খুলনায় আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশ

স্মার্ট সরকার গড়তে নৌকায় ভোট চাইলেন শেখ হাসিনা

প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  বিশেষ প্রতিনিধি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আরেকবার দেশবাসীকে সেবা করার সুযোগ চেয়ে তিনি বলেন- ‘আমরা স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি গড়তে চাই।’ একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতকে ‘মু-হীন দল’ উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

গতকাল খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে খুলনা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য এদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করা। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসেছি। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। গণতন্ত্র আছে বলেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। আমি এদেশের মানুষের ভাগ্য গড়ে দিতে চাই। বাংলার মানুষ আমাকে আপন করে নিয়েছে, আমি তাদের উন্নয়ন করে যেতে চাই। এখনকার বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, অবহেলার বাংলাদেশ নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের দোসর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে মোংলা বন্দর বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবারও চালু করে। এখন ভারত, নেপাল ও ভুটান মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারছে।

‘আগুন দিয়ে যারা মানুষ মারে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না’- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের কাজই আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা। আপনারা দেখেছেন, গত ২৮ তারিখে তারা পিটিয়ে আর কুপিয়ে হত্যা করেছে একজন পুলিশকে। আরো ৪৫ জন আহত হয়েছে। সাংবাদিকদেরও তারা ছাড় দেয়নি। সাংবাদিকদেরও পিটিয়েছে। এমনকি হাসপাতালে হামলা চালিয়ে অসংখ্য অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়ে দিয়েছে। রাজারবাগ পুলিশ স্টেশনে ঢুকে হাসপাতালে আক্রমণ করেছে। কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ভেঙেছে, পুড়িয়ে দিয়েছে, যা তারা শুরু করেছিল ২০১৩ সালে। হাজার হাজার মানুষকে ওই সময় তারা পুড়িয়ে মেরেছিল। তারা বাস, ট্রেন পুড়িয়েছে।’ ‘বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এরা মানুষের জন্য কাজ করে না। আগুন দিতে এলে আপনারাই ওই হাত আগুনে পুড়িয়ে দেবেন।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন জনগণের উন্নয়ন হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয় বিএনপি মানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। বিএনপি-জামায়াতের কাজই হচ্ছে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা। মানুষ খুন তাদের একমাত্র গুণ। বিএনপি-জামায়াতের আর কোনো গুণ নেই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন দেশের টাকা চুরি করেছে। এখন একজন সেই চুরির টাকায় লন্ডনে বসে খরচ করছে আর আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। তাই আমরা ঘোষণা করেছি যারা অগ্নিসংযোগকারীদের ধরিয়ে দিতে পারবে তাদের ২০ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হবে।’ সরকারপ্রধান বলেন, ‘ইসরাইল যেমন ফিলিস্তিনে হাসপাতাল এমনকি বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারছে, বিএনপিও তেমনি করছে। আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা এই শিক্ষা ইসরাইলের কাছ থেকে শিখেছে বিএনপি। তারা বাংলাদেশ চায় না, বাংলাদেশের ধ্বংস চায়।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এখন মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বিএনপির সময়ে দেশে যে খাদ্য ঘাটতি ছিল, তা থেকে আমরা দেশকে উত্তরণ করেছি।’

খালেদা জিয়ার সময় দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়েনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশে ৪ কোটি ৯৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন করছি।

তিনি আরো বলেন, ‘বারবার সরকার গঠন করেছি, আমারতো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি মানুষের ভাগ্য বদল করতে চাই। বাংলাদেশের জনগণ আমার পরিবার। আপনারাই বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন।’

নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকা স্বাধীনতা দিয়েছে, উন্নয়ন দিয়েছে। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আরেকবার সেবা করার সুযোগ দেবেন।’

খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাফর উল্লাহ, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, মোজাম্মেল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল প্রমুখ। এর আগে বিকাল পৌনে ৩টায় খুলনায় সার্কিট হাউজ মাঠে ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এরপর খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত খুলনা বিভাগীয় জনসভায় যোগ দেন শেখ হাসিনা। পাঁচ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর এ মহাসমাবেশ ঘিরে খুলনা পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে। সমাবেশস্থল ও আশপাশে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে দুপুর পৌনে ১টায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে নির্মিত হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন। এরপর দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত সার্কিট হাউজে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন তিনি।