ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ পেল ১২ সংগঠন

‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ পেল ১২ সংগঠন

তরুণ স্বপ্নদর্শীদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টার স্বীকৃতি দিয়ে ঘোষিত ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’ পেল ১২টি সংগঠন। গতকাল বিকালে সাভারের শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা এবং সিআরআই চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ জয়।

‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়া সংগঠনগুলো ছাড়াও ৩০০টির বেশি সংগঠন নিয়ে ইয়াং বাংলা বর্তমানে তারুণ্যের সর্ববৃহৎ প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। এই সংগঠনগুলোসহ ইয়াং বাংলার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক ও ৩ লাখের বেশি সদস্য। ২০২২ সালের মে মাসে ইয়াং বাংলার সদস্য হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইয়াং বাংলার উদ্যোগে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের’ সপ্তম আসরের চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয় আজ। এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে অ্যাওয়ার্ডের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়; যা ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলে। সারা দেশ থেকে আসা ৭৫০টিরও বেশি সংগঠনের আবেদনের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই ও ফিল্ড ভিজিট শেষে ৬ ক্যাটাগরিতে এবার ১২টি সংগঠনকে প্রদান করা হয় ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’।

এবারের পুরস্কারের জন্য গঠিত জুরি বোর্ডে ছিলেন অ্যাক্টিভিস্ট ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর, মুক্তিযোদ্ধা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মখদুম নার্গিস, সাংবাদিক ও আর্টিস্ট এলিটা করিম, অভিনয় শিল্পী মোশাররফ করিম, উদ্যোক্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মালিহা মান্নান আহমেদ, বাংলাদেশ নারী জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি এবং সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক।

‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে ধারণ করে তরুণদের দেশ গঠনে উদ্বুদ্ধ করতে নিয়মিত প্রদান করা হয় জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড। আয়োজক ইয়াং বাংলা জানায়, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে পরিচিত করে তুলতে এবং বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ের সমস্যাগুলোর সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। তাদের কাজের স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে অনুপ্রেরণা দিতেই এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো সমাজে বাল্যবিবাহ বন্ধ, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষাদান ও সুস্থদের সহযোগিতা করা যুবক ও যুব সংগঠনকে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’-এর আওতায় পুরস্কৃত করা হয়। গত কয়েক বছরে এই পুরষ্কার পাওয়া ব্যক্তি ও সংগঠন আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশকে তুলে ধরা ও অন্যদের মাঝে অনুপ্রেরণা তৈরি করা গেছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

চলতি বছর ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সি ব্যক্তিদের সংগঠনগুলোকে যে ৬টি ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে; সেগুলো হলো- দক্ষতা ও কর্মসংস্থান, শিল্প ও সংস্কৃতি, নিজ সমাজে সুস্থতা ও এ বিষয়ক সচেতনতা, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, জলবায়ু ও পরিবেশ এবং উদ্ভাবন ও যোগাযোগ।

এই ক্যাটেগরির আওতাভুক্ত যে সংগঠনগুলো নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু অধিকার, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন, পিছিয়েপড়া মানুষের ক্ষমতায়ন, কর্মসংস্থান ও উদ্ভাবন, সৃজনশীলতা ও বিনোদন, জ্ঞান ও সক্ষমতা বিকাশ, অতিদরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়ন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক উদ্যোগ, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও জরুরি সেবা প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে- তাদের উদ্যোগগুলোতে যাচাই-বাছাই শেষে প্রদান করা হচ্ছ এই পুরস্কার।

সপ্তমবারের এই আয়োজনে দক্ষতা ও কর্মসংস্থান ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে ‘সম্ভাবনা’ ও ‘ঋতু হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং ফাউন্ডেশন’; শিল্প ও সংস্কৃতি ক্যাটাগরিতে পেয়েছে ‘অভিনন্দন ফাউন্ডেশন’ ও ‘টং-এর গান’; কমিউনিটর সুস্থতা ক্যাটাগরিতে ‘নবম ফাউন্ডেশন’ ও ‘অলট্রাস্টিক পিপল’স ইউথ অরগানাইজেশন’; সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ক্যাটাগরিতে ‘উইমেন’স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি’ ও ‘ভালো কাজের হোটেল’; জলবায়ু ও পরিবেশ ক্যাটাগরিতে ‘ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড স্নেইক রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশ’ ও ‘ইকো-নেটওয়ার্ক গ্লোবাল’; উদ্ভাবন ও যোগাযোগ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে ‘ক্লিয়ার কনসেপ্ট’ ও ‘টিম অ্যাটলাস’।

অনুষ্ঠানে ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’ ও ‘খেলাঘর’ সংগঠনকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের পক্ষে সম্মাননা নেন দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু এবং সহ-অধিনায়ক প্রতাপ শঙ্কর হাজরা।

অনুষ্ঠানে সজীব ওয়াজেদ জয় বিএনপি-জামায়াতকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী উল্লেখ করে বলেন, আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরে বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত বলে কোনো দল টিকে থাকবে না। যখন এই জঙ্গিবাদী মৌলবাদী শক্তির চিহ্ন বাংলাদেশ থেকে মুছে যাবে, তখন দেশে শান্তি আসবে। বাংলাদেশের তরুণরা সমস্যা সমাধানে চিন্তা করতে পারে। আর এজন্য তরুণদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, গত ১৫ বছরে দেশে যে উন্নতি হয়েছে তা আগে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, আমি বাংলাদেশের তরুণ ও আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের অনেক সমস্যা আছে। আপনারা শুধু সমস্যা নিয়ে চিন্তা করেন না। আপনারা সমস্যার সমাধান চিন্তা করছেন এবং সমাধান বের করছেন ও বাস্তবায়ন করছেন। আমি শুরু থেকে বাংলার তরুণদের বলছি, আমরা দেশ হিসেবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। বাংলাদেশের তরুণরাও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। নিজের উদ্যোগে নিজের কর্মসংস্থান আপনারা বের করে নিতে পারেন। দুর্নীতির সমস্যাও আপনারা সমাধান করতে পারেন। শুধু সরকার পারে তা নয়, আমরা সবাই এসব সমস্যা মোকাবিলা করতে পারি।

তিনি জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ও শীর্ষ বাছাই হওয়া সব সংগঠনকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ৭০০-এর বেশি সংগঠন আবেদন করেছে। সবাইকে আমরা পুরস্কৃত করতে পারিনি। কিন্তু সবার জয়ই বাংলার জয়। আপনাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। আমি অত্যন্ত গর্বিত যে, সংগঠনগুলো এতো বেড়েছে। আমরা শুরু করেছিলাম মাত্র কয়েকশ’ দিয়ে। এখন সাতশ’র বেশি আবেদন এসেছে। আপনারা যেভাবে কাজ করছেন সব জেলায়, যেভাবে ছড়িয়ে যাচ্ছেন, পরিশ্রম করছেন। যে স্বীকৃতি পাচ্ছেন, জাতিসংঘ, ইউনেস্কো সবখানে। তা দেখে খুব গর্ব হয়। বাংলাদেশের তরুণরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

তরুণদের উদ্দেশ্যে জয় বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্য যেভাবে কাজ করছেন। মানুষ ও পরিবেশের জন্য যে চিন্তা করছেন, পরিশ্রম করছেন, তা অসাধারণ। আমাদের স্বপ্ন ছিল, তরুণরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আপনারাই হচ্ছেন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। শুধু বর্তমান নয়, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়েও আমরা চিন্তা করি। আপনারা সেটা দেখিয়ে দিচ্ছেন। গত ১৫ বছর ধরে উন্নয়নের যে ধারা, বাংলাদেশ যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা যখন শুরু করেছিলাম, বাংলাদেশ তখন ছিল দরিদ্র দেশ। এখন হয়ে গেছি মধ্যম আয়ের দেশ।

তিনি বলেন, আমাদের যে পাথফাইন্ডার আছেন, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। স্বাধীনতার আগে থেকে আপনারা দেখিয়েছেন, বাংলাদেশের চেতনা, স্বাধীনতার চেতনা। এই তরুণরা আপনাদেরই সন্তান। আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। নির্বাচনের সময় নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে বাংলাদেশ জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন সমস্যা হচ্ছে, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস। জ্বালাও পোড়াও। নিরীহ মানুষের ওপর আক্রমণ। এই সমস্যাও কিন্তু দূর করা যায়। আমরা জানি গত তিন নির্বাচন ধরে তাদের এই নির্যাতন, প্রত্যেক নির্বাচনের মাস দুয়েক আগে তারা এই জ্বালাও পোড়াও শুরু করে। এটার মোকাবিলা কি? খুব সহজ। মোকাবিলা হচ্ছে, সামনের নির্বাচনে ভোট দেবেন। যারা জ্বালাও-পোড়াও করছে তাদের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। যারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদের ভোট দেবেন। নৌকায় ভোট দেবেন।

সজীব ওয়াজেদ বলেন, যারা দেশের জন্য কোনো দিন কিছু করেনি স্বৈরাচার জিয়াউর রহমানের সৃষ্টি করা দল। যে দেশে গণহত্যা করেছে। সেই জিয়াউর রহমান মানুষকে ফাঁসি দিয়েছে, তার সৃষ্ট দল। যারা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। যারা যুদ্ধ অপরাধী, সন্ত্রাসীদের ফিরিয়ে এনেছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ চালিয়েছে এবং এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দেশের জন্য কোনো দিন কিছু করেনি। দেশের জন্য আপনারা কাজ করছেন, আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত