যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সংলাপ প্রস্তাবে বিএনপিরও শর্ত!

প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আমিরুল ইসলাম অমর

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। এরই মধ্যে এ তিন দলের নেতাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে মার্কিন দূতাবাস থেকে। তবে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি বিএনপি ও জাতীয় পার্টি নিশ্চিত করলেও এখনো নিশ্চিত করেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সূত্র মতে, যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সংলাপের বিষয়টি বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সতর্কভাবে পর্যালোচনা করছে। বিএনপির পক্ষ বলা হচ্ছে- সংলাপে অংশ নেয়ার আগে তাদের কয়েকটি শর্ত রয়েছে। এসব শর্তের মধ্যে নেতাকর্মীদের মুক্তি, অবাধে দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া কোনো ধরনের সংলাপে অংশ নেবে না বলে বিএনপি ঘোষণা দিয়ে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শর্তহীন সংলাপের জন্য যে আহ্বান জানিয়েছে- এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে সংলাপ করতে আগ্রহী বিএনপি। তবে, ওই সংলাপের আগে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ দলের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। তাদের মুক্তি না দিলে কারা সংলাপ করবে? দলটির নেতারা মনে করছেন, রাজপথে সংঘাত সহিংসতা এড়িয়ে সংলাপের মাধ্যমে যদি নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা করা যায়, সেটা মঙ্গলজনক। দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সেই বিকল্পটি ব্যবহার করতে চায়। তবে সংলাপ ফলপ্রসূ না হলে সেক্ষেত্রে রাজপথের সমাধান আদায়ের ব্যাপারেও নেতাকর্মীদের অবস্থান থাকবে।

দলীয় সূত্র থেকে জানা যায়, সংলাপে বসলে বিএনপি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরবে। সার্বিক পরিস্থিতিতে সতর্কতা অবলম্বন করছে বিএনপি। কেন না, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর চিঠিকে রাজনৈতিক ঝড়ের পূর্বাভাস হিসেবেও দেখছে দলের নেতাকর্মীরা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু শর্তহীন সংলাপের যে আহ্বান জানিয়েছে তা বিএনপি নেতারা কীভাবে দেখছেন- জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, এ বিষয়ে দল থেকে বিস্তারিত জানানো হবে। দলের মহাসচিবসহ অনেক সিনিয়র নেতাই কারাগারে। সংলাপ হলে তাদের মুক্তিও প্রয়োজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপের আহ্বান দল ইতিবাচকভাবেই দেখছে। সার্বিক বিষয় নেতারা সতর্কভাবে পর্যালোচনা করছেন। পর্যালোচনা শেষে শিগগিরই চিঠির জবাব লিখিতভাবে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসকে জানানো হবে।

তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে সংলাপ করতে আমরা আগ্রহী। এর জন্য দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ সিনিয়র নেতাদের মুক্তি দিতে হবে। নেতাকর্মীদের অবাধে চলাফেরা করার সুযোগ দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন যেকোনো সময় তফসিল ঘোষণা করবে। আর এদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ। নেতাকর্মীরা কেউ প্রকাশ্যে আসতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাকে পাচ্ছে, তাকেই গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে- এমন পরিস্থিতি থাকলেতো সংলাপ করা যাবে না।

জানা মতে, সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসও এমন শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছিলেন, ‘আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, তারপর সংলাপ।’ তখন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলও একই কথা বলেছিলেন। দলীয় সূত্র থেকে জানা যায়, দলটি যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে শর্তহীন সংলাপে যেতে চাইলেও তাদের শর্ত থেকেই যায়। কারণ, তারা সংলাপের আগে বিএনপি মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতাদের মুক্তি চায়। নেতাকর্মীদের অবাধে রাজনীতি করতে দেয়ার সুযোগ চায়। বিশ্লেষণে দেখা যায়, শর্তহীন সংলাপের পূর্বে পাল্টা শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। প্রসঙ্গত, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে একদফা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা, নেতাকর্মীদের হত্যা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি-হয়রানি ও নির্যাতনের প্রতিবাদে গত ২৯ অক্টোবর সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি পালন করে দলটি। এরপর থেকে দফায় দফায় অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। এবার পঞ্চম দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে দলটি।