ভরাডুবি হবে জেনেই নির্বাচন প্রতিহতের অপচেষ্টায় বিএনপি

‘রূপসী বাংলা’ আলোকচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন শেষে ড. হাছান মাহমুদ

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ভরাডুবি হবে জেনেই বিএনপি নির্বাচন প্রতিহতের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বিএনপি যেভাবে নিষিদ্ধ সংগঠনের মতো গুপ্তস্থান থেকে অনলাইনে গাড়িঘোড়া পোড়ানোর নির্দেশ দিচ্ছে, মানুষের ওপর হামলা পরিচালনা করছে, এরপর তো মানুষের কাছে যাওয়ার কোনো সুযোগ তাদের নাই। তারা জানে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তাদের ভরাডুবি হবে। সে জন্য তারা নির্বাচন প্রতিহত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক আয়োজন ‘রূপসী বাংলা’ আলোকচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন শেষে ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইন্দ্রজিৎ কুমার ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক কাজী বোরহান উদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

‘তপশিল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি জ্বালাওপোড়াও করছে, বিএনপি নেতা রিজভী অজ্ঞাত স্থান থেকে বলছেন, তারা নির্বাচন হতে দেবে না’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালেও নির্বাচন প্রতিহত করার অনেক চেষ্টা হয়েছিল। নির্বাচন প্রতিহত করে বিএনপি গণতন্ত্রের যাত্রাকে প্রতিহত করতে চেয়েছিল, তারা পারেনি। ২০১৮ সালেও সেই অপচেষ্টা ছিল, সেটিও পারেনি। এখন বিএনপির শক্তি, সামর্থ্য, ক্ষমতা ২০১৪ এবং ২০১৮ তুলনায় অনেক কম।’

হাছান মাহমুদ বলেন, মাঝেমধ্যে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে যেভাবে বাস, গাড়িঘোড়া পোড়াচ্ছে এবং মানুষের ওপর হামলা পরিচালনা করছে, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারছে এগুলো কোনো রাজনৈতিক দলের কাজ নয়। এগুলো জঘণ্য সন্ত্রাসীদের কাজ। বিএনপি এখন আসলে রাজনৈতিক দলের চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে, সন্ত্রাসী সংগঠনে রূপান্তরিত হয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতাদের সবার বিরুদ্ধে তো মামলা নাই, সবার বিরুদ্ধে তো ওয়ারেন্ট নাই, কিন্তু কাউকে দেখা যাচ্ছে না। কারণ তারা ২৮ অক্টোবর যে অপরাধ করেছে এবং এর পরবর্তী প্রতিটি দিন যে অপরাধ সংঘঠিত করে যাচ্ছে, এ জন্য জনগণের কাছে চেহারা দেখানোর সাহসটা তাদের নাই, প্রকাশ্যে আসার সেই সাহসটা নাই।

দু’টি কারণে আজকে বিএনপির জনপ্রিয়তা তলানিতে গেছে- উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘একটি হচ্ছে গাজায় ইসরাইলি বাহিনী যেভাবে মানুষকে হত্যা করেছে, সেটির প্রতিবাদ সারা পৃথিবীজুড়ে হয়েছে, এমন কি অনেক ইহুদিও সেটির প্রতিবাদ করেছে, শুধু বিএনপি এবং জামায়াত সেটির প্রতিবাদ করেনি। এ দেশের সব মুসলমানকে তারা আহত করেছে, সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলের দোসরে পরিণত হয়েছে। আর অপরটি হলো, ইসরাইলি বাহিনীর অনুকরণে তারা নিরীহ মানুষ, সাংবাদিক, পুলিশ, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, গাড়িঘোড়ার ওপর হামলা পরিচালনা করছে, অগ্নিসন্ত্রাস করছে।’

বিএনপি দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাদের অনেক নেতা অংশ নেবেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন গত বুধবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির দুই নেতা ঘোষণা দিয়েছেন যে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, তাদের সঙ্গে আরো শতাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। সুতরাং এগুলো করে বিএনপির কোনো লাভ হবে না।

নির্বাচনী তপশিল ঘোষণা প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন তপশিল ঘোষণা করেছে। নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং জনগণের রায় নিয়ে নতুন সরকার গঠিত হবে। জনগণ ব্যাপকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। একটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও বহু দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, বিএনপির নেতারাও অংশগ্রহণ করবে।

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু প্রেরিত চিঠি প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র। তাদের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা বৈশ্বিক অঙ্গনেও সন্ত্রাস দমনের পক্ষে একযোগে কাজ করছি। তাদের পরামর্শকে আমরা অবশ্যই মূল্য দেই। আমাদের কাছে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর পরামর্শের অবশ্যই মূল্য আছে। পাশাপাশি দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য, দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত আমাদেরই নিতে হয়, আমরা নেই।’

সংলাপ প্রশ্নে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি তো সংলাপ নাকচ করে দিয়েছে। বিএনপি বলেছে এখন সংলাপের কোনো পরিবেশ নাই। আমরা অবশ্যই সংলাপের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু কোনো সন্ত্রাসীর সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাপিটল হিলে হামলা হওয়ার পর সেই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন বা সরকার আলোচনায় বসেছে! তাদের বরং গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বিচার হচ্ছে। আমাদের দেশেও যারা গাড়িঘোড়া পোড়াচ্ছে তাদের সঙ্গে কি আলোচনা হতে পারে? আলোচনা হতে পারে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে, সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে নয়।’

এর আগে আলোকচিত্র প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য মন্ত্রী ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশন এবং শিল্পকলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, একটা সংবাদ যখন কোনো পত্রিকায় ছাপা হয়, এর সঙ্গে যখন ছবি যায় মানুষ সেটা অনেক বেশি পড়ে এবং ছবিই কথা বলে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ছবিগুলো যদি না থাকত, তাহলে কি আমরা মুক্তিযুদ্ধকে আজকে যেভাবে জানতে পারছি নতুন প্রজন্ম যেভাবে জানতে পারছে সেটি কি পারত!

আমাদের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা উত্তরকালে বহু কালজয়ী ছবি ফটোজার্নালিস্টরা তুলেছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, একজন ফটোজার্নালিস্টের ফটো তোলার মুন্সিয়ানার কারণে সংবাদের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। ফটোজার্নালিস্টরা অনেক সময় সমাজের অনুন্মোচিত বিষয়গুলো উন্মেচিত করে এ জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।