প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত কক্সবাজার

প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার

কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে আজ আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই তিনি দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে উদ্বোধন করবেন ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কক্সবাজার রেললাইনের। একইসঙ্গে সাড়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকার ১৩ প্রকল্প উদ্বোধন এবং ৬৮ কোটি টাকার ৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে পুরো জেলাজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে মাতারবাড়ীর জনসভাস্থল, আইকনিক রেল স্টেশনসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। জেলাজুড়ে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা, বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহলও অবস্থান দেখা গেছে।

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার পৌঁছার পর বেলা ১১টায় যাবেন কক্সবাজারের ঝিলংজাস্থ ঝিনুক আদলে তৈরি আইকনিক রেল স্টেশনে। যেখানে এক সুধী সমাবেশ শেষে উদ্বোধন করবেন রেললাইন। ট্রেনে করে ঘুরে দেখবেন রেললাইনের কিছু অংশ। যেখান থেকে তিনি যাবেন মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে। যেখানে আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে দলের তৃণমূল পর্যায়ে বর্ধিতসভা করে সব স্তরে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। চলছে স্বাগত মিছিল, মাইকিং ও প্রচারণা। আশা করছেন, সমাবেশে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি মানুষের সমাগম ঘটবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ ২৮ বছর পর মাতারবাড়ী যাচ্ছে। যে মাতারবাড়ীকে শেখ হাসিনা নিজেই ‘দ্বিতীয় টুঙ্গীপাড়া’ হিসেবে নামকরণ করেছেন। তাই মাতারবাড়ীবাসীর যে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। শুক্রবার জনসভাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে মঞ্চ তৈরি প্রায় শেষ। তৈরি করা হয়ে সভাস্থলের মাঠ ও আশপাশের এলাকা।

মাতারবাড়ীর প্রবীণ বাসিন্দার রফিকুল ইসলামের সঙ্গে আলাপ হয় মাতারবাড়ী বাজারেই।

তিনি জানান, শেখ হাসিনা বিগত ১৯৯৪ সালে বিরোধী দলীয় নেত্রী থাকাকালীন ঘূর্ণিঝড়ে কবলিত মানুষের দূর্দশা দেখতে কক্সবাজার সফরে আসেন। ওইসময় তিনি সমুদ্র উপকূলের দুর্যোগকবলিত মাতারবাড়ীও পরিদর্শন করেন। তার সফরকে ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সেখানে সংক্ষিপ্ত আকারে জনসভা আহ্বান করেছিল। আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতারাসহ স্থানীয়রা ধারণা করেছিলেন জনসভায় কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটবে। কিন্তু সেইদিন জনসভাস্থল মাতারবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে মানুষের ঢল নেমেছিল। বাড়িঘরের দরজা তালাবদ্ধ রেখে সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন অসংখ্য নারী-শিশুরাও। অভূতপূর্ব জনসমাবেশের দৃশ্য দেখে সেইদিন আবেগে আপ্লুত হয়েছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী। মাতারবাড়ীকে ‘নিজের নানারবাড়ি’ আখ্যা দিয়ে তিনি মন্তব্য করেছিলেন ‘দ্বিতীয় টুঙ্গীপাড়া’। সেই থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ রাজনৈতিক সচেতন মহলের কাছে মাতারবাড়ী দেশের দ্বিতীয় টুঙ্গীপাড়া। আজ দীর্ঘ ২৮ বছর পর সেই মাতারবাড়ী সফরে আসছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে।

এ সময় আলোচনায় যোগ দেন স্থানীয় অনেকেই। দারা বলছেন, বৃহত্তর মাতারবাড়ী ইউনিয়নের সিংহভাগ মানুষ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক। এই ইউনিয়নের ভোটাররা জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনেও বরাবরই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন। মাতারবাড়ীকে দ্বিতীয় টুঙ্গিপাড়া আখ্যা দেওয়া শেখ হাসিনাকে স্থানীয়রা মনে করেন নিজেদের কারো মা, কারো বোন এবং কারো খালা। ফলে দীর্ঘ ২৮ বছর নিজেদের স্বজন আবার সফরে আসার খবরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে আকুল প্রতীক্ষা তাদের।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলছেন, মহেশখালী ছাড়াও জনসভায় চকরিয়া, পেকুয়া, কক্সবাজারসহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ আসবেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইফ আবু সাঈদ মাহমুদ আল স্বপন এমপি বলেছেন, মাতারবাড়ীকে প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় টুঙ্গীপাড়া হিসেবে জানেন। আর মাতারবাড়ী প্রতি উনার আবেগ ও ভালোবাসা। সেই মাতারবাড়ীতে বাস্তবায়িত হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ উন্নয়নের মহাযজ্ঞ। এতে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক গতিসঞ্চার হবে। জনসভায় তারই প্রমাণ দেবে মানুষ।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে সব প্রস্তুতি শেষ। রেল স্টেশন, মাতারবাড়ী সভাস্থলসহ সব কিছু সাজানো শেষ হয়েছে। নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার রয়েছে।

উদ্বোধনের তালিকায় থাকা প্রকল্পগুলো হলো :

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটে ৫৯৫ মিটার দীর্ঘ পিসি বক্স গার্ডার ব্রিজ। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কুতুবদিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ঠান্ডা চৌকিদারপাড়া ৬০ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চকরিয়া পৌরসভা বাস টার্মিনাল সম্প্রসারণ প্রকল্প, ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ) ডিজাইন ও স্থাপনকরণ প্রকল্প। সোয়া ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় কক্সবাজার সদর উপজেলা জাহানারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, মহেশখালীতে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে ইউনুসখালী নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে উখিয়ায় রত্না পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, ৫১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশখালীর মাতারবাড়ীস্থ ২৬০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (১ম সংশোধিত), ৬৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কুতুবদিয়ায় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়া দ্বীপকে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তকরণ প্রকল্প, ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমান বন্দর উন্নয়ন (১ম পর্যায়) (৩য় সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় ডিপোজিট ওয়ার্ক হিসেবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) কর্তৃক ২১২ একর ভূমি ভরাট ৪ দশমিক ৮ কিমি. স্লোপ প্রটেকশন বাঁধ নির্মাণ, এপ্রোচ রোড়সহ ২টি ব্রিজ ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প এবং ২৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে রামুতে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প।

ভিত্তি স্থাপনের জন্য থাকা প্রকল্পগুলো হলো:

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে টেকনাফে মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার রিসিলেন্ট শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণ। এর প্রকল্পের ব্যয় ২৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। রামুর জোয়ারিনালা ইউপি-মোহসিনা বাজার ভায়া নন্দাখালী সড়কে সাড়ে ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮৪ মিটার দীর্ঘ আর্চ ও আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প। ১৭৭৭৭ দশমিক ১৬১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশখালী মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প এবং প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ (৪র্থ পর্যায়) প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।