আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়া নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো। একই সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক এবং সুষ্ঠু ভোটের দাবি এসেছে তাদের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা হবে।
গতকাল নিবন্ধিত দলের সঙ্গে ইসি নির্বাচন প্রস্তুতি অবহিত করতে সংলাপে বসে। গতকাল ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ ২৬টি দল অংশগ্রহণ করে। বিএনপিসহ ১৮টি দল সংলাপে অংশগ্রহণ করেনি।
নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে জানিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানান সিইসি। নিবন্ধিত ২৬টি দলের মতামত খুবই ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি জানান, নির্বাচনের পরিবেশটা অনুকূল নয়, কিছু কিছু দল এখনও অংশ নিতে পারছে না। আমরা সেটা স্বীকার করেছি।
সংসদ নির্বাচনে সামনে রেখে ‘স্পেস ও টাইম’ সীমিত উল্লেখ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেনে, রাজনৈতিক দলগুলোর বিবদমান সংকট নিরসনে নির্বাচন কমিশনের কোনো ম্যান্ডেট নেই। দলগুলোকেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংকটের সমাধান করে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।
বিএনপিকে ভোটে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি। কেউ পছন্দ করুক বা না করুক। আপনারা আসুন। কীভাবে আসবে, সে কোর্সটা আমরা চার্ট করে দিতে পারব না। বিকালে আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে এ কথা জানান তিনি।
সিইসি জানান, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ সভার আয়োজন করা হয়েছে। এ যাবত প্রস্তুতি অবহিত করা, মতামত গ্রহণ করা ও আমরাও মতামত জানিয়েছি। ২৬টি দল আলোচনায় অংশ নিয়েছে। আলোচনা যথেষ্ট ইতিবাচক ছিল। তিনি বলেন, পরিবেশ নিয়ে কেউ কেউ বলেছেন; অধিকাংশই আমাদের অবস্থানটা বুঝেছেন; নির্বাচনের পরিবেশটা অনুকূল নয়, কিছু কিছু দল এখনও অংশ নিতে পারছে না। আমরা সেটা স্বীকার করেছি।
পরিবেশ অনুকূল-প্রতিকূল হওয়াটা আপেক্ষিক মন্তব্য করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আর রাজনৈতিক যে সংকটগুলো আছে, আমরা বলেছি সেগুলো সম্পর্কে আমাদের প্রত্যাশা সব সময় ইতিবাচক। কিন্তু সেই সংকট নিরসন করার সামর্থ্যটা আমাদের নেই বা আমাদের সে ম্যান্ডেটও নেই। আমরাও বলেছি- আপনারাও নিজেদের মধ্যে চেষ্টা করতে পারতেন। দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমস্যা নিরসনের দায়িত্ব নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি দলগুলোর উদ্দেশ্যে বৈঠকে বলেছেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি- আমাদের স্পেস এবং টাইমটা সীমিত। আমরা কিন্তু অনেক বেশি স্পেস নিয়ে কাজ করতে পারি না। আমাদের জন্য সময়সীমা সংবিধানে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আমাদের নির্বাচন করতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমাদের অবস্থান থেকে সবসময় বলে এসেছি- আমরা সব রাজনৈতিক দল, বিএনপিও; আমাদের আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে উনাদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি। কেউ পছন্দ করুক বা না করুক।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা আমাদের নির্বাচন করব। তাদের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান থাকেবে- আপনারা আসুন। কীভাবে আসবে, সে কোর্সটা আমরা চার্ট করে দিতে পারব না। আপনারা আসুন, আমাদের শুভ কামনা থাকবে। অংশগ্রহণ করে সফল হোক, সে শুভ কামনা থাকবে।
সংলাপে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল অব. ফারুক খান বলেন, বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে, সংবিধানের কোথাও এ কথা লেখা নেই। পৃথিবীর কোনো আইনেও লেখা নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমরা দেখেছি, নির্বাচনের সময় অনেক রাহজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না। সুতরাং সেব রাজনৈতিক দলের সক্ষমতা নেই, যাদের জনসমর্থন নেই, জনগণের প্রতি যাদের আস্থা নেই; তারা তো নির্বাচনে আসবেই না।
ফারুক খান বলেন, নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য নির্বাচন কমিশন যেসব পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, সরকার তাতে সহায়তা করছে। এরই মধ্যে সরকার থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য ৮২টি সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেগুলো ইসি বাস্তবায়ন করছে। এসবের প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে ব্যালট পেপারের পেছনে সিল এবং স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে নির্বাচন আরো অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। কমিশন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমাদের ব্রিফ করেছে। এর মাধ্যমে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আমরা আশা করছি।
বিএনপি কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছে, কিন্তু আবারো তারা শেষবারের মতো ইসির আলোচনায় এলো না। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিষয়টিকে আপনাপরা কীভাবে দেখছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি সহিংসতাপূর্ণ। এটাকে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি বলা যেতে পারে না। তারা সন্ত্রাসী দলের মতো কর্মসূচি দিচ্ছে। নির্বাচনের সময় যেকোনো রাজনৈতিক দল যদি অরজকতা সৃষ্টি করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের প্রতি ব্যবস্থা নিয়েছে এবং নিবে।
বিএনপির পার্টি অফিসে ইসির চিঠি রিসিভ করার জন্য একজন লোক পাওয়া যায়নি, এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান, আমি তো মনে করি, এটা বিএনপির জন্য লজ্জাজনক ব্যাপার। তারা অফিসে থাকবে না কেন? বিএনপি যে কর্মসূচি দিচ্ছে, এগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। এসব সহিংসতামূলক কর্মসূচি।
কয়েকদিন পর তপশিল হবে, এর মধ্যে বিএনপি যদি এ ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখে, এ নিয়ে ইসির কাছে কোনো শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসি নিজেই এটা জানে এবং কখন কী ব্যবস্থা নিতে হবে, সে ব্যাপারে ইসি অবগত রয়েছে। এরই মধ্যে ইসি এসব ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছে।
নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে, আওয়ামী লীগ এটা মনে করে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান বলেন, আমরা মনে করি, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ আছে। আগামীতে এটাপ আরো ভালো হবে।
তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার বলেছেন, নির্বাচনে জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য কমিশনকে আরো কাজ করতে হবে। তারা কতটা কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে, আমরা সেই পরিস্থিতি দেখছি। আমরা আগে পরিস্থিতি দেখব। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা নির্বাচনে আসব কি না সিদ্ধান্ত নেব।
তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা বলেছি, একটা গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার জন্য। এ নির্বাচনে জনগণ যেন আগ্রহী হয়। জনগণ যেন ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়। জনগণের যেন নিরাপত্তা থাকে।