সংসদে সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী

মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেমন বাংলাদেশ চায় তারা

যে হাত দিয়ে গাড়ি পোড়াবে সেই হাত পুড়িয়ে দিন

প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

গত ২৮ অক্টোবরে বিএনপির সংহিসতার ঘটনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও দলটির সঙ্গে আলোচনা নাকোচ করে দিয়েছে। ওই সহিংসতার সঙ্গে যুক্তদের জানোয়ার অভিহিত করে তিনি বলেছেন, ‘জানোয়ারদের সঙ্গে বসার কথা কারা বলে- প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বলেন, দেশের মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কেমন বাংলাদেশ তারা চায়? উন্নত দেশ নাকি ধ্বংসের দেশ।’

গতকাল বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের সর্বশেষ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন।

সরকারের বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ যখন সারা দেশে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি, আর তখন আমরা কী দেখলাম- কথা নাই, বার্তা নাই; নির্বাচন হতে দেবে না। আর আমাকে পদত্যাগ করাবে, ক্ষমতা থেকে হটাবে। এই ঘোষণা দিয়ে গত ২৮ অক্টোবর যে তাণ্ডব বিএনপি করেছে সারা বাংলাদেশে; তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ভিডিও আমি সংসদে তুলে ধরতে চাই। সারা দেশের মানুষ যাতে দেখতে পারে, তারা কী করেছে।’ এরপর সংসদে ২৮ অক্টোবরের সহিংসতার একটি ভিডিওচিত্র দেখান প্রধানমন্ত্রী।

ভিডিও দেখানো শেষ হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে বাংলাদেশ আমরা উন্নত করেছি, বলেছিলাম দিনবদলের সনদ, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আর তারপর এই ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ। আর বক্তব্য দেওয়ার মানষিকতা নেই। এই রকম দৃশ্য, যারা বিচারপতির বাড়িতে আগুন দেয়, এর আগে প্রধান বিচারপতির দরজায় লাথিও মেরেছে এই বিএনপির নেতারা। পুলিশের ওপর হামলা, অ্যাম্বুলেন্সে রোগী যাচ্ছে, সেই অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ আর কি বিষৎস্য দৃশ্য। পুড়িয়ে মানুষ হত্যা শুধু নয়, মনে হচ্ছে গোটা দেশটাকেই এরা ধ্বংস করে দেবে। দেশবাসীর কাছে আমি এটাই জানতে চাই- কোন বাংলাদেশ চায় তারা। এই সন্ত্রাসী, এই জঙ্গি, এই অমানুষগুলো এদের সাথে কারা থাকে। আর তাদের সাথে বসা, এই জানোয়ারদের সঙ্গে বসার কথা কারা বলে? আমার কথা হচ্ছে জানোয়ারেরও একটা ধর্ম আছে, ওদের সে ধর্মও নাই। ওদের মধ্যে কোনো মানুষত্ব নাই। ওরা চুরি, লুণ্ঠন, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন ছাড়া কিছুই জানে না। ওদের নেতা থেকে শুরু করে সবই তো এইভাবে সৃষ্টি। সৃষ্টি যে করেছে সেই জিয়াউর রহমান আমার বাবা, মা, ভাই সব হত্যার সাথে জড়িত। আর খালেদা জিয়া তারেক জিয়া তো আমাকেই বারবার হত্যার চেষ্টা করেছে।’ সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কোন বাংলাদেশ তারা চায়? উন্নত দেশ নাকি ধ্বংস দেশ। বিএনপি-জামায়াত শুধু ধ্বংসই করতে পারে। বাংলাদেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আর যেন কেউ দেশকে নিয়ে খেলতে না পারে, দেশবাসীর কাছে সেই সহযোগিতা চাই। সাংবাদিকদের যেভাবে মেরেছে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। তারা তো বিএনপিরই কাজই করতো। গাড়ি পুড়িয়েছে, তাদেরকে সহযোগিতা দেব? যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে, তাদের ধরিয়ে দিন। যে হাত দিয়ে গাড়ি পোড়াবে, সেই হাত পুড়িয়ে দিন। দেশবাসীকেই ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করুন। এরা মুষ্টিমেয় লোক। উন্নয়ন অব্যাহত থাকুক, মানুষের অধিকার সুরক্ষিত থাকুক, সেটাই চাই।’ তিনি বলেন, ‘বারবার আমার ওপর আঘাত এসেছে। এখনো বারবার হামলা হচ্ছে। যেখানেই যাই সেখানেই মারার চেষ্টা করছে। এটা সংসদকে জানিয়ে রাখলাম। দেশের জন্য কাজ করছি। দেশবাসীকে আহ্বান করব, জনগণ শক্তির উৎস, জনগণের শক্তি নিয়েই আমি চলি। আমার শক্তি বাংলাদেশ, দেশের জনগণ। দেশের জন্য কাজ করি। কে কোন দল করে সেটা দেখি না। মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখি। ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমার লক্ষ্য। ৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব; কেউ থামাতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যখন দেশের মানুষকে আর্থসামাজিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, আইনগতভাবে তারা বিরোধী দল নয়। অর্থাৎ, বিএনপি বারবার মানুষকে পোড়ায়, সম্পদ ধ্বংস করে, আমরা দেশের উন্নতি করি, তারা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। ২৮ তারিখেও তারা পুলিশকে হত্যা করেছে। একইভাবে ২০১৩-১৪ সালে নির্বাচনের আগে ও পরে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আমরা বাংলাদেশকে উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছি। সারা বিশে^ কোভিড ভাইরাস ছিল। তখন আমরা প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হই। মাথাপিছু আয় বাড়িয়েছি। মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশ। আমরা সেটা নামিয়ে এনেছিলাম ৫ শতাংশে। করোনার সময়েও আমরা বাজেট বাড়িয়েছি। জিডিপির আকার ৫০ কোটি ৩১ লাখ টাকায় উন্নতি করেছি। ডিজিপির তুলনায় সারা বিশ্বের ৩৫তম অর্থনীতির দেশ। বৈদেশিক মুদ্রা ছিল ১ মিলিয়ন ডলারের নিচে। সেটা ৩৬ মিলিয়ন ডলারের বাড়িয়েছিলাম। হ্যাঁ, এখন ওঠানামা করেছে। আমাদের খাদ্যপণ্যসহ নানা জিনিস কিনতে হয়। দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১, সেটা কমিয়ে এনেছি। অতি দারিদ্র্যের হার কমিয়ে এনেছি। মানুষের আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছি।’ এ সময় বিভিন্ন উন্নয়নসহ গ্রামীণ সড়ক, অবকাঠামোর কথা তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।

সহিংসতা পরিহার করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আহ্বান রওশনের : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহিংসতা পরিহার করে রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। রওশন এরশাদ বলেন, ‘আমরা এখন একটি সাংবিধানিক ট্র্যাকে এসেছি যে, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। সেই নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু হতে হবে। অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হতে হবে। অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। এটা আমরা সবাই চাই। সেটা আমাদের সবার লক্ষ্য। আশা করছি, সবার অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে। গত রাতে একাদশ সংসদের শেষ কার্যদিবসে সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদ সব রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। সংসদকে প্রাণবন্ত, অংশগ্রহণমূলক ও কার্যকর করতে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল সব সময় আন্তরিক এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা প্রতিটি অধিবেশনে যোগদান, আইন প্রণয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, গঠনমূলক সমালোচনাসহ বিভিন্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছে। জনস্বার্থে বিভিন্ন দিক এই সংসদে তুলে ধরেছে। গণতন্ত্রের সূতিকাগার হলো জাতীয় সংসদ। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় আইনসভা বা পার্লামেন্টের অভ্যন্তরে বিরোধীদলের অস্তিত্ব অপরিহার্য। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা, চাওয়া-পাওয়া ও প্রয়োজন-প্রত্যাশা সংসদে তুলে ধরা ও সরকারের কাজের ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরার জন্য বিরোধীদল আবশ্যক। জনমত ও জনপ্রত্যাশা উপেক্ষা করে সরকার নিজের ইচ্ছা মতো পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হলে তার প্রতিবাদ করা বিরোধীদলের দায়িত্ব। বিরোধীদলের প্রধান কাজ শুধুমাত্র সরকারের সমালোচনা করা নয়। বিরোধীদল মূলত গঠনমূলক ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে সংসদকে পরিচালনা করে থাকে বলেই বিরোধী দল সরকারের সাহায্য ও সহযোগিতা করতে পারে। অতীতের যে কোনো সংসদের তুলনায় দশম ও একাদশ সংসদ অনেক কার্যকর। বর্তমান সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি শুধু বিরোধিতার জন্য সরকারের বিরোধিতা করে না, তারা সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা এবং খারাপ কাজের সমালোচনা করে প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে।