রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সিইসির বৈঠক

আগামী সপ্তাহে তপশিল ঘোষণা শুরু হলো ‘নির্বাচনি ট্রেন’ যাত্রা

ইসিকে সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান রাষ্ট্রপতির

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচানের ট্রেনযাত্রা অনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে গতকাল রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সঙ্গে বৈঠক করেছে ইসি। বৈঠকে তপশিলের সম্মতি নিয়ে এসেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এখন আগামী সপ্তাহে কমিশন সভা ডেকে তপশিল দেয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসি সূত্র।

সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করার পর ভোটে তপশিল দেয়ায় আর কোনো বাধা থাকল না। সব বাধা উপেক্ষা করে ইসি নির্বাচনি ট্রেন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আইন অনুযায়ী সময় মতো ভোটগ্রহণ হবে। এখন আগামী ১৩ অথবা ১৪ তারিখ কমিশন সভা দিয়ে ওই দিন তপশিল ঘোষণা করা হতে পারে। আর ভোটগ্রহণ করা হবে ডিসেম্বর শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুতে। ভোটার তালিকা এবং ভোটের মালামাল কেনা-কাটাসহ সব প্রস্তুতি শেষ। এখন স্ট্যাম্প এবং কলম এক সপ্তাহের মধ্যে ইসি হতে পেলে প্রস্তুতির কাজ সব শেষ হবে।

গতকাল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সাংবিধানিক রীতিনীতি ও বিধিবিধান অনুসরণ করে কমিশনকে সাহসিকতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন নির্বাহী বিভাগসহ জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা।

রাষ্ট্রপ্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে এ লক্ষ্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একসঙ্গে চলে।

নির্বাচন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের মতামতের প্রতিফলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন এবং প্রতিনিধির মাধ্যমেই জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়।

মো. সাহাবুদ্দিন আশা করেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সরকার নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা করবে। সাক্ষাৎকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন।

বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সুশৃঙ্খলভাবে হবে আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি। এ বিষয়ে তিনি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তাই নির্বাচন যথাসময়ে হবে।

সিইসি বলেন, নির্বাচনের সব প্রস্তুতির কথা রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছি। তিনি সব শুনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এখন আমরা কমিশনে বসে চূড়ান্ত তালিকা ঠিক করে তপশিল ঘোষণা করব খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে।

নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে অবহিত নিয়ে সিইসি বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে অবহিত করেছি। আমরা সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে অবহিত করেছি। তিনি সন্তুষ্ট হয়েছেন। রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেছেন, আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সুশঙ্খলভাবে হবে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

আমরাও বলেছি, প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির সাহায্য কামনা করব। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থ যেকোনো ধরনের সহযোগিতা দেবেন। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা যেকোনো মূল্যে অব্যাহত রাখতে হবে।

আমরা জানিয়েছি, আমাদের ওপর যে সাংবিধানিক দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে ও বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ও নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে আমরা বদ্ধপরিকর। সে বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল, সরকার ও জনগণের সহযোগিতা কামনা করে যাচ্ছি। আমরা রাষ্ট্রপতিকে আশ্বস্ত করেছি, আমরা সবার সহযোগিতায় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার আলোকে যথাসময়ে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সমর্থ হব।

সম্ভাব্য সময়সূচির বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছি, নির্বাচন অত্যাসন্ন। শেষ সময়টি রাষ্ট্রপতি জানেন। যে কোনো মূল্যে আমাদের ২৯ জানুয়ারির আগেই নির্বাচন করতে হবে। আমরা এখনও পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নিইনি। আজ (গতকাল) রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গেছি। এবার আমরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করবো।

আমরা রাষ্ট্রপতিকে বলেছি, দ্রুত তপশিল ঘোষণা করব। কারণ, সময় হয়ে গেছে। তাকে জানিয়েছি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ বা দ্বিতীয় সপ্তাহে, যেটা এখনো ওই অবস্থায় আছে। আমরা কমিশন সভায় বসে সিদ্ধান্ত নেব, তারিখ চূড়ান্ত করব, তখন আপনাদের জানাব।

বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ‘তেমন আলোচনা’ হয়নি বলে উল্লেখ করেন সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা শুধু আমাদের কথা বলেছি। প্রত্যাশা করেছি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যাতে নির্বাচন হয়, সে ব্যাপারে সবার সহযোগিতা দরকার।

জানতে চাইলে রাজনৈতিক মতানৈক্যের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি সিইসি। ব্রিফিংকালে সিইসির সঙ্গে চার নির্বাচন কমিশনার ও সচিব উপস্থিত ছিলেন।