ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিএফইউজে’র প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

সাংবাদিক পিটানোর জবাব বিএনপিকে দিতে হবে

* আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অত্যন্ত দুঃখজনক * ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন মালিকদের দায়িত্ব * সাংবাদিকদের জন্য প্লট বরাদ্দের পরিকল্পনা
সাংবাদিক পিটানোর জবাব বিএনপিকে দিতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২৮ অক্টোবর সমাবেশ নামে পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার জবাব বিএনপিকে দিতে হবে। যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে অমানবিক এবং ন্যক্কারজনক। এত অমানবিক আচরণ একটা রাজনৈতিক দলের হয় না।

গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) আয়োজিত প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব একথা বলেন। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সাংবাদিক নির্যাতন ও পুলিশ হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দাও জানান শেখ হাসিনা। ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিকদের পাশে থাকার বিষয়ও সবাইকে আশ্বস্ত করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের বলব, এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং দায়িত্ব পালনকালে আপনাদের ওপর যারা আক্রমণ করেছে, তাদের আসল চরিত্র আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরা উচিত। কোনো কোনো পত্রিকা এটাকে আবার কভার দেয়ারও চেষ্টা করেছে। তাদের ধিক্কার জানাই। সেদিন গায়ের জ্যাকেটে ‘প্রেস’ স্টিকার লাগিয়ে যুবদল কর্মীরা সন্ত্রাস ও অগ্নিসংযোগে অংশ নেয়। প্রকাশ্যে যারা এ ধরনের অপকর্ম করেছে তারা ধরা পড়ে গেছে। সাংবাদিক নির্যাতন ও পুলিশ হত্যার শাস্তি এদের পেতেই হবে।’

তিনি বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রাম আমরাও করেছি। আন্দোলনের নামে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অত্যন্ত দুঃখজনক। ২৮ অক্টোবর সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি ও আরো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল, আমরা বাধা দিইনি। তারা কথা দিয়েছিল শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে। দেখা গেল তারা সেখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। সাংবাদিকদের টার্গেট করে তাদের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন চালানো হয়েছে, এটা অমানবিক। সাংবাদিকদের মাটিতে ফেলে পেটানো হয়। এটা কেন করা হলো- সে প্রশ্নের জাবাব বিএনপিকে দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের ওপর অত্যাচার হলো, যা এর আগেও আমরা দেখেছি। পুলিশকেও মাটিতে ফেলে পেটানো হয়, অচেতন হয়ে যাওয়ার পরও মারা হয়। তাদের কোপানো হয় এবং ঢিল মারা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে তারা শান্তি সমাবেশ করতে এসে এই ইট পাথর, অস্ত্র¿ কোথায় পেল? তারা যে কোপাল, সেটা (ধারাল অস্ত্র) কোথায় পেল? তার মানে তাদের উদ্দেশ্যটাই আগাগোড়া খুব খারাপ ছিল। অগ্নিসন্ত্রাস এবং জ্বালাওপোড়াও এটাই এদের চরিত্র। নির্বাচন ঠোকানোর নামে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে এরকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং অগ্নিসন্ত্রাস তারা করেছিল। সেখানে নির্বাচন তারা ঠেকাতে পারেনি নিজেরাও অংশগ্রহণ করেনি। হত্যা, খুন, গুম এগুলোই তারা খুব ভালো পারে।

বিএনপির নৈরাজ্যকে ইসরাইলের আগ্রাসনের সঙ্গে তুলনা করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘ফিলিস্তিনে যেভাবে হাসপাতালে হামলা হয়েছে, এখানেও। জানি না তারা এই শিক্ষাটা ইহুদিদের থেকে পেয়েছে কি না। সেদিন পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে হামলা, অত্যাচার-নির্যাতন, অ্যাম্বুলেন্স পোড়ানো, রোগিবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে ধাওয়া করা ও হামলা করে বিএনপি। এতটা অমানবিক আচরণ কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারে না। বাংলাদেশে এদের কোনো অধিকার নেই।

যারা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে, তাদের কোনো অধিকার নেই। তারা এদেশের মানুষের কল্যাণ চায় না। এদেশের মানুষের তারা শত্রু, এটাই আমি মনে করি।’

সুশীল সমাজের কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো সামান্য কিছু হলেই বিবৃতি দেয়। এখন তারা কোথায়? আমাদের দেশের সুশীল বাবুরা কোথায়? শুধু আওয়ামী লীগে কিছু হলেই বড় করে দেখায়? মানবাধিকার সংগঠনগুলো চুপ কেন? এদের বিবেক বলে কিছু নেই? আওয়ামী লীগের পান থেকে চুন খসলেই তাদের কণ্ঠে অনেক জোর দেখা যায়। এখন বিড়ালের মতো মিউ মিউ করলেও তো দেখতাম। তাও তো দেখা যাচ্ছে না।’ বিএনপির আমলে জাতীয় প্রেসক্লাবে পুলিশ দিয়ে সাংবাদিকর ওপর বর্বর নির্যাতনের কথাও এ সময় স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ওয়েজ বোর্ড গঠনে ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি লক্ষ্য রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, সাংবাদিকদের জাতীয় পেনশন স্কিমের চারটি ধাপের যেকোনটি বেছে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে চাকরির পর বা দুর্যোগ-দুর্বিপাকে নিজের ও পরিবারের কাজে লাগে। যারাই যে কাজ করেন না কেন; তাদের একটি অবসরভাতার ব্যবস্থা সরকার এই পেনশন স্কিমে করে দিয়েছে।

সাংবাদিকদের জমি-সংক্রান্ত তার নিকট আবেদন দেয়ার বিষয়ে বলেন, ‘একটা জমির আবেদন দিয়েছেন আমি দেখব। জেলাভিত্তিক আবাসন প্রকল্প তৈরি করে দেব। সেখান থেকে আপনারা আবাসন যাতে পান, সে ব্যবস্থা করব। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে আবাসন সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে, সেখানে সাংবাদিকদেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেখান থেকে বিধি মোতাবেক এককালীন একটা টাকা দিয়ে এবং মাসিক দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে সাংবাদিকরা কোনো ফ্ল্যাট চাইলে নিতে পারেন।’

পাশাপাশি সাংবাদিকদের জমি বরাদ্দের বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে যে আবেদন করা হয়েছে, তার জন্য বিধিমোতাবেক যথাযথভাবে জমি প্রদানের ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

নিজের সীডমানি দিয়ে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট করে দেয়ার প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ১০ কোটি টাকা অনুদান প্রদানের ঘোষণা দেন এবং গণমাধ্যমের মালিক এবং সাংবাদিকদেরও কিছু কিছু করে সেখানে অনুদান জমা করার অনুরোধ জানান তিনি। ১৯৯৬ সালে সরকারের বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার মাধ্যমে মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করি। দেশে এখন যত সংবাদপত্র রয়েছে, উন্নত দেশেও এতটা নেই। এর বাইরেও দেশে বর্তমানে ৩৩টি বেসরকারি টেলিভিশন সম্প্রচারে আছে। আরো ১৫টি সম্প্রচারের অপেক্ষায় বলে জানান তিনি।

‘বাংলাদেশে পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা উচ্চমানের এবং এ পেশা মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আছে’- উল্লেখ করে শেখ হাসিনা সম্পর্কে বলেন, ‘ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন মালিকদের দায়িত্ব। কিন্তু সেটা না করে তারা যদি এখন মামলা করে, সেটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। নবম ওয়েজ বোর্ড করা হয়েছে এবং ১০ম ওয়েজ বোর্ডের প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচন খুব সামনে এবং নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর সরকারের রুটিন ওয়ার্ক ছাড়া তেমন কিছু করার থাকে না। ১০ম ওয়েজ বোর্ডের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে, এই ব্যবস্থাটা আমরা নেব। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদেরও এর আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এছাড়া সাংবাদিকদের কল্যাণে ‘গণমাধ্যম কর্মী চাকরি শর্তাবলী আইন’ প্রণয়নের চিন্তা-ভাবনাও সরকারের রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা নিজেও সাংবাদিক ছিলেন। যার কারণে আপনাদের মাঝে এলে আমি দাবি করি, আমি আপনাদেরই পরিবারের একজন। সাংবাদিক কলাকুশলীদের যাতে কর্মসংস্থান হয়, সেজন্য সব কিছু বেসরকারিভাবে উন্মুক্ত করে দিয়েছি।

তথ্য অধিকার আইন, তথ্য কমিশন ও জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০১৭, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ করেছি। আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে এ ধারা অব্যাহত রাখতে ‘নৌকা’ মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য ও সবার প্রতি অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রতিনিধি সম্মেলনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সহ-সভাপতি মধুসুদন মন্ডল শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। পরে সবাই দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দীপ আজাদ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি ও মহাসচিবদের অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেয়া হয়। প্রবীণ সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, আব্দুল জলিল ভুঁইয়া, শাবান মাহমুদ এবং ওমর ফারুক প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন। এছাড়া সারাদেশ থেকে আগত ১৩টি সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা এ সময় বক্তব্য দেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত