দেশ-বিদেশে বিএনপি জোটের সহিংসতা তুলে ধরছে আ. লীগ

গ্রামপর্যায়ে তুলে ধরা হবে উন্নয়নের চিত্র

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশ-বিদেশে বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংসতার চিত্র তুলে ধরছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ভোটের আগেই নয়া কৌশলে প্রচারকার্য পরিচালনা করছে দলটি। এছাড়া মানুষের কাছে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন-অর্জন প্রচারে মনোযোগী হচ্ছে দলটির নেতাকর্মীরা। দেশের পাশাপাশি বিএনপির সহিংসতার চিত্র বিদেশি দূতদের কাছে তুলে ধরার মাধ্যমে দলটিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে উপস্থাপন করতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। এজন্য বিএনপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, অতীতে জামায়াতের সঙ্গে জোট, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও জ্বালাওপোড়াও এর মাধ্যমে সরকারকে উৎখাতের বিষয়টি বিদেশিদের জানাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল।

জানা গেছে, দেশজুড়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংসতার চিত্র তুলে ধরতে পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজের ধর্মীয় আলোচনায় সহিংতার বিষয়টি তুলে ধরতে ইমামদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি প্রজেক্টরের মাধ্যমে বিএনপির সহিংতা ও উন্নয়নের চিত্র গ্রাম পর্যায়ে তুলে ধরবে আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির সদস্য মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম রাসেল বলেন, ডকুমেন্টারি করে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বিএনপির সহিংতার চিত্র দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, পাড়া, মহল্লায় বিস্তারিত তুলে ধারা হবে। এজন্য ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপশি সেক্টর-ভিত্তিক উন্নয়নের ডকুমেন্টারি তৈরি করা হচ্ছে। যেকোনো প্রার্থী প্রচার সেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসব চিত্র নির্বাচনি এলাকায় তুলে ধরতে পারবেন। বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের নিয়ে সংগঠন ‘অগ্নি সন্ত্রাসের আর্তনাদ’র ব্যানারে দেশব্যাপী জনসচেতনতা সৃষ্টি করার কর্মসূচি পালন কারার চিন্তাভাবনা রয়েছে।

এছাড়া ওয়েব সাইট, সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব ও নিউজলিংকের মাধ্যমে বিদেশিদের কাছেও সহিংসতা তুলে ধরতে কাজ করছে দলটির সাইবার সেল। আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) সমন্বয়ক তন্ময় আহমেদ বলেন, সারাদেশের ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পর্যায়ের ১২ হাজার অনলাইন এক্টিভিস্টরা আওয়ামী লীগের ওয়েব টিমের সঙ্গে কাজ করছে। তারা সবাই কন্টেন্ট স্প্রেড করছে, একই সঙ্গে তৃণমূল থেকে কন্টেন্ট তৈরি করে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেইজ, ইউটিউব, এক্স হ্যান্ডেলে (টুইটার) প্রকাশের ব্যবস্থা করছে।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিএনপির গণতন্ত্রে বিন্দুমাত্র আস্থা ও বিশ্বাস নেই। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে, ২৮ অক্টোবর সমাবেশে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের ওপরে হামলা করেছে। পুলিশ হত্যা করেছে। ক্ষমতায় থেকেও বিএনপি দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালে তারা কোনো অর্জন করতে পারে নাই। বিএনপি-জামায়াতের আমলে দেশ ছিল জঙ্গি-সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য। তাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে বিএনপি। ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি ও তার দোসররা পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। আবার ক্ষমতার বাহিরে থেকেও আন্দোলনের নামে জনসাধারণের ওপরে আগুন সন্ত্রাস করে উল্লাস করেছে। ২০১৩-১৪ ও ১৫ সালেও নির্বাচন প্রতিহত করার নামে বিএনপির দলীয় গুন্ডারা পেট্রল বোমা-আগুন সন্ত্রাস চালিয়েছে। এবারও নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি সহিংস তাণ্ডব চালাচ্ছে।

নির্বাচনের আগে নবীন-প্রবীণ ভোটারদের মন জয় করতে আওয়ামী লীগের এ প্রচার কৌশল মাইলফলক হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল। তাদের মতে, বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডব ও অপকর্ম দুইটি ভাগে প্রচার করতে পারে আওয়ামী লীগ। প্রথমটি হচ্ছে; সরকারে থাকাকালে বিএনপির যেসব ব্যর্থতা রয়েছে তা দেশ-বিদেশে সামনে তুলে ধরা। বিশেষ করে বিএনপি জোট সরকারের আমলের দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও স্বাধীনতা বিরোধীদের পৃষ্টপোষকতার বিষয়টি দেশের তরুণ প্রজন্ম ও বিদেশিদের অবগত করবে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, বিরোধী দলে থেকে আন্দোলনের নামে বিএনপি যে জ্বালাওপোড়াও এবং সহিংসতা করছে এর চিত্র তুলে ধরা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দি বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। তারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। বিএনপি-জামায়াত অশুভ শক্তি। বিএনপি জোট ২০০১ সালে নৌকার ভোট দেওয়ার কারণে আওয়ামী লীগে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। মধ্যযুগীয় কায়দায় সংখ্যালঘুদের উপরে জঘন্যতম নির্যাতন চালিয়েছে। ২০১৩-১৪ ও ১৫ সাল পর্যন্ত আন্দোলন-অবরোধের নামে দেশের নিরীহ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। রাজনীতির বাহিরে থাকা নিরীহ লোককে পুড়িয়ে ন্যক্কারজনক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বিএনপি জোটের সন্ত্রাস-সহিংসতার বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সচেতন করতে এবারও পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার ও ফেস্টুন প্রচার করা হবে।