ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অসংলগ্ন বক্তব্যে সমালোচিত হওয়ার আশঙ্কা

বিতর্ক এড়াতে মুখপাত্র বেছে নিল ইসি

বিতর্ক এড়াতে মুখপাত্র বেছে নিল ইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ কয়েকজন কমিশনার গণমাধ্যমে অসংলগ্ন বক্তব্যে দেয়ার কারণে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিতর্ক এড়াতে এবার মুখপাত্র বেছে নিয়েছে। এখন থেকে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের তথ্য জানানোর জন্য সচিব মো. জাহাংগীর আলমকে মুখপাত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে অসংলগ্ন বক্তব্যে এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। গত রোববার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছেন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম।

অফিস আদেশে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন (কার্যপ্রণালী) বিধিমালা-২০১০-এর বিধি ১১(৩) এর আলোকে কমিশনের মুখপাত্র হিসেবে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ব্রিফ করার জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবকে কমিশন মনোনীত করেছে।

আদেশে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব গণমাধ্যমকে ব্রিফিং দেবেন এবং তিনি কমিশনের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

অফিস আদেশের অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে পাঠানো হয়েছে। সূত্র জানায়, সাম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূলে নেই বলে বিভিন্ন মহলে সমালোচিত হন। এর আগে বিভিন্ন সময় অসংলগ্ন বক্তব্য দিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় পড়েন সিইসি। এছাড়া নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মতবিরোধ নিয়ে বক্তব্যে দিয়ে একজন কমিশনার বিতর্কে জড়ান। এসব কারণে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সচিবকে মুখপাত্র হিসেবে ঘোষণা করেছে ইসি।

জানা যায়, বর্তমান সিইসি এর আগেও নানা অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন। তার সবচেয়ে আলোচিত উক্তি হচ্ছে- ‘তিনি কি ইন্তেকাল করেছেন’ এই মন্তব্যের জন্য সিইসি যথেষ্ট বিতর্কিত হয়েছেন। পরে অবশ্য তিনি তার এই বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল- সিইসির বক্তব্য ‘বিকৃত ও ভুলভাবে’ ব্যাখ্যা করে ‘অসত্য’ সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। গত ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের দিন একটি কেন্দ্রে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম ঘুষিতে আহত হওয়ার পর ঢাকায় নির্বাচন কমিশনে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান সিইসি। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়- সিইসি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জানতে চান- ‘উনি (ফয়জুল করীম) কি ইন্তেকাল করেছেন?

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের ‘তলোয়ারের বিপরীতে রাইফেল বা তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ানো’ বক্তব্যের বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তার এ বক্তব্যের পর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানায়, নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান প্রধানের এ ধরনের বক্তব্য সহিংসতাকে উসকে দেওয়ার শামিল। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের অংশ হিসেবে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপে সিইসি বলেছিলেন- ‘সব দল সহযোগিতা না করলে আমরা সেখানে ব্যর্থ হয়ে যাব। আপনাদের সমন্বিত প্রয়াস থাকবে, কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, আপনাকে রাইফেল বা আরেকটি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে। আপনি যদি দৌড় দেন, তাহলে আমি কী করব?’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের দেয়া একটি বক্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করে রাশিয়া। সিইসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধরত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। জেলেনস্কিকে নিয়ে সিইসির বক্তব্যে বিষ্ময় প্রকাশ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনানুষ্ঠানিক বার্তা পাঠান ঢাকাস্থ রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি মান্টিটস্কি। সিইসির বক্তব্যকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান হিসেবে বিবেচনায় নেয় রুশ দূতাবাস। জাতীয় নির্বাচনের আগে সিইসিকে যে কোনো জনসংযোগ কার্যক্রমে তাকে অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। তার এমন কোনো বক্তব্য দেয়া উচিত হবে না, যা আওয়ামী লীগবিরোধী পক্ষ অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত