ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মাতারবাড়ীর জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

দেশের মানুষের কল্যাণে জীবন দিতেও প্রস্তুত

উন্নয়ন চাইলে নৌকায় ভোট দিন
দেশের মানুষের কল্যাণে জীবন দিতেও প্রস্তুত

দেশের মানুষের কল্যাণে প্রয়োজনে জীবন দিতেও প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মাঝে আমি আমার বাবা, মা, ভাইয়ের স্নেহ পেয়েছি। দেশবাসীর কল্যাণে আমি আমার বাবার মতো জীবন দিতেও প্রস্তুত আছি।

গতকাল কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী টাউনশিপ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করে গেছেন। এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমি অঙ্গিকারবদ্ধ। আমি পিতা, মা, ভাই, সবাইকে হারিয়েছি। তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এদেশের মানুষের মঙ্গল ছাড়া আর কিছুই চাই না। জিয়াউর রহমান আমাকে দেশে ফিরতে বাধা দিয়েছেন। সব বাধা উপেক্ষা করে এদেশে এসেছি এদেশের মানুষকে ভালোবেসে। বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জাতি হবে এটা আমার একান্ত চাওয়ার ছিল। তার জন্যই কাজ করছি। তাই নৌকায় ভোট দিতে হবে।

তিনি বলেন, যারা এদেশের মানুষকে ভালোবাসে না তারা বাসে আগুন দিচ্ছে। মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছে। এরা সব ধ্বংস করতে জানে। সৃষ্টি করতে জানে না। তাদের কাছ থেকে সর্তক থাকতে হবে। এই বাংলাদেশের মানুষ আমার পরিবার। আপনাদের মাঝে আমার বাবা, মা, ভাইয়ের স্নেহ পেয়েছি। আপনাদের জন্য আমি আমার বাবার মতো জীবন দিতেও প্রস্তুত।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছেন, তারা কেউ মাতারবাড়ী ও মহেশখালীর উন্নয়ন করেনি। পাশে দাঁড়ায়নি উপকূলের মানুষের। বিরোধীদলে থাকাকালীন এসব এলাকায় এসে দেখেছি, এখানে লবণ চাষ ছাড়া কিছুই হতো না। সেই লবণ চাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছি। ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখতে মাতারবাড়ীতে এসেছি। শুনেছি এসব এলাকার মানুষের সার্বিক দাবি। তাই ক্ষমতায় আসার পর এসব এলাকার উন্নয়নে কাজ শুরু করি। আজ রেললাইন উদ্বোধন করলাম। এখন রেলযোগে চট্টগ্রাম, ঢাকায় যাওয়া সহজ হবে।

প্রধানমন্ত্রী ৩টা ৪০ মিনিটে মাতারবাড়ী জনসভা মঞ্চে গিয়ে পৌঁছেন। এর পর উদ্বোধন করছেন ১৩টি প্রকল্প। সেসব উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা। একইসঙ্গে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ প্রকল্পের কাজ। সভা মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য প্রদান শুরু করেন ৪টা ৫ মিনিট। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিককে পাশে ডেকে জনতার হাতে তুলে দেন।

সরকারপ্রধান বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই দেশের সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে লেখা-পড়ার ব্যবস্থা করেছি। বয়স্ক, বিধবা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান করছি। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে একটা মানুষও গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না। কেউ থাকলে জানাবেন গৃহ ও ভূমি দেয়া হবে। প্রতিটি মানুষকে নিজের জমিতে খাদ্য ও সবজি উৎপাদন করতে হবে।

ইন্টারনেট প্রযুক্তির সহজলভ্যতার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক এটা আমরা চাই। আমরা দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। এদেশের মানুষ না খেয়ে থাকবে না। মানুষ যাতে কোনোভাবেই কষ্ট না পায় যেটা আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হবে একটি দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দর।

তিনি বলেন, লবণ চাষিরা যাতে লবণ চাষ করতে পারে তার জন্য জমি ও বাসগৃহ হারানো মানুষকে ঘর দেয়াসহ সব ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। লবণ চাষ অব্যাহত রাখতে হবে। লবণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম হয়েছে। ফুটবল স্টেডিয়াম হবে। ক্রিড়া কমপ্লেক্স হবে। প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন হয়েছে। কক্সবাজারের মানুষ সমুদ্রের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে। তাদের কথা বিবেচনা করে সব করা হচ্ছে। তাই আজ মহেশখালী দ্বীপ আলোকিত একটি দ্বীপ।

তাই আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত জনতার কাছে হাত তুলে অঙ্গিকার চান। প্রধানমন্ত্রী ৪টা ৩২ মিনিটে তার বক্তব্য শেষ করেন।

উদ্বোধন প্রকল্পগুলো হলো : বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটে ৫৯৫ মিটার দীর্ঘ পিসি বক্স গার্ডার ব্রিজ। স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কুতুবদিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ঠান্ডা চৌকিদারপাড়া ৬০ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চকরিয়া পৌরসভা বাস টার্মিনাল সম্প্রসারণ প্রকল্প, ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ) ডিজাইন ও স্থাপনকরণ প্রকল্প। সোয়া ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় কক্সবাজার সদর উপজেলা জাহানারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, মহেশখালীতে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে ইউনুসখালী নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে উখিয়ায় রত্না পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, ৫১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশখালীর মাতারবাড়ীস্থ ২৬০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র (১ম সংশোধিত), ৬৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কুতুবদিয়ায় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়া দ্বীপকে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তকরণ প্রকল্প, ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন (১ম পর্যায়) (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় ডিপোজিট ওয়ার্ক হিসেবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) কর্তৃক ২১২ একর ভূমি ভরাট ৪ দশমিক ৮ কিমি স্লোপ প্রটেকশন বাঁধ নির্মাণ, এপ্রোচ রোড়সহ দুটি ব্রিজ ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প এবং ২৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে রামুতে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন প্রকল্পগুলো হলো : স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে টেকনাফে মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার রিসিলেন্ট শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণ। এর প্রকল্পের ব্যয় ২৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। রামুর জোয়ারিনালা ইউপি-মোহসিনা বাজার ভায়া নন্দাখালী সড়কে সাড়ে ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮৪ মিটার দীর্ঘ আর্চ ও আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প। ১৭৭৭৭ দশমিক ১৬১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশখালী মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প এবং প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ (চতুর্থ পর্যায়) প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত