ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবে জাপা

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবে জাপা

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সব নাটকের অবসান ঘটিয়ে গতকাল এ সিদ্ধান্তের কথা জানালো জাপা। ফলে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাপা কর্তৃত্ব নিয়ে ফের প্রকাশ্যে দেবর-ভাবির লড়াই। গতকাল নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দুইপক্ষের পাল্টাপাল্টি চিঠিতে এ বিষয়টি আবার সামনে এলো।

জাপার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর থেকেই মূলত দলের কর্তৃত্ব নিয়ে লড়াই শুরু হয় ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) ও স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদের মধ্যে। মাঝে এ লড়াই নিয়ে তেমন সাড়াশব্দ না হলেও সংসদ নির্বাচন নিয়ে ফের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এলো। জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এক চিঠিতে জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান পদে থাকা জিএম কাদেরের স্বাক্ষরে হবে সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন। সিইসিকে লেখা চিঠিতে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, তার দল চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক দল হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। এটা হবে শুধু নির্বাচনি জোট। নির্বাচনের পরে জাতীয় পার্টির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবেন।

এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক ‘লাঙ্গল’ কিংবা প্রার্থীর ইচ্ছানুসারে মহাজোটে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে পারবেন।

তবে পাল্টাপাল্টি চিঠি এবং জাপায় কার কর্তৃত্ব আমলে নেবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, এটা কমিশন দেখবে। কারণ দুটো চিঠি এসেছে। কমিশন যেটা আমলে নেয়।

সাইনিং অথরিটি কে হওয়ার কথা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নরমালি দলের চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক বা মহাসচিব সাইনিং অথরিটি নরমালি হয়।

জিএম কাদের সাইনিং অথরিটি, তাহলে বিবেচনা কী হবে, এ প্রশ্নের জবাবে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, এটা কমিশন বলতে হবে।

জাপা সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আগ্রহী প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক লাঙ্গল ছাড়াও চাইলে মহাজোটের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন। গতকাল নির্বাচন কমিশনে এক চিঠিতে এ তথ্য জানিয়েছেন জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ।

দলের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশিদ বলেন, জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান পৃষ্ঠপোষকের চিঠি আমি ইসিতে পৌঁছে দিয়েছি। কেউ চাইলে জোটের প্রতীকও ব্যবহার করতে পারবেন। দলের মনোনয়ন কে দেবেন না দেবেন, সেটা বিষয় নয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে লেখা চিঠিতে রওশন জানান, ‘জাতীয় পার্টি বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এবারও চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। এটা হবে শুধুমাত্র নির্বাচনি জোট। নির্বাচন শেষে জাতীয় পার্টির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবেন। এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক লাঙ্গল, কিংবা প্রার্থীর ইচ্ছানুসারে মহাজোটে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে পারবেন।

এদিকে জাপার প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন চেয়ারম্যান জিএম কাদের, ক্ষমতাপ্রাপ্ত এ ব্যক্তির নাম পদবি ও নমুনা সই নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

এ তথ্য জানিয়ে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ভোটকে সামনে রেখে এ সংক্রান্ত ফর্মালিটিজ জানিয়ে কমিশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের চিঠির কপি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে দেওয়া চিঠিতে জাপার মহাসচিব জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে আরপিও এর আর্টিকেল ১২ (৩ এ) (বি) এবং ১৬-এর (২)(৩) অনুযায়ী সংসদ সদস্য পদে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে দলের প্রার্থী মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ করবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

আওমী লীগ, বিএনপিসহ ৪৪টি নিবন্ধিত দলকেই প্রার্থী মনোনয়নকারীর নাম জানাতে বলেছে ইসি।

এর আগে ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখা থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি নিবন্ধিত ৪৪টি দলকে পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারী বা তাদের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বাক্ষরিত মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র থাকবে যে, ওই প্রার্থীকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। প্রত্যয়নপত্রটি মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীকে জমা দিতে হবে।

প্রার্থী মনোনয়নে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নাম, পদবি, সত্যায়িত নমুনা স্বাক্ষর তপশিল ঘোষণার সাত দিনের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে হবে। আর এর অনুলিপি দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, যদি কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল থেকে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদান করা হয়, সেক্ষেত্রে প্রার্থী মনোনয়নকারী প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন বা তার আগে রিটার্নিং অফিসারকে কোনো প্রার্থীর চূড়ান্ত মনোনয়ন সম্পর্কে অবহিত করবেন এবং ওই দলের অন্যান্য প্রার্থীর প্রার্থিতা স্থগিত হবে।

ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত