জেলহত্যা দিবসে আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস প্রতিরোধে জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান

প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  বিশেষ প্রতিনিধি

বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনগণকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।

গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জেলহত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাসের বীভৎস চেহারা আবার বেরিয়েছে। তারা পুলিশকে কীভাবে মারল? এরা কি মানুষ? এদের কি মনুষত্ববোধ আছে। তার (পুলিশ সদস্য) কী অপরাধ ছিল? ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালেও বিএনপি একই ঘটনা ঘটিয়েছে। এখন আবার অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে। আজকে বলব, সময় এসে গেছে, কারো জন্য অপেক্ষা না করে যেখানেই অগ্নিসন্ত্রাস সেখানেই সবাইকে প্রতিরোধ করতে হবে। জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংগঠিত হতে হবে যেন অগ্নিসন্ত্রাস করে একটাও পার না পায়। আর যদি কোনোটা ধরা পড়ে হাতেনাতে যে আগুন দিচ্ছে ওইটাকে ধরে সঙ্গে সঙ্গে ওই আগুনেই ফেলতে হবে। তার হাত পুড়িয়ে দিতে হবে। যে হাতে আগুন দেবে, ওই হাতই পোড়াতে হবে। তাহলেই তারা সোজা হবে, না হলে সোজা হবে না। যে যেমন, তেমন করতে হয়। ‘যেমন কুকুর, তেমন মুগুর’ দিতে হয়। তখন ওদের শিক্ষা হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, বিএনপি নির্বাচন চায় না। ওরা (বিএনপি) জানে, নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। মানুষ এখন তাদের প্রতি বিমুখ। তাই নির্বাচন বানচাল করে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। বিএনপি কাকে নিয়ে নির্বাচন করবে? নির্বাচন করলে তাদের নেতা কে? কাকে প্রধানমন্ত্রী করবে? কাকে দিয়ে মন্ত্রিসভা করবে? বিএনপি চেয়ারপারসন, সে তো এতিমের টাকা আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। আর এখন তো অসুস্থ। বিএনপি জানে নির্বাচন করলে ওরা কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না। ২০১৮ নির্বাচনে তো মাত্র ২৯টা সিট পেয়েছিল। এখন তাদের অপকর্মের জন্য মানুষ আরো বিমুখ।

তিনি বলেন, দুষ্কৃতিকারী কয়েকজনের লাফালাফিতে নির্বাচন বানচাল হবে না। তাদের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। তারা নির্বাচনে আসবে কি না, জানি না। এলেও আসবে, ওই নমিনেশন বাণিজ্য করতে। মনোনয়ন নিয়ে বিভাজন না করার জন্য সতর্ক করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ কথা ভাবলে চলবে না, ওরা (বিএনপি) তো আসবে না। একটা সিট না পেলে কী হবে! এ চিন্তা যেন কারো মাথায় না থাকে। এই চিন্তাই কিন্তু সর্বনাশ ডেকে আনবে। কাজেই আমি যেই সিদ্ধান্ত দেব, সেই সিদ্ধান্ত মানতে হবে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আবারও ভোটের মাধ্যমে সরকারে আসতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নমিনেশন সেটাতো আমি দেব। কারণ আমি বসে থাকি না। প্রতি ৬ মাস পরপর আমার একটা হিসাব থাকে।

সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন তো দুর্নীতির দায়ে জেলে। অসুস্থতা বিবেচনায় আমি তাকে বাসায় থাকতে দিলাম। একটা কুলাঙ্গার ছেলে তৈরি করে গেছেন জিয়াউর রহমান। ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও মানিলন্ডারিং মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। ২১ আগস্ট গ্রেনেডে হামলায় জড়িত, তাতে তো সন্দেহ নেই।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়কের আমলে মুচলেকা দিয়ে তারেক রহমান বিদেশ চলে যায়। এখন না কি ওখানে বসে জুয়া খেলে আর টাকা ইনকাম করে। আর ওখান থেকে জ্বালাও-পোড়াও করার নির্দেশ দেয়। বিএনপিতে আর কোনো নেতা নাই? ওই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে তারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছে।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনে কী হচ্ছে? হাসপাতালেও বোমা মারা হচ্ছে। নারী-শিশুরাও রক্ষা পাচ্ছে না। মা ভেবেছিলেন, সন্তান নিয়ে হাসপাতালে নিরাপদ থাকবেন। কিন্তু সেখানেও বোমা হামলা করছে ইসরাইলিরা। আমরা খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী পাঠিয়েছি। ঢুকতে দিচ্ছে না। পাশের দেশ মিশরে রেখেছি। আমাদের দেশে বিএনপিও হাসপাতালে হামলা করেছে। তারা ফিলিস্তিনের ইস্যুতে কোনো কথা বলে না। ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার নিন্দা না জানানোয় বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনের মানুষ কতটা দুর্দশার মধ্যে আছে। হামলায় কত মানুষ মারা যাচ্ছে। এ বিষয়ে বিএনপি চুপ করে আছে। তাদের কোনো প্রতিবাদ দেখেছেন? তারা কাদের পদলেহন করে বাড়াবাড়ি করছে? তারা কাদের স্বার্থ দেখে, এটাই আমার প্রশ্ন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশ। এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যেন বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে আমাদের যে নেতাদের আমরা হারিয়েছি তাদের কাছে আমাদের এটাই ওয়াদা, যে আপনাদের জীবন নিয়ে গেছে সত্যি। কিন্তু যে বাংলাদেশ আজকে জাতির পিতা ও জাতীয় চার নেতা রেখে গেছেন, আমরা এটুকু বলব, এই আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।

কারা মজুত করে জনগণের পকেট কাটার চেষ্টা করছে, তাদের খুঁজে বের করারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সবজি আমাদের দেশে উৎপাদন হয়। এটা বাজারে না এনে রেখে দেবে। দাম বাড়িয়ে দেবে। কারা মজুত করে জনগণের পকেট কাটার চেষ্টা করছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে।

১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড থেকেই হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্র শুরু হয় বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সেখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধ্বংস শুরু। জিয়াউর রহমান মুখে বলেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা। তিনি যদি মুক্তিযোদ্ধা হবেন, তাহলে তার আমলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিষিদ্ধ হয় কীভাবে?

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জাতীয় চার নেতা, যারা জাতির পিতার নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। এপ্রিল মাসের ১০ তারিখে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা মিলে বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। ১৭ এপ্রিল মুজিব নগরে শপথ নেন। মন্ত্রিপরিষদ গঠন হয়। সেখানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। এরপরই যুদ্ধ পরিচালনা করা হয়। যারা জাতির পিতার নেতৃত্বে এই যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন বা মন্ত্রিসভায় ছিলেন, বেছে বেছে তাদের হত্যা করা হয়।

সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল আমাদের জাতীয় চার নেতাকে। আজকে তার স্মরণ সভা। কারাগার সব থেকে নিরাপদ জায়গা, সেখানে গিয়ে নির্মম হত্যাকাণ্ড চালান হয়। এ হত্যার পেছনে চক্রান্তকারী খুনি মোশতাক। মোশতাকের মূল শক্তি ছিল জিয়াউর রহমান। তিনি ছিলেন এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পৃক্ত। মোশতাক-জিয়া চক্রান্ত করে যেমন জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করেছে, তারা চার নেতাকেও হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডে মোশতাকের সব থেকে নির্ভরযোগ্য লোক ছিল জিয়াউর রহমান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেল গেটে যে কেউ ঢুকতে পারে না। রাষ্ট্রপতি যখন হুকুম দেন, তখন খোলে। তারা বলেছিলেন, আলোচনা করবে। আলোচনার কথা বলে জেলে ?ঢুকেছিল। পরে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বিবরণ দিয়েছেন।

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাহজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন মায়া বীরবিক্রম, সিমিন হোসেন রিমি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি এমপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম যৌথভাবে আলোচনা সভার সঞ্চালনা করেন।