আগামী নির্বাচনে মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দেবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২৪ মন্ত্রণালয়/বিভাগের ১৫৭টি প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী নির্মিত ১০ হাজার ৪১টি অবকাঠামোর সমন্বিত উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। হয়তো দুয়েক দিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তারিখ ও সময় (তফসিল) ঘোষণা করবে। জনগণের ভোটের অধিকার আমরাই নিশ্চিত করেছি। কাজেই জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোট দেবে। জনগণ যাতে সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সেজন্য আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন তথা নির্বাচন ব্যবস্থার যাবতীয় সংস্কার আওয়ামী লীগের প্রস্তাবেই করা হয়েছে। কারণ, রাতের অন্ধকারে অস্ত্র তুলে ক্ষমতা দখল করে জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

বিএনপি’র প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অনেকে নির্বাচনে আসতে চায় না। কারণ, যারা ৩০টি সিট পেয়েছিল ২০০৮ সালে স্বাভাবিকভাবে তাদের নির্বাচনে আসার কোন আকাঙ্খাই থাকবে না। নির্বাচন বানচাল করে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে আবার বাংলাদেশের মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলাই তাদের চেষ্টা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি এদেশের মানুষ একটু শান্তিতে ছিল, স্বস্তিতে ছিল, উন্নয়ন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে এই অবরোধ আর অগ্নিসন্ত্রাস-জালাওপোড়াও। গাড়িতে আগুন বাসে আগুন দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রা যেমন ব্যাহত করা হচ্ছে, স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা ঠিকভাবে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারছে না। তাদের লেখাপড়া নষ্ট হচ্ছে। অথচ বিএনপি’র আমলে যেখানে সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৪৫ শতাংশ, সেখান থেকে বর্তমানে আমরা সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত করেছি। আজকে সমস্ত ছেলেমেয়ে, প্রায় ৯৮ ভাগ ছেলেমেয়ে স্কুলে যাচ্ছে। সেসব কিছু আজকে ব্যাহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিএনপি-জামায়াতের শুভবুদ্ধির উদয় হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি এটুকু বলব, ওদের সুমতি হোক। এই ধ্বংসযজ্ঞ তারা বন্ধ করুক। অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ করুক।’

অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ফের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, দেশবাসীকেও বলব, যে এই অগ্নিসন্ত্রাস আপনাদের প্রতিরোধ করতে হবে। সবারই জানমাল আছে। ২০১৩, ১৪ ও পরবর্তী সময়ে যে অগ্নিসন্ত্রাস, ভুক্তভোগীদের যন্ত্রণা ও কষ্ট আমরা দেখেছি। কাজেই এই ভোগান্তি যেন মানুষের আর না হয়। আজ আমরা যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি তা আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। সেজন্য সরকারের ধারাবাহিকতাও প্রয়োজন। ৯৬ সালে তিনি সরকারের এসে দেশকে খাদ্য ঘাটতির একটি দেশ হিসেবে পেয়েছিলেন, ৪০ লাখ মেট্রিক টন ছিল খাদ্য ঘাটতি। উৎপাদন হতো ৬৯ বা ৭৯ লাখ মেট্রিক টন। ওই সময় আওয়ামী লীগ সরকার গবেষণা ও খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়ে আলাদা বরাদ্দ দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলে। সে সময় চালের দাম ছিল মাত্র ১০ টাকা। মূল্যস্ফীতি ছিল ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। যখন তার মেয়াদ শেষে দেশে প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তখন ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য দেশে উদ্বৃত্ত রেখে যান। পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশকে আবার খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত করে। দেশের গ্যাস বিক্রির দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে রাজি না হওয়ায় ভোট বেশি পেলেও পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এরপর বাংলাদেশে দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-বাংলাভাই-বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, একইসাথে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা- এগুলো বাংলাদেশের মানুষকে মোকাবিলা করতে হয়। ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের পর থেকে ৭১ এর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার ন্যয় বর্বরতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীও এরকম নির্যাতনের শিকার হয়। আইনজীবী হত্যা, জেলা জজকে বোমা মেরে হত্যা এমনকি ছয় বছরের ছোট্ট রজুফাও গ্যাং রেপ থেকে রেহাই পায়নি। অনেক মেয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। এদের বিরুদ্ধে মামলা করায় ভিটিমাটি থেকে উৎখাত হতে হয়। দুর্নীতিতে বাংলাদেশ পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। আর এই অবস্থার জন্যই দেশে জরুরি অবস্থা আসে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে যেখানে বিএনপি ৩০ আসন পেয়েছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় যখন নির্বাচন বানচালের অনেক চেষ্টা হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনেও একই ঘটনা ঘটায় তারা। আমরা জনগণের ভোটেই বারবার নির্বাচিত হয়ে এসেছি। আওয়ামী লীগ কোনো দিন গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া সরকার গঠন করে নাই। আজ দেশের যে প্রভূত উন্নয়ন তা দীর্ঘসময় একটানা ক্ষমতায় থাকতে পারার জন্যই বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে সক্ষমতা ১ হাজর ৬০০ মেগাওয়াট ছিল, তা বর্তমানে ২৮ হাজার মেগাওয়াটের ওপরে উন্নীত হয়েছে। প্রতি ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বেলেছে সরকার। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে পাওয়া ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকে উৎপাদন বাড়িয়ে ক্ষমতা ছাড়ার সময় ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে রেখে যায়। কিন্তু পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকার ১ ইউনিটও উৎপাদন না বাড়িয়ে উল্টো বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩ হাজার মেগাওয়াটে নামিয়ে আনে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাড়ে ১৪ বছরে আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশকে আর কেউ অবহেলার চোখে দেখে না। বাংলাদেশ আজকে বিশ্বে একটি মর্যাদাশীল দেশ। উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের সেই মর্যাদাটা আমরা আবার ফিরিয়ে আনতে পেরেছি; যেটা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর আমরা পেয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ায় কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং খাদ্য মন্ত্রী সাধান চন্দ্র মজুমদার। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

১১টি জেলাকে ও ৬০টি উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীণ মুক্ত ঘোষণা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলায় কেউ ভূমিহীন-গৃহহীণ থাকবে না’- বলে এই অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে ১১টি জেলা ও ৬০টি উপজেলা সম্পূর্ণ ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত বলে ঘোষণা করেন। জেলাগুলো হচ্ছে- টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, পটুয়াখালী, সিলেট ও মৌলভীবাজার। এ নিয়ে দেশের মোট ভূমিহীন ও গৃহহীণ মুক্ত জেলার সংখ্যা দাঁড়াল ৩২টি এবং উপজেলার সংখ্যা দাঁড়াল ৩৯৪টি।