ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বেতন কাঠামো প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন

কঠোর অবস্থানে বিজিএমইএ শ্রমিক নিয়োগ বন্ধের সিদ্ধান্ত

কঠোর অবস্থানে বিজিএমইএ শ্রমিক নিয়োগ বন্ধের সিদ্ধান্ত

নতুন বেতন কাঠামো প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিকদের যে আন্দোলন চলছে, তার বিরুদ্ধে আরো কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। গত বৃহস্পতিবার পোশাকশিল্প মালিকদের এক সমন্বয় সভায় সব কারখানায় নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখা, কারখানায় ভাঙচুর হলে প্রয়োজনে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের সভাপতিত্বে সভায় আরো তিনটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের কথা বিজিএমইএ চিঠি দিয়ে জানিয়েছে সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে। সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেসব কারখানায় আগুন দেওয়া, ভাঙচুর বা মারামারির ঘটনা ঘটেছে, সেসব কারখানা কর্তৃপক্ষকে প্রমাণ হিসেবে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ নিয়ে নিকটস্থ থানায় মামলা করতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম জানা না থাকলে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা যাবে। মামলার পর এর একটি কপি তাদের সিনিয়র অতিরিক্ত সচিবকে পাঠাতে বলা হয়েছে।

সমন্বয় সভায় আরো সিদ্ধান্ত হয়, যেসব শ্রমিকরা কারখানায় গিয়েও কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন বা কারখানা ছেড়ে বেড়িয়ে যাবেন, সেসব কারখানার মালিকরা বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী কারখানা বন্ধ করে দেবেন। এ ছাড়া যেসব কারখানায় আগুন দেওয়া, ভাঙচুর বা মারামারির ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিজিএমইএ’র সিস্টেম অ্যানালিস্টকে দিতে হবে বলেও সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে বিজিএমইএর চিঠিতে। বিজিএমইএ চিঠিতে সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলেছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের অভিঘাত-পরবর্তী পরিস্থিতি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ ইত্যাদি কারণে কার্যাদেশ কমে যাওয়া এবং সাম্প্রতিককালে শ্রমিক অসন্তোষ, কারখানার কাজ বন্ধ, শ্রমিক-কর্মচারীদের মারধর, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, মালামাল লুটপাট ইত্যাদি জটিল পরিস্থিতির কারণে তারা সমন্বয় সভা করেছে।

সভায় অন্যদের মধ্যে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি এসএম মান্নান (কচি) এবং সহ-সভাপতি ও পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে গঠিত মজুরি বোর্ডের ষষ্ঠ সভায় সর্বনিম্ন মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা ধরে মোট ৫টি গ্রেডে মজুরি প্রস্তাব করে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। পরে সেই প্রস্তাবই গ্রহণ করা হয়। তবে তা প্রত্যাখ্যান করে সাভার, গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ২৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা মজুরি দাবি করা শ্রমিক সংগঠনগুলো।

প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলা মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে অন্তত চারজন শ্রমিক নিহত হওয়ার খবর এসেছে। বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ হয়েছে। আন্দোলনের কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে অনেক কারখানা।

এমন পরিস্থিতিতে উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে দফায় দফায় বৈঠক করছেন শিল্প মালিকরা।

এদিকে কারখানা মালিকদের কাছে পাঠানো এক বার্তায় বিজিএমইএ সভাপতি দাবি করেন, বিগত ৪০ বছরে ৬ হাজার ৮৮৫টি পোশাক কারখানা বিজিএমইএ’র সদস্যপদ গ্রহণ করলেও ৩৯৬৪টি সদস্য কারখানা বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেছে।

অবশিষ্ট ২ হাজার ৯২১টি সদস্য কারখানার মধ্যে ২ হাজার ৩৩৯টি কারখানা বিজিএমইএতে তাদের সদস্যপদ নবায়ন করেছে। এই ২ হাজার ৩৩৯টি সদস্য কারখানার মধ্যে মাত্র ১৬০০টি সদস্য কারখানা ক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি অর্ডার এনে কাজ করছে। বাকি কারখানাগুলোর মধ্যে ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক’ কারখানা বিভিন্ন ব্যাংক দেনা ও দায়ের কারণে সরাসরি ব্যাক-টু-ব্যাক খুলতে পারছে না। ফলে তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি অর্ডার নিতে পারছে না। এই সদস্য কারখানাগুলো মূলত সাব-কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে।

গাজীপুরে ৯ কারখানা বন্ধ : বেতন বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় গাজীপুরের ৯টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল সকালে ফটকে কারখানা বন্ধের নোটিশ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। নোটিশ দেখতে পেয়ে কাজে আসা শ্রমিকরা ফিরে গেছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরের তিনটি এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। শ্রমিকদের হামলা ও ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে দিনভর উত্তপ্ত ছিল নগরীর কয়েকটি এলাকা। এ সময় শ্রমিকরা তুসুকা নামের একটি পোষাক তৈরি কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এছাড়া কারখানার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা পুলিশের তিনটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। আর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন শ্রমিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ২২টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে তিনটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

গতকাল সকালে কোনাবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তুসকা কারখানার সামনে সাঁটানো হয় বন্ধের নোটিশ। এ বিষয়ে কারখানার মহাব্যবস্থাপক জানান, পরবর্তীতে কারখানা খোলার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে কারখানা খোলার তারিখ নোটিশের মাধ্যমে শ্রমিকদের জানিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া কোনাবাড়ী আমবাগ রোডের এমএম নিটওয়্যার লিমিটেড ও কোনাবাড়ী জরুন এলাকার ইসলাম গ্রুপের কারখানার এক নারী শ্রমিক আহত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় ওই গ্রুপের তিনটি কারখানার সকল কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গাজীপুর শিল্পপুলিশ জোন-২ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহমেদ জানিয়েছেন, কোনাবাড়ী ও আশপাশের এলাকার ২২টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করার খবর তাদের কাছে রয়েছে।

পুলিশের মামলায় আসামি ৪ হাজার, গ্রেপ্তার ১১ : গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে একটি কারখানার বাইরে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর মহানগর পুলিশের কোনাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু সাঈদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ মামলায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৩-৪ হাজার অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী এসআই আবু সাঈদ জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে কোনাবাড়ী এলাকায় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে তুসকা গার্মেন্টস কারখানার ভেতর শ্রমিকরা ব্যাপক ভাঙচুর করেন। এ সময় তারা ওই কারখানার সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে থাকা গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনারের (ডিসি) গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১১ জনকে আটক করে। আটককৃতরা সবাই বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় কোনাবাড়ী থানায় মামলা করা হয়। ওই মামলায় আটক ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এছাড়া আরও ৩-৪ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত