দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

তপশিল ঘোষণার পথে ইসি

প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এখন ভোটের তপশিল ঘোষণার পথে ইসি। এ সপ্তাহে যে কোনো দিন কমিশন সভা ডেকে তপশিলের সময় জানাবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এরই মধ্যে প্রধান বিচারপ্রতি ওবায়দুল হাসানের সঙ্গে দেখা করেছেন। আজ শনিবার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসবেন। আগামীকাল রোববার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তপশিলের চূড়ান্ত সম্মতি নিবে ইসি।

ইসি সূত্র জানায়, আজকের সংলাপে রাজনৈতিক দলের মতামতসহ সব বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অবহিত করবে ইসি। এরপর কমিশন সভা আহ্বান করে তপশিলের তারিখ দিবে। সে ক্ষেত্রে আগামী ১৩ নভেম্বর তপশিল হতে পারে বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে কমিশন সভার দিন। ইসি কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগে শেষবারের মতো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজ সংলাপে বসবে ইসি। এ লক্ষ্যে ৪৪টি দলকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

সকালে ২২টি ও বিকালে ২২টি দলকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দলগুলোর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা তাদের মনোনীত দুইজন করে প্রতিনিধিকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সংলাপে ইসির প্রস্তুতি সম্পর্কে দলগুলোকে অবহিত করা হবে। পরের দিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের কমিশন বঙ্গভবনে যাবেন। সেখানে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলবেন তারা। এর আগে নির্বাচনের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইসি।

সাংবিধানিকভাবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এরই মধ্যে নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। নভেম্বরে তপশিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারি শুরুতে ভোটগ্রহণ করবে ইসি।

নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথা অনুযায়ী ভোটের তারিখের আগে ৪৫-৬০ দিন সময় রেখে তপশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই, প্রত্যাহারের সময় ও প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারের জন্য সময় রাখা হয়। প্রচারণার জন্য সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহ। গত ১১টি সংসদ তপশিল ঘোষণার পর মনোনয়নপত্র জমা থেকে ভোটের তারিখ পর্যন্ত সর্বনিম্ন ৪২ দিন এবং সর্বোচ্চ ৭৮ দিন সময় রেখে তপশিল ঘোষণার নজির রয়েছে।

এদিকে নির্বাচন উপলক্ষ্যে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করেছে ইসি। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তরুণদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়ায় ভোটার সংখ্যা বেড়েছে ৫ লাখ ৪০ হাজার ১৯৩ জন। এ হিসেবে দেশে বর্তমানে ভোটা সংখ্যা দাঁড়াল ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৮৫২ জন।

গত বৃহস্পতিবার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করেছে ইসি। এ তালিকা অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে।

নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, তপশিল ঘোষণার অনুকূল পরিবেশ আছে। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী মেয়াদপূর্তির পূর্বের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ইসি সূত্রে জানা জানায়, এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যালট বক্স লাগবে ৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে ইসির হাতে আছে ২ লাখ ৬৭ হাজার। নতুন করে কেনা হয়েছে ৮০ হাজার। প্রথম লটে ৪০ হাজার ব্যালট বক্স পাঠানো হয়েছে। এর আগে রোডম্যাপ অনুযায়ী সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে ইসি।

নির্বাচনকালীন সময়ে যা করবে ইসি : নির্বাচনকালীন এ সময়ে ভোট সংশ্লিষ্টদের নিয়োগ, বদলি থেকে আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসির কর্তৃত্ব থাকায় আইন-বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তরে নির্দেশনা পাঠানো হবে।

এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ ও অন্যান্য বিষয় গুছিয়ে ভোটের সম্ভাব্য দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে কমিশন সভা ডাকা হবে।

টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে সিইসি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে তপশিল ঘোষণা করবেন। তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনসহ ভোটের সব ধরনের নির্দেশনা এবং দল, প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের নির্বাচনি আইন অনুসরণ ও ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানান হবে।