মন্ত্রী-এমপিদের আচরণবিধি মেনে চলতে ইসির নির্দেশ

৩০০ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

মন্ত্রী-এমপিদের সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারদের বদলির ক্ষেত্রে কমিশনের অনুমোদন নিতে হবে।

গতকাল নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম এসব কথা জানান।

নির্বাচনের সময় শুরু হলো। মন্ত্রী-এমপিরা আগে যেভাবে কাজ করতেন, এখন সেভাবে করবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমত নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনপূর্ব সময় বলতে তপশিল ঘোষণার দিন থেকে বলা আছে। আইনে বলা আছে, নির্বাচনের ফল ঘোষণার সময় পর্যন্ত রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীদের আচরণ বিধিমালা-২০০৮ অনুসরণ করতে হবে। মন্ত্রী-এমপিদের প্রচার-প্রচারণা নিয়ে কোনো পরিপত্র জারি হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না। যেহেতু এটি আইনে আছে, সেহেতু প্রয়োজন নেই। ইসি সচিব বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আইনে সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া আছে, নির্বাচনকালীন কোনো বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের পূর্ব অনুমোদন নিতে হবে। সেখানে বলে দেওয়া আছে জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারসহ কয়েকজন এবং তাদের অধস্তনদের বদলির ক্ষেত্রে কমিশনের পূর্ব অনুমোদন নিতে হবে। সুতরাং, তারা কমিশনের আওতায় চলে আসবেন, অধীন আসবেন- আইনে কিন্তু এভাবে বলা নেই। বলা আছে, কমিশনের পূর্ব অনুমোদন নিতে হবে।

বদলি নিয়ে তিনি বলেন, গত বুধবার সন্ধ্যায় তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে। সে সময়ের আগে যদি বদলি বা পদোন্নতি করা হয়ে থাকে সেটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। আইনে যে পদমর্যাদার কথা বলা আছে, সে পদমর্যাদার বদলির প্রস্তাব যদি কমিশনে আসে, কমিশন অনাপত্তি জানাতে পারে, আপত্তিও জানাতে পারে। এ পর্যন্ত এ ধরনের কোনো প্রস্তাব আমাদের কাছে আসেনি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ব্যালট পেপার ছাপানো হবে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে। সেগুলো জেলা পর্যায়ে যাবে নির্বাচনের তিন-চারদিন আগ থেকে। সে সময় এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করা হবে। স্থানীয় সরকারের মেয়র বা মেয়র পদত্যাগ কার কাছে করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা আইনে বলা আছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেবে।

আগাম প্রচারণার বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, এগুলো আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছি যে, তারা তাদের মতো করে উদ্যোগ নেবেন। নির্বাচনি প্রচারের ক্ষেত্রে বলা আছে, নির্বাচন যেদিন হবে, তার ২১ দিনের আগে কখনোই প্রচার-প্রচারণা করা যাবে না। এ সময়ের মধ্যেই প্রচার চালাতে হবে। যেহেতু ৭ জানুয়ারি ভোট হবে, সে হিসাবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টার আগে থেকে প্রতীক বরাদ্দের দিন পর্যন্ত, এ সময়ে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।

সচিব বলেন, প্রটেকশন হলো নিরাপত্তা, আর প্রটোকল হলো যিনি যে পদে যাবেন, সে পদ অনুযায়ী তিনি যতটুকু সম্মান পাবেন সেটা।

এদিকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অপরাধ তদন্ত করে আমলে নেওয়ার জন্য ৩০০ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। ভোটের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে এই কমিটি।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইন ও বিচার বিভাগের সচিবকে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি আসনের জন্য গঠিত এই কমিটিতে যুগ্ম জেলা জজ প্রয়োজনের সিনিয়র সহকারী জজ দায়িত্ব পালন করবেন।

আইন ও বিচার বিভাগের সচিবকে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আইনে ১১ (১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ১৫ নভেম্বর তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, আগামী ০৭ জানুয়ারি (রোববার) ভোটের দিন ধার্য করা হয়েছে।

আইন অনুযায়ী জাতীয় সংসদের সাধারণ আসনের নির্বাচনে নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করার বিধান রয়েছে।

এই অনুসন্ধান কমিটিসমূহ ‘নির্বাচন-পূর্ব সময়’ অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচনি তপশিল ঘোষণার দিন থেকে নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশের তারিখ পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার বিধি ১৭-এর বিধান অনুযায়ী নির্বাচনি অপরাধ, নির্বাচনি আচরণবিধি এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি বা পরিচালনায় বাধাগ্রস্ত বা ব্যাহত করে এমন ‘নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম’ সংক্রান্ত বিষয়াদির অনুসন্ধান করে নির্বাচন কমিশনকে অনুসন্ধানের পরবর্তী ৩ (তিন) দিনের মধ্যে অবহিত করবে।

নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশের সময় পর্যন্ত নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করবেন- মর্মে নির্বাচন কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ৩০০টি সংসদীয় আসনে ০১ (এক) জন যুগ্ম জেলা জজ বা প্রয়োজনবোধে সিনিয়র সহকারী জজ বিশিষ্ট ৩০০টি নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।

সিইসি ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং অফিসাররা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি (রোববার)।

সংসদ ভোট পর্যবেক্ষণে দেশি সংস্থার আবেদন চাইল ইসি : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য দেশিয় সংস্থাগুলোর কাছে আবেদন চেয়েছে ইসি।

এতে বলা হয়েছে, আগামী ৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৩ এর ৭.১.ক ধারা মতে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা হওয়ার ১০ (দশ) দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২৫ নভেম্বর ২০২৩ তারিখের মধ্যে পর্যবেক্ষক সংস্থাকে কোন কোন নির্বাচনি এলাকা (সংসদীয় আসনভিত্তিক) বা এলাকাসমূহে কেন্দ্রীয় বা স্থানীয়ভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে ইচ্ছুক, তা উল্লেখপূর্বক নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব বরাবর লিখিত আবেদন করার বিধান রয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইচ্ছুক নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাসমূহকে নির্ধারিত ছক ও আবেদনপত্রের নমুনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্যাডে (হার্ডকপি) আবেদন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন থেকে অনুমতি পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র ও গাড়ির স্টিকার নির্বাচন কমিশন সচিবালয় হতে সরবরাহ করা হবে। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র ও গাড়ির স্টিকার সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং/সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে প্রদান করা হবে।