ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ডব্লিউএইচও

গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল এখন প্রায় কবরস্থান

গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল এখন প্রায় কবরস্থান

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল পরিণত হচ্ছে কবরস্থানে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে। এমনকি গাজার এই হাসপাতালটি মৃতদেহ দাফন করতে পারছে না বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। গাজায় টানা প্রায় দেড় মাস ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ১১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও। গাজার সবচেয়ে বড় দুটি হাসপাতাল এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার বৃহত্তম আল-শিফা হাসপাতালকে ‘প্রায় কবরস্থান’ বলে বর্ণনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত এই হাসপাতালটি গত কয়েক দিন ধরে তীব্র লড়াইয়ের শিকার হয়েছে।

ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে হাসপাতালের নিচে অবস্থিত একটি টানেলে হামাস কমান্ড-অ্যান্ড-কন্ট্রোল সেন্টার পরিচালনা করছে। তবে হামাস এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এটি অস্বীকার করেছে।

এই পরিস্থিতিতে ডব্লিউএইচওর মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার বলেছেন, এখনো প্রায় ৬০০ জন হাসপাতালটিতে রয়ে গেছেন এবং অন্যরা হাসপাতালের হলওয়েতে আশ্রয় নিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের আশপাশে এমন অনেক মৃতদেহ পড়ে আছে যেগুলোর কাছে যাওয়া যাচ্ছে না, এমনকি দাফনও করা যাচ্ছে না বা সেগুলো উদ্ধার করে কোনো মর্গেও নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। যেভাবে কাজ করা উচিত হাসপাতালটি এখন আর সেভাবে কাজ করছে না। এটি এখন প্রায় একটি কবরস্থান।’

এদিকে হাসপাতালে মৃতদেহ জমে ও পচে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ড. মোহাম্মদ আবু সেলমিয়া বিবিসিকে বলেছেন, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ এখনও পচনশীল মৃতদেহগুলোকে দাফন করার জন্য হাসপাতালের বাইরে নেওয়ার অনুমতি দেয়নি। এতে করে কুকুর এখন হাসপাতালের মাঠে ঢুকে মৃতদেহ খেতে শুরু করেছে।

অন্যদিকে আল-শিফা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে রোগীরা। জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালের ইনকিউবেটরে থাকা কয়েক ডজন শিশুর জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। মূলত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে তারা ইনকিউবেটরে আর থাকতে পারছে না। সেলমিয়া জানান, অক্সিজেনের অভাবে সাতটি শিশু মারা গেছে।

অবশ্য ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সিনিয়র উপদেষ্টা মার্ক রেগেভ দাবি করেছেন, ইসরাইল ওই শিশুদের সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও হামাস সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।

উষ্ণ রাখতে ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে রাখা হচ্ছে গাজার নবজাতকদের : এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজার হাসপাতালগুলো খুব বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরই মধ্যে গাজা উপত্যকাটির প্রায় সব হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতির মাঝে জন্ম নেওয়া অপরিণত নবজাতকদের বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন স্থানীয় চিকিৎসকরা। জানা গেছে, বিদ্যুতের অভাবে হাসপাতালের ইনকিউবেটর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নবজাতকদের ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে গরম পানির পাশে রাখা হচ্ছে।

অপরিণত বয়সে জন্ম নেওয়া নবজাতকদের ইনকিউবেটরে রাখতে হয়, যা চালাতে বিদ্যুতের দরকার হয়। কিন্তু বিদ্যুৎহীন গাজায় জ্বালানি ঢুকতে না দেওয়ায় হাসপাতালগুলোর জেনারেটর বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ইনকিউবেটরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রথম থেকেই ইসরাইলের মূল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে গাজার আল-শিফা হাসপাতাল। এর আশপাশের রাস্তায়গুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলেছে, হাসপাতালটির জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে আগেই। এতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র, শিশু বিভাগ, অক্সিজেন ডিভাইসগুলোসহ বন্ধ হয়ে গেছে উপত্যকার সবচেয়ে বড় হাসপাতালটির চিকিৎসা কার্যক্রম। গত সোমবার পর্যন্ত এই হাসপাতালে মোট ছয়টি অপরিণত নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে অপরিণত নবজাতকদের বাঁচিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বিদ্যুৎ ও অক্সিজেন সরবরাহ ফুরিয়ে যাওয়ায় ইনকিউবেটর থেকে সরিয়ে তাদের ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে গরম পানির পাশে রাখা হচ্ছে। সিএনএন আল-শিফা হাসপাতালের একটি ছবি প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি নবজাতককে বিছানায় একসঙ্গে রাখা হয়েছে, যারা ইনকিউবেটরে ছিল তারা। এ বিষয়ে হাসপাতালটির পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেন, অপরিণত নবজাতকদের ইনকিউবেটর থেকে বের করে ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে গরম পানির পাশে রাখা হয়েছে। যাতে তারা উষ্ণ থাকে। পরিচালক আবু সালমিয়া আরো বলেন, বিদ্যুতের অভাবে হাসপাতালের ভেতরের কোনো অপারেটিং কক্ষই কাজ করছে না, যাদের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন, তারা মারা যাচ্ছেন। আমরা কিছুই করতে পারছি না। সূত্র : সিএনএন, আলজাজিরা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত