অনেককে সুড়ঙ্গের ভেতরে হামাস আটকে রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাশেম ব্রিগেডস বলছে, গতকাল সকালের দিকে দক্ষিণ গাজায় আক্রমণ চালানো ইসরাইলি সৈন্যদের সঙ্গে হামাস যোদ্ধাদের তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। স্থানীয়ভাবে তৈরি হামাসের ট্যাংক-বিধ্বংসী আল ইয়াসিন-১০৫ ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট এবং বন্দুকের গুলি ছুড়ে ইসরাইলি সৈন্যদের সঙ্গে লড়াইয়ের দাবি করেছে হামাস।

এ সময় হামাসের যোদ্ধারা দক্ষিণ গাজায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর অন্তত চারটি যানকে লক্ষ্যবস্তু করেছে বলে জানিয়েছে আল-কাশেম ব্রিগেডস। হামাসের এই সশস্ত্র শাখা বলছে, গাজার উত্তর-পশ্চিমে ইসরাইলি দুটি ট্যাংক ও বুলডোজারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। তবে গাজায় হামাসের বিশাল সুড়ঙ্গের ভেতরে ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে হামাস যোদ্ধাদের সংঘর্ষের তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ছাড়া ইসরাইলি সামরিক বাহিনীও এই সংঘর্ষের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য জানায়নি।

গাজায় সীমিত ত্রাণ দিয়ে মানবিক চাহিদা মেটানো সম্ভব নয় : জাতিসংঘ : ফিলিস্তিন শরণার্থীবিষয়ক জাতিসংঘ সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) সতর্ক করে বলেছে, গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের নজিরবিহীন মানবিক চাহিদা মেটাতে যে সীমিত সংখ্যক ত্রাণ বহর পাঠানো হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল। ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজারিনি গাজা ও মিসরের মধ্যে একমাত্র সীমান্ত ক্রসিংয়ের কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, ‘রাফাহ দিয়ে মুষ্টিমেয় ত্রাণ বহরকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এসব ত্রাণ গাজায় আটকেপড়া ২০ লাখেরও বেশি মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই নয়।’ জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানান, রোববার খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী এবং খাবার পানি নিয়ে ৩৩টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। যুদ্ধের আগে প্রতিদিন ত্রাণসামগ্রী এবং অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে প্রায় ৫০০টি ট্রাকা গাজায় প্রবেশ করত।

ইসরাইলি হামলায় গাজায় প্রতিদিন হতাহত ৪২০ শিশু : টানা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের সংঘাত চলছে। সংঘাতের শুরু থেকেই অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, ইসরাইলি হামলায় গাজায় প্রতিদিন হতাহত হচ্ছে ৪২০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি শিশু। এমন তথ্যই সামনে এনেছে জাতিসংঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকারবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।