নতুন কৌতূহলের জন্ম দিলেন মেজর হাফিজ

রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আমিরুল ইসলাম অমর

নতুন দল গঠন করে, সেই দলের অধীনে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন- এ রকম নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিনকে নিয়ে। একপর্যায়ে মেজর হাফিজ উদ্দিন গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার উচিত। বিএনপি নির্বাচনে গেলে আমিও সেই নির্বাচনে অংশ নেব।’ এমন বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে আরো আলোচনা-সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। তার বক্তব্য নিয়ে নতুন কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।

এরই মধ্যে সাবেক এই মন্ত্রী তার বনানীর নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে বক্তব্য দেন। সংবাদ সম্মেলনে তার দেয়া বক্তব্য নিয়ে এখন নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ উদ্দিন বলেন- নতুন দল গঠনের তথ্য সঠিক নয়। তবে, শারীরিক অবস্থার কারণে রাজনীতির ওপর আগ্রহ হারিয়েছি। বিএনপির রাজনীতি থেকেও দূরে আছি। শারীরিক অবস্থা ভালো নয় বলে কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত নই। শিগগিরই চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারি। তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্য দৃষ্টিতে এসেছে। আমি কোনো দল খুলছি না। বেগম জিয়া আমার নেত্রী, তিনি বাইরে থাকতে আমার কোনো সমস্যা হয়নি। বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে দল থেকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। তবে শেষ দিন পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গেই থাকব। মেজর হাফিজ বলেন, আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা নেই। শিগগিরই রাজনীতি থেকে অবসর নেব। তবে বিএনপি যদি এবার নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে বিএনপি থেকেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানান তিনি। বিএনপির এই নেতা বলেন, আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় নির্বাচন হলে তাতে বিএনপির অংশ নেওয়া উচিত।

নিজেকে দেওয়া বিএনপির কারণ দর্শানোর নোটিশের বিষয়ে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। বলা হয়, দলের নির্দেশ ছাড়া সরকারবিরোধী মিছিলে যোগ দেওয়ার কারণে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শওকত মাহমুদের সঙ্গে কোনো মিছিলে যোগ দিইনি। তার সাথে কোনো যোগাযোগ আগেও ছিল না, এখনো নেই। তারপরও আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ।

তিনি আরো বলেন, চিঠির জবাব দেওয়ার পর আমি জানি না, সে চিঠি গ্রহণ হয়েছে কি না, না বাতিল হয়েছে। এমন আচরণ আমি ডিজার্ভ করি না। জিয়াউর রহমানের আদর্শের সৈনিক হিসেবে এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। মেজর হাফিজ আরো বলেন, জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়ার কারণে বিএনপি এত বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে।

সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মেজর হাফিজ উদ্দিনের বক্তব্যে নানা ক্ষোভ রয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘বেগম জিয়া আমার নেত্রী, তিনি বাইরে থাকতে আমার কোনো সমস্যা হয়নি। বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে দল থেকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।’ এই বক্তব্যে প্রতীয়মান হয় যে, বর্তমানে তার ভিতরে ক্ষোভ আছে। তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়ার কারণে বিএনপি এত বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে।’ তার এমন বক্তব্যে প্রতীয়মান হয় যে, বিএনপি এখন বিচ্যুত হওয়ার কারণেই আন্দোলন সংগ্রামে সফল হতে পারছে না দলটি। ‘আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার উচিত, সেই নির্বাচনে বিএনপি গেলে আমি সেই নির্বাচনে অংশ নেব’ মেজর হাফিজের এমন বক্তব্যে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

বিএনপি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়ে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলন করছে, সেখানে বিএনপির এই নেতার এমন বক্তব্যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় শুরু হয়।

এছাড়া সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘খুব শিগগিরই রাজনীতি থেকে অবসর নেব।’ এমন বক্তব্যেও রয়েছে নানা গুঞ্জন। যদিও তিনি বলেছেন, শেষ দিন পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গেই থাকবেন। বিএনপি যদি এবার নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে বিএনপি থেকেই নির্বাচনে অংশ নেব।

প্রসঙ্গত, ৭৯ বছর বয়সি হাফিজ উদ্দিন আহমেদ গত দুই মাস আগে অসুস্থ হয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। একাত্তরেরে স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন ‘জেড’ ফোর্সে ছিলেন। যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য তিনি বীরবিক্রম খেতাব পান। সামরিক বাহিনী থেকে অবসরের পর তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন। হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া সরকার গঠন করলে তিনি পানিসম্পদমন্ত্রী ছিলেন। দীর্ঘ একযুগের বেশি সময় ধরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন তিনি। সরকারের দমননীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে কারাগারও যেতে হয়েছে তাকে।