নিয়ম লঙ্ঘন করায় বাড়ছে দুর্ঘটনা

নৌ-সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিয়ে চলছে লাইটার জাহাজ

প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম থেকে সারা দেশের অভ্যন্তরীন নৌপথে ঝুঁকি নিয়ে চলছে শত শত লাইটার জাহাজ। সমুদ্রপথেও চলছে বিপুল লাইটার জাহাজ। নিয়ম লঙ্ঘন করে চলাচলের কারণে একের পর এক জাহাজ সাগরে ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। চলতি বছর একাধিক রাইটার জাহাজ দুর্ঘটনায় পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে অধিকাংশ লাইটার জাহাজের বেক্রসিং সনদ বা সমুদ্রসীমা অতিক্রম সনদ নেই। এসব লাইটার জাহাজ দিব্যি নদী থেকে প্রবেশ করছে সমুদ্রপথে। আবার আবহাওয়া বিভাগের সতর্কতা সংকেত উপেক্ষা করে উত্তাল সাগরে জাহাজ চালানোর ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। চলতি বছর অন্তত চারটি লাইটার জাহাজডুবি এবং কয়েক কোটি টাকার পণ্য সাগরে ভেসে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলে ডুবে থাকা জাহাজগুলো বড় জাহাজসহ অন্য লাইটার জাহাজগুলোর জন্য দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে দাঁড়িয়েছে। জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার টন পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। আমদানিকৃত পণ্যের একটি বড় অংশ লাইটার জাহাজে পরিবহন করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানকারী মাদার ভ্যাসেল বা বৃহদাকার জাহাজ থেকে পণ্য নিয়ে লাইটার জাহাজের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, যশোরসহ বিভিন্ন নৌরুটগুলোতে চলাচল করতে লাইটার জাহাজগুলোকে সাগর পাড়ি দিতে হয়। বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেওয়ার সক্ষমতা অধিকাংশ লাইটারেজ জাহাজের নেই। এসব জাহাজকে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর বে ক্রসিং বা সমুদ্রসীমা অতিক্রম সনদ দেয় না। কিন্তু সনদবিহীন লাইটার জাহাজগুলো দেদার চলছে সাগর পথে। এতে বেড়ে যায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি। নৌবাণিজ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, আবহাওয়ার তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হলে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর এবং লাইটার জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল উত্তাল সাগরে জাহাজ না চালানোর ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়। সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রেও দেওয়া হয় বিশেষ নির্দেশনা। কিন্তু এসব না মেনে অনেক জাহাজ যাত্রা করে। এসব জাহাজই মূলত দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সাগরে ডুবে গিয়ে পুরো নৌরুটকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। প্রায় সময় উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপের পাশাপাশি মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় সাগর উত্তাল থাকে। এ সময় চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়। আর ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেতে এসব জাহাজের চলাচলে সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু লাইটার জাহাজগুলো নিষেধ অমান্য করে কোটি কোটি টাকার পণ্য নিয়ে চলে ঝুঁকিপূর্ণ নৌ ও সমুদপথে। এতে প্রায় সময় দুর্ঘটনায় পড়ে জাহাজগুলো। চলতি বছর চারটি জাহাজ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর এলাকাসহ বিভিন্ন নৌ ও সমুদ্রপথে। এর মধ্যে সম্প্রতি ভাসানচরের কাছে ডুবেছে কয়লাবোঝাই একটি জাহাজ। কুতুবদিয়ার অদূরে গভীর সাগরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ভাসতে থাকা অপর একটি জাহাজকে কোস্ট গার্ড উদ্ধার করেছে। উদ্ধার করা হয় জাহাজটির ১৪ নাবিককে। আবহাওয়া বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, সতর্কতা সংকেত অনুসরণ না করে অনুমোদন ছাড়া লাইটারেজ জাহাজ চলাচল করলে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি থাকেই। এতে দেশের অভ্যন্তরীন নৌরুট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। শুধু রাতে নয়, দিনেও জাহাজ চলাচল হুমকির মুখে পড়ছে। সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার অনুমোদন না থাকা জাহাজের চলাচল বন্ধ করতে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও জাহাজগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের এক কর্মকর্তা জানান, আমাদের নিয়ন্ত্রণে এবং সিরিয়ালে যেসব জাহাজ চলাচল করে সেগুলোর কাগজপত্র এবং সক্ষমতা যাছাই বাছাই করে বরাদ্দ দিই। কিন্তু যেসব জাহাজ আমাদের তালিকাভুক্ত নয় সেসব জাহাজ নিয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না। আমরা মনে করি এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।