ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা

গার্মেন্ট মালিকদের স্বস্তি শ্রমিক পক্ষের প্রত্যাখ্যান

শুক্রবার পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ কর্মসূচি

প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

পোশাক শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে। ৮ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। যা আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। নতুন বেতন কাঠামো ‘ভালো হয়েছে’ বলছেন মালিকপক্ষ। তবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা; তারা ঘোষিত মজুরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে শ্রমিক-মালিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর বৈঠক শেষে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়। তবে সরকার নির্ধারিত নতুন মজুরি কাঠামো প্রত্যাখ্যান করেছে পোশাক শ্রমিক সংগঠনের একাংশ। সরকারের নেওয়া এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকালই পল্টনের তোপখানা রোডে মজুরি বোর্ডের সামনেই বিক্ষোভ মিছিল করে কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আগামী শুক্রবার আবারো পোশাপক শ্রমিকরা বিক্ষোভ কর্মসূচি করবে বলে জানা গেছে।

এর আগে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বেশ কয়েকদিন ধরে সড়কে বিক্ষোভ করেছে মিরপুর, সাভার ও গাজীপুরের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পোশাক শ্রমিকরা। তাদের দাবি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লেও বেতন বাড়েনি। কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করেও কোনো সুফল মেলেনি। তাই দাবি আদায়ে পথে নামে তারা। বিক্ষোভকালে রাস্তা অবরোধ, গার্মেন্ট ভবনে ইট নিক্ষেপ এবং কয়েকটি যাত্রী পরিবহণেও ভাঙচুর করেছে। তবে পোশাক খাতে এখন পর্যন্ত যতবার বেতন বেড়েছে, তার আগে প্রতিবারই আন্দোলন করতে হয়েছে শ্রমিকদের। শ্রমিক আন্দোলনে যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, তখনই গঠন করা হয়েছে মজুরি বোর্ড, বাড়ানো হয়েছে বেতন। গতবারের মতো এবারো শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে মজুরি বাড়ানো হয়েছে।

গতকাল সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ মজুরি ঘোষণা করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই আমরা এটা ঘোষণা করছি। ন্যূনতম মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়বে। ৮ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা হবে। সঙ্গে বছরে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট থাকবে।

গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, আমি ৪০ বছর ধরে এ শিল্প খাতে কাজ করছি। আমাদের বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিতে হবে। শ্রমিকরা যাতে কর্মচ্যুত না হন, তাদের যেন বাড়ি ফিরে যেতে না হয়, তাদের অবস্থা আমাদের দেখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সে অনুসারে আমরা মনে করি এটা বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বেঁচে থাকার জন্য মোটামুটি একটা অবস্থায় গিয়ে দাঁড়াবে। এটা গ্রহণযোগ্য।

অন্যদিকে মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের সমন্বয়ক তাসলিমা আখতার বলেন, মজুরি বোর্ড যে প্রহসনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে দিয়েছে তা দেশের ৪০ লাখ শ্রমিক প্রত্যাখ্যান করেছে। শ্রমিকরা কখনোই ১২ হাজার ৫০০ টাকার প্রস্তাব মেনে নেবে না। মালিকপক্ষ ও সরকার কখনোই শ্রমিকদের মানুষ মনে করে না। আগামী শুক্রবার আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচি আহ্বান করেছি। সেখান থেকে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করব।

গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ বলেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এ মজুরি অপ্রতুল। ১২ হাজার ৫০০ টাকায় এখন কোনোভাবেই একজন শ্রমিকের জীবন চলবে না। এই মজুরি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী, শ্রমমন্ত্রী, মজুরি বোর্ডের প্রতি আমাদের আহ্বান এই মজুরি পরিবর্তন করে শ্রমিকদের বাঁচার মতো মজুরি নির্ধারণ করুন। তবে মজুরি বোর্ডের সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শ্রমিকদের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো গ্রহণযোগ্য হয়েছে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে গঠিত বোর্ডের ষষ্ঠ সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ ও শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মজুরি বোর্ডের সভাকক্ষে এ সংক্রান্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান ও বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি ছিলেন সিরাজুল ইসলাম রনি। মালিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ, নিরপেক্ষ সদস্য অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন ও শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহম্মদ।

পর্যালোচকরা বলছেন, মাঝে মাঝে শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরির দাবিতে ফুঁসে ওঠে, আর কষ্ট সইতে পারে না, ক্ষোভে ফেটে পড়ে, রাস্তা অবরোধ করে তখন চিহ্নিত করা হয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী হিসেবে। কেন বিক্ষোভ, কেন কাজ বাদ দিয়ে রাস্তায় নেমে আসা, কেন পুলিশি নির্যাতন, মাস্তানদের হামলা সয়েও এই আন্দোলন, তার কারণ কী খুঁজে দেখা হবে না? কখনো কখনো দেশের কোনো কোনো শ্রম খাত প্রধান খাত হয়ে ওঠে। যেমন এক সময় পাট খাত দেশের অর্থনীতির প্রধান খাত ছিল। সেই শ্রমিকরাই ছিল শ্রমিক আন্দোলনের প্রধান শক্তি, গণ আন্দোলনের ভরসার জায়গা। এখন যেমন গার্মেন্ট খাত। দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা এনে দেয়।

এ বিষয়ে গার্মেন্ট শ্রমিক নেতারা বলছেন, মজুরির পরিমাণ নিয়ে মালিকের দৃষ্টিভঙ্গী ও মনোভাব আর শ্রমিকের মনোভাব বিপরীত। মালিক বলে আমরা যা দিচ্ছি তা যথেষ্ট; শ্রমিক বলে সব জিনিসের দাম বাড়ছে, এই মজুরিতে আমার পোষায় না, তা কোনোভাবেই যথেষ্ঠ নয়। কিন্তু বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে রাস্তায় নামছে।

অন্যদিকে গার্মেন্ট মালিকরা বলছেন, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা বাড়ানো সম্ভব নয়, মালিকদের স্বার্থও তো দেখতে হবে। বিশ্ববাজারে মালিকদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিচার করে শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণ করতে হবে, যাতে দুই পক্ষই বেঁচে থাকতে পারে। বর্তমান সময়ে ন্যূনতম মজুরি কত হলে শ্রমিকদের বাঁচার মতো মজুরি হয়, সেটা নির্ধারণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগ আসে গার্মেন্টস খাত থেকে। পৃথিবীতে ২৬টি গার্মেন্ট রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে সস্তা শ্রমিকের দেশ। চীনের পর বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্ট রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বেশ কিছুদিন থেকেই কখনো আশুলিয়া, কখনো সাভার, কখনো গাজীপুর, কখনো নারায়ণগঞ্জ, কখনো বা ঢাকা-চট্টগ্রামে গার্মেন্ট শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে, ন্যায়সঙ্গত দাবিতে প্রতিবাদী হয়ে উঠছে। আন্দোলনকারী শ্রমিকরা মিছিল, সমাবেশ, ঘেরাও, সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। চাল, ডাল, তেলসহ জিনিসপত্রের দাম ক্রমাগত বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়া, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম, চিকিৎসা খরচ। কিন্তু শ্রমিকের মজুরি বাড়ছে না। সময়মতো বেতন এবং ওভারটাইম ভাতা না দেয়া, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি না থাকায় তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। মালিক কর্মকর্তা কর্তৃক শ্রমিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অমানবিক আচরণ করা হয়। যে কোনো অজুহাতে শ্রমিকদের ছাঁটাই, শোকজ ইত্যাদির মাধ্যমে হয়রানি করা হয়। মালিকদের মধ্যেও অভ্যন্তরীণ নানা বিরোধে শ্রমিকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এসব নানা বিষয়ের প্রতিক্রিয়ায় শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। কিন্তু সবচেয়ে বড় কারণ সারা মাস হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে জীবন-যাপনের উপযোগী ন্যূনতম মজুরি না পাওয়া। বাঁচার মতো মজুরির দাবিতেই শ্রমিকরা বার বার রাস্তায় নেমে আসে।

জানা গেছে, সরকারি চাকুরেদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ করার পর বেতন বাড়ানোর দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের একটি অংশ ২০১৬ সালের শেষদিকে আন্দোলন শুরু করলেও সেটি আগের মতো জোরাল ছিল না। এর দুই বছর আগে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে নতুন মজুরি কাঠামোয় প্রথম বেতন পেয়েছিলেন শ্রমিকরা। এর আগের মাসে কার্যকর হওয়া এই মজুরি বোর্ডে প্রতি বছর পাঁচ শতাংশ হারে বেতন বাড়ার পাশাপাশি পাঁচ বছর পর নতুন বেতন কাঠামো করার কথা বলা ছিল। কিন্তু বর্তমান বাজারে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সেই নিয়ম-নীতির কোনো কাঠামোই যেন কাজে লাগেনি। সরকারের শেষ বছরে এই বিষয়টি নিয়ে যেন কোনো পক্ষ অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে, সেজন্য সরকার আগেভাগেই উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। মিরপুর, সাভার, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় যখন একের পর এক পোশাক শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে তখন সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগের পর শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে সরকারকে সম্মতি জানায় পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। আর এরপরই শ্রম মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ২০০৮ সালে প্রথম মজুরি বোর্ডের আওতায় আসেন পোশাক শ্রমিকরা। তখন ন্যূনতম মজুরি ছিল তিন হাজার টাকা। আর ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে কার্যকর হওয়া মজুরি কাঠামো, অনুযায়ী বেতন ন্যূনতম মজুরি ৮০ শতাংশেরও বেশি বাড়িয়ে করা হয় ৫৫০০ টাকা। তবে সে সময় শ্রমিক সংগঠনগুলো দাবি তুলেছিল এটা আট হাজার টাকা করার। আর মালিকপক্ষ পাঁচ হাজার টাকার নিচে রাখতে চেয়েছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে ৫৩০০ টাকা করা হয়। ওই মজুরি কাঠামোয় মোট চারটি গ্রেড ছিল। প্রতিটি গ্রেড শ্রমিকরা মূল মজুরির সঙ্গে অন্যান্য গ্রেডের মতো বাসা ভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত ও খাদ্য ভর্তুকি ভাতা পাবেন বলেও বলা ছিল তাতে। এছাড়া প্রতি কর্মদিবস ২৫ টাকা হারে ২৬ দিনের খাদ্য ভর্তুকি বাবদ তখন ৬৫০ টাকা ধরা হয়। আর ২০১৮ সালে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ গতকাল শ্রম মন্ত্রণালয়ে এক সভায় মজুরি বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২০ হাজার ৩৯৪ টাকার প্রস্তাব করেন। আর মজুরি বোর্ডে পোশাক কারখানার মালিকদের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন। উভয়পক্ষ প্রস্তাবনায় তাদের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। দুই পক্ষের মতামত শেষে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।

শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে শ্রমিকদের সাড়ে চার হাজার টাকা বাড়িয়ে ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। সাড়ে চার হাজার টাকা বাড়ানো বর্তমানে বাজার মূল্যের সঙ্গে সামজস্যপূর্ণ হয়নি। কারণ মানুষের খাবারের পাশাপাশি বিদ্যুৎ, পানি ও চিকিৎসা সেবাসহ সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে।

তিনি আরো বলেন, পোশাক খাত থেকে দেশের রেমিটেন্সের বড় একটি অংশ আসছে। কিন্তু শ্রমিকদের বেতন কম দেবেন, তা হয় না। সুতরাং কম করে হলেও শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা হওয়া উচিত। বেতন বেড়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করা, এটি শ্রমিকদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণার সামিল। শ্রমিকদের শ্রমের ন্যায্যমূল্য না দিয়ে মালিকরা লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫নং অনুচ্ছেদে নাগরিকদের যুক্তিসঙ্গত মজুরির বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার বিষয়টি রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে বলা হয়েছে। বিশ্বের অন্তত ৯০টি দেশে ন্যূনতম মজুরি আইন করে নির্ধারণ করা হয়। ন্যূনতম মজুরি আইন প্রথম করা হয় নিউজিল্যান্ডে ১৮৯৬ সালে। এর পর অস্ট্রেলিয়ায় ১৮৯৯ সালে, ব্রিটেনে ১৯০৯ সালে, শ্রীলংকায় ১৯২৭ সালে এবং ১৯৩৬ সালে ভারতে, ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানে প্রবর্তন করা হয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে বিবেচনায় নিয়ে ফ্রান্স, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, স্পেন, মরিশাস, মেক্সিকো প্রভৃতি দেশে প্রতি বছর মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা হয়। কানাডায় করা হয় প্রতি দুই বছর পর পর। বাংলাদেশে পাঁচ বছর পর পর মজুরি পুনর্নির্ধারণের আইন করা হয়েছে।