ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ

দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যের তাগিদ দিলেন শেখ হাসিনা

* ধ্বংস করা বিএনপির উৎসব * পোশাক শ্রমিকদের ধৈর্য ধরতে হবে * নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান
দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যের তাগিদ দিলেন শেখ হাসিনা

দলের নেতাকর্মীদের বারবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। যাতে করে ঘাতকের দল বিএনপি-জামায়াত যেন দেশের মানুষকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মারতে না পারে, অত্যাচার করতে না পারে, তার জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

গতকাল বিকালে রাজধানীর আরামবাগে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে আগারগাঁও-মতিঝিল মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচনে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সেটা আমরা ঠিক করে দেব। যাকে মনোনয়ন দেব, ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে তার জন্য কাজ করতে হবে। যেন আবারো আমরা দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি। এখনো অনেক উন্নয়নের কাজ বাকি, সেগুলো যেন সম্পন্ন করতে পারি। জনগণের কল্যাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যে দেশকে জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। সেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই আমাদের কাজ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে মানুষ নিরাপদে থাকে। এটাই হলো বাস্তবতা। আর বিএনপি কী করে, জনগণের ভোট চুরি। জনগণের অর্থ চুরি। জনগণকে হত্যা করা, সরকারি-বেসরকারি, সামরিক অফিসার তাদের চাকরি খাওয়া, তাদের ওপর নির্যাতন আর নানা ধরনের অপকর্ম করা। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই ২৮ অক্টোবর কী ঘটনা তারা ঘটাল। কোনো মানুষ যার ভেতরে এতটুকু মনুষ্যত্ব আছে, তারা কি পারে- ওই পুলিশ কী দোষটা করেছে। আমি তো পুলিশকে ধন্যবাদ জানাব যে তারা সেই দিন যথেষ্ট সহনশীলতা দেখিয়েছে। অথচ ওই পুলিশের ওপর বিএনপি হামলা করেছে। পুলিশ পেছনে হটে গেছে, তারপরেও এক পুলিশকে ধরে মাটিতে ফেলে যেভাবে তার ওপর লাঠিপেটা করেছে, মাথায় কুপিয়েছে, হেলমেটটা পরা ছিল খুলে ফেলে দিয়ে তারপর মাথায় কুপিয়েছে। পুলিশের হাসপাতাল রাজারবাগ ঢুকে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়েছে, সেখানে তাদের ওপর হামলা করেছে। আনসারের ওপর আক্রমণ করেছে। আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এমনকি বিশেষ করে মহিলা নেতাকর্মী তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করেছে। কারণ, তারা মিছিল নিয়ে আসছিল আমাদের শান্তি সমাবেশে। সেখানে বিএনপির গুণ্ডারা; গুণ্ডাই বলব, সন্ত্রাসীই বলব- আমাদের সেই মেয়েদের রাস্তার উপর ফেলে তাদের উপর অত্যাচার করেছে। আমি ধিক্কার জানাই, এটা কি রাজনীতি?

তিনি বলেন, আর পুলিশকে আজকে না, সেই ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫-তে ২৯ জন পুলিশ হত্যা করেছিল এই বিএনপি-জামায়াত। রাজশাহীতে মাটিতে ফেলে কীভাবে পুলিশ হত্যা করেছিল সেটা স্মরণ রাখা দরকার এবং একে একে তাদের ওপর যেভাবে গাইবান্ধা থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় এই পুলিশকে তারা হত্যা করে নির্যাতন করে। তারা কী দোষ করেছে। তারা তো চাকরি করে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেবে। আজকে অগ্নিসন্ত্রাস- এটাই বিএনপি-জামায়াতের চরিত্র। তারা কথায় কথায় আগুন দেয়। যাত্রী বাসে আগুন দেয়। ২৮ তারিখেও একটা হেলপার ঘুমিয়ে ছিল, সে জানেও না সেই বাসে আগুন দিয়ে তাকে হত্যা করেছে। আর সেই ১৩-১৪-১৫-তে সবার মনে থাকার কথা, ট্রাকে বাবা গেছে বাইরে পানি আনতে ছেলে ভেতরে, ওই অবস্থায় পুড়িয়ে দিয়েছে। সেই পোড়া শরীর নিয়ে সে কি চিৎকার। ট্রাকের ভেতর মানুষ পুড়ে কয়লা হয়ে আছে। এইভাবে কতশত মানুষকে তারা প্রায় ৩ হাজার ৮০০ মানুষকে পুড়িয়েছে। তারপর ৫০০ মানুষকে হত্যা করেছে, ৫২৫টি স্কুল পুড়িয়েছে, ৩ হাজার গাড়ি পুড়িয়েছে। শুধু গাড়ি না, ২৯টা রেল, সরকারি অফিস, ভূমি অফিস- এরা যেন জ্বালাও-পোড়াও, ধ্বংস করা এটাই যেন তাদের একটা উৎসব। এই হলো বিএনপির চরিত্র।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার প্রশ্ন তারা মানুষকে ভাত দিতে পারেনি, মানুষকে ঘর দিতে পারেনি, মানুষকে কাপড় দিতে পারেনি। তাদের আমলে বিদেশ থেকে পুরনো কাপড় এনে আমাদের দেশের মানুষকে পরাত। আর সেই মানুষগুলোর ওপর তারা এত অত্যাচার কীভাবে করে, কীভাবে করে? তাদের আন্দোলন হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাস, তাদের আন্দোলন হচ্ছে মানুষ খুন করা, তাদের আন্দোলন হচ্ছে ওই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর ওপর হামলা করা। আর সবকিছু ধ্বংস করা। কেন এভাবে ধ্বংস করবে? তাদের কে অধিকার দিয়েছে? তারা তো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে সৃষ্টি। কাজেই তাদের এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। আর এটা যদি বন্ধ না করে তাহলে কীভাবে বন্ধ করতে হয় সেটাও আমাদের জানা আছে। আমরা ছাড়ব না।

পোশাক শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে সরকার প্রধান বলেন, অন্যের কথায় নেচে কারখানায় হামলা করে, কারখানা ভেঙে, সেখানে অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশের ক্ষতি করলে, নিজেরই ক্ষতি হবে। আর কারখানা বন্ধ করলে গ্রামেই ফিরে যেতে হবে। বিনা কাজে জীবনযাপন করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছিল। এরপর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরেও বেতন বাড়ানো হয়েছে। যে কারখানা আপনাদের রুটি-রুজি দেয়, শ্রম দিয়ে পয়সা কামাই করেন, সেই কারখানা ভাঙচুর করলে আল্লাহও নারাজ হবেন। আপনাদের যা প্রয়োজন হয়, অসুবিধা আমরা দেখি।

এ সময় কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন তো কিছু করেনি। যা করেছে আওয়ামী লীগ সরকারই। আওয়ামী লীগ জানে মানুষের কষ্ট দূর করতে। মজুরি কমিশন বসেছে। ধৈর্য ধরতে হবে। কারা উসকানি দিচ্ছে সেটা আমরা জানি। যারা ভাঙচুরে জড়িত, বিএনপির নেতাকর্মীদের বলব হুকুমদাতা দেশেই থাকুক আর বিদেশেই থাকুক, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, আর ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ গ্রহণ করে হুকুমজারি করে, ওই বিদেশ থেকে ধরে এনে বাংলাদেশে শাস্তি দেব, ওই কুলাঙ্গারকে। কেউ ছাড়া পাবে না। তিনি বলেন, ঢাকাবাসীসহ আমি দেশবাসীকে আহ্বান করব, যারা এইভাবে আগুন দিয়ে পোড়াবে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। দরকার হলে তাদের ধরে ওই আগুনের মধ্যে ফেলতে হবে। যেই হাত দিয়ে আগুন দেবে সেই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে। তবেই তাদের শিক্ষা হবে। তারা সাধারণ মানুষের বাসে আগুন দেয়, গাড়িতে আগুন দেয়। কিন্তু তারা ভুলে যাচ্ছে, তাদের গাড়ি নেই? তারা গাড়িতে চড়ে না? তাদের জিনিসপত্র নেই? জনগণ যদি সেগুলো পোড়াতে শুরু করে তাহলে কোথায় যাবে, কী করবে সেটাও তাদের ভাবা উচিত। আমরা ওসবে বিশ্বাস করি না দেখে, এখনো ধৈর্য ধরে আছে দেশের মানুষ। কিন্তু কত দিন?

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া বলেছিলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা কোনোদিন বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবেন না। আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর। আজকে ওনার অবস্থা কী, কে কোথায় আছে। আমি জনগণের সেবা করতে চাই, দেশের উন্নয়ন করতে চাই। আমি দারিদ্র্য কমিয়ে এনেছি, খালেদার সময় দেশের ৪১ শতাংশ মানুষ দরিদ্র ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশ উন্নত হয়, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। ২১ বছর মানুষ ছিল অন্ধকারে। আমি ক্ষমতায় এসে ব্রিজ করেছি, রাস্তাঘাট করেছি, স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। দেশের উন্নয়নে আবারো আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে এ সময় নৌকায় ভোট চান শেখ হাসিনা।

সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের দিন ২৮ অক্টোবর ঢাকার মানুষ বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করেছিল। তারা আমাদের অশান্তিতে রাখতে চায়, সেজন্য ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাদের মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাবে। আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ২৮ অক্টোবর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বিএনপি। সেদিন বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন করা হয়েছিল। জনগণ বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আজকে মেট্রোরেলের উদ্বোধনে জয়জয়কার। এই আনন্দের মহাযাত্রায় আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও পুলিশের ওপর হামলা করে বিএনপি প্রমাণ করেছে, তারা সন্ত্রাসী দল। তাদের প্রতিরোধ করে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখা হবে। দলটির আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বিএনপি ২৮ অক্টোবর পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে। আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করে সরকার গঠন করবে।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য সাঈদ খোকন, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। যৌথভাবে সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ প্রমুখ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত