ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এলএনজি সরবরাহ কম

সহসা চট্টগ্রামে কাটছে না গ্যাস সংকট

সহসা চট্টগ্রামে কাটছে না গ্যাস সংকট

চট্টগ্রামে এলএনজি (লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস) সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে সংকট। এলএনজির একটি টার্মিনাল ড্রাইডকে পাঠানো হয়েছে মেরামতের জন্য। আর এতেই কমে গেছে সার্বিক গ্যাস সরবরাহ। আগামী দেড় থেকে দু’মাস লাগবে ট্রার্মিনালটি মেরামত করতে। এর আগে সংকট দূর হবে না বলে জানিয়েছেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। শীত জেঁকে বসলে এমনিতে পাইপ লাইনে গ্যাসের চাপ কমে যায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এলএনজি সরবরাহে ঘাটতি। দুই সংকট মিলে গ্যাসের সরবরাহ নিয়ে ভোগান্তির মুখে পড়েছেন চট্টগ্রামের কয়েক লাখ গ্রাহক।

জানা যায়, এলএনজি টার্মিনাল হলো মূলত আমদানি করা গ্যাসের একটি স্টোরেজ ট্যাঙ্ক। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা গ্যাস এসব টার্মিনালে ভর্তি করা হয়। এরপর তা গ্রাহক পর্যায়ে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। সরাসরি গ্রাহক পর্যায়ে টার্মিনাল থেকে সরবরাহ হয় না। টার্মিনাল থেকে প্রথমে গ্রিড পাইপ লাইনে সরবরাহ করা হয়। এরপর গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করে কেজিডিসিএল। গেল ২ নভেম্বরে সিঙ্গাপুরের ড্রাইডকে মেরামতের জন্য পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেডের (ইইবিএল) এলএনজি টার্মিনালটি। ২০১৭ সালে কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান এ টার্মিনালটি স্থাপন করা হয়। ১ লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার ধারণক্ষমতার এ টার্মিনালটি স্থাপনের সময় পাঁচ বছর পরপর মেইনটেন্যান্সের জন্য ড্রাইডকে পাঠানোর শর্ত দেওয়া হয়। শর্ত মেনে ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট থেকে শুরু হয় এলএনজি সরবরাহ। একই শর্তে দেশীয় সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানি লিমিটেড (এসএলএনজি) আরো একটি এলএনজি টার্মিনাল বসায়। যা ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু করে। এলএনজি টার্মিনালগুলো ব্যবস্থাপনার জন্য দেওয়া হয় রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডকে (আরপিজিসিএল)।

আরপিজিসিএলের এলএনজি ডিভিশনের কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিক নিয়মে পাঁচ বছর পর পর ড্রাইডকে পাঠাতে হয়। আমরা ইইবিএলের এলএনজি টার্মিনাল অনেকটা দেরিতে পাঠিয়েছি। এজন্য আমরা অবশ্য পূর্ব অনুমতিও নিয়েছিলাম। যদি এর বেশি সময় আমরা নিই, তাহলে আমাদের টার্মিনালে আর কোনো জাহাজও ভিড়বে না। তাই নিয়ম মেনে ২ নভেম্বরে ড্রাইডকে পাঠানো হয়েছে। টার্মিনালটি ডিসেম্বরের শেষ দিকে ফিরে আসবে বলে আশা করছি। এরপর সংকট কেটে যাবে।

তারা আরো বলেন, অন্য টার্মিনালটি ড্রাইডকে পাঠানো হবে। প্রথমটা ফেরত আসার পর আগামী বছরের জানুয়ারিতে সামিটের (এসএলএনজি) টার্মিনালটি পাঠানো হবে। ওটা ফিরে আসতেও দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগবে।

জানা যায়, গ্যাস রূপান্তরিত আরপিজিসিএল কাজ করলেও সরবরাহের কাজ করে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)। জিটিসিএল চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্ণফুলী গ্যাস ডিসস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডসহ (কেজিডিসিএল) মোট ছয়টি বিতরণ সংস্থাকে গ্যাস সরবরাহ করে থাকে।

জিটিসিএলের এক কর্মকর্তা জানান, একটি টার্মিনাল না থাকায় সরবরাহ স্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। আমরা নিয়মিত ৮০০ থেকে ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেতাম। সেটা পেট্রোবাংলার ডিস্ট্রিবিউশন অর্ডার অনুযায়ী সরবরাহ করতাম। আর এখন গড়ে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছি। তাই ডিস্ট্রিবিউশনও কিছুটা কমিয়ে আনতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেজিডিসিএলকে যতটুকু দেওয়া হয়েছে, আগামীতে তার পরিমাণ আরো কমতে পারে। পেট্রোবাংলার অর্ডার অনুযায়ী আমরা এ ব্যবস্থা নিব। এছাড়া কোনো উপায় নেই। পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, সামনে বোরো মৌসুম। সেদিক বিবেচনা করে এখন কেজিডিসিএলে সরবরাহ অনেকটা ঠিক রাখা হয়েছে। ওখানে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সার কারখানাগুলোতে। এখন দুইটি কারখানাই চালু রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কম। তাই ওখানে সরবরাহ কমানো হয়েছে। সামনে (আগামীতে) চাহিদার পরিবর্তন হবে। সেটা বিবেচনা করেই নেক্সট শিডিউলে পরিবর্তন আসতে পারে।

উল্লেখ্য, এক সময় কুমিল্লার বাখরাবাদ, ফেনী বা সিলেট অঞ্চলের গ্যাসক্ষেত্র থেকে জাতীয় গ্রিড হয়ে কেজিডিসিএলে গ্যাস সরবরাহ করা হতো। দেশের জ্বালানি ঘাটতি মেটাতে ২০১০ সালে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এলএনজি সরবরাহ শুরু হওয়ার পর থেকে কেজিডিসিএলকে পুরোপুরি এলএনজিনির্ভর করা হয়েছে। প্রায় সময় চাহিদার বিপরীতে বিপুল গ্যাসের ঘাটতি থাকে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত