দিনক্ষণ ধরে রাজনৈতিক কৌশল বদলাচ্ছে আওয়ামী লীগ 

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন নতুন কর্মসূচি দিয়ে মাঠ দখলের লড়াই করছে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলো। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে হরতাল-অবরোধদের মতো কঠোর কর্মসূচি পালন করছে সরকার বিরোধীরা। চলতি মাসের মাঝামঝি নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ উপলেক্ষ্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা সেরে নিয়েছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, বিরোধীদের আন্দোলন দিন-দিন তত সহিংস হয়ে উঠছে। এদিকে শর্তের জালে আটকে আছে সরকারের সঙ্গে বিরোধী দলগুলোর সংলাপ-সমঝোতা। জ্বালাওপোড়াও হচ্ছে। জনমনেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। টানা কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে বেকায়দা ফেলতে চাইছে বিএনপি ও তার মিত্ররা। তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে আন্দোলনে নিজেদের শক্তি ও সক্ষমতা জানান দিচ্ছে সরকারবিরোধী দলগুলো।

এমন উ™ূ¢ত পরিস্থিতিতে বিরোধীদের রাজনৈতিক আন্দোলন ব্যর্থ করার লক্ষ্যে দিনক্ষণ ধরে কৌশল বদলাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে স্বল্প পরিসরে বৈঠকে বসছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেই বৈঠক থেকেই পরবর্তী দিনের রাজনৈতিক কর্মকৌশল নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতারা সেই কৌশল তৃণমূলে পৌঁছে দিচ্ছেন। নির্দেশনা মোতাবেক কোমর বেঁধে কর্মসূচি পালন করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এতে করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো চাঙা হয়ে উঠছে।

জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত ও সরকারবিরোধী দলগুলোর আন্দোলন থেকে সহিংসতা ও আতঙ্ক যাতে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে না পরে, সেজন্য নতুন-নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে থাকার বার্তা দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে সংবিধানের আলোকেই জনসাধারণকে ভোটমুখী করতে কাজ করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব ও হটসঅ্যাপে গুজব ছড়িয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে দলটি। এজন্য গুজব মনিটরিং সেলকে আরো গতিশীল করার চিন্তা-ভাবনা করছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে দলটির গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) তত্ত্বাবধায়নে গুজব-অপতথ্যের বিরুদ্ধে ফ্যাক্ট চেকিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ৩০ জন ছেলেমেয়ে ফ্যাক্ট চেকিংযের কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সিআরআই’র সমন্বয়ক তন্ময় আহমেদ। তিনি বলেন, সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা-অপতথ্যের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে এরই মধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছেন সাইবার টিমের সদস্যরা। পাশাপাশি টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ যেসব উন্নয়ন করেছে, সেসবের চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। গুজব মনিটরিং সেলের জন্য দেশের প্রতিটি জেলায় ছয় থেকে ১০ জনের টিম তৈরি করার কথা ভাবছে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপকমিটি। ভোট কৌশলীরা মনে করছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় পেতে হলে আওয়ামী লীগকে মানুষের কাছে যেতে হবে। জনসাধারণের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার বিরুদ্ধে জনসাধারণকে সচেতন করা দরকার। জনসচেতনতাই পারে আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস-সহিংসতা রুখে দিতে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমাদের নির্বাচনি কাজ শুরু হয়ে গেছে। তপশিল ঘোষণার পর আরো গতিশীল হবে। আমাদের দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনি প্রস্তুতির পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সজাগ ও সতর্ক থাকার নির্দেশনাও দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটি সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের দল। জনসাধারণের নিরাপত্তা আর কল্যাণের কথা চিন্তা করেই রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করা হয়। নির্বাচন সামনে রেখে যাতে কোনো ‘রাজনৈতিক অপশক্তি’ জনগণের জানমালের ক্ষতি সাধন করতে না পরে, সেদিকে সব সময় লক্ষ্য রাখবে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে জনসাধারণকে সোচ্চার হতে হবে।